‘বদলা নয়, বদল চাই’ স্লোগান দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসেছেন। কিন্তু সংবাদপত্র পড়ার উপরে নিয়ন্ত্রণ জারি করাটা ‘বদলা হয়ে যাচ্ছে’ বলে সোমবার মন্তব্য করেছেন শিক্ষাবিদ এবং ‘পরিবর্তনপন্থী’ বিশিষ্ট জন সুনন্দ সান্যাল। কলেজ স্কোয়ারে এক সমাবেশে তিনি বলেন, “কে কী পড়বে, সেটা সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যে-আমজনতা মমতাকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছিলেন, এটা (সংবাদপত্র নিয়ে ফতোয়া) তাঁদের বিরুদ্ধে বদলা।”
গ্রন্থাগারে সংবাদপত্র রাখা নিয়ে সরকারি নির্দেশের বিরুদ্ধে এ দিন পথে নামে পরিবতর্নপন্থী ‘শিল্পী-সংস্কৃতি কর্মী ও বুদ্ধিজীবী মঞ্চ’। কলেজ স্কোয়ারে তাদের বিক্ষোভ-সমাবেশে বক্তৃতা দেন সুনন্দবাবুও। অপর্ণা সেন সমাবেশস্থলে গিয়ে লিখিত ভাবে ফতোয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। এ দিন কলকাতায় এসেছিলেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী কপিল সিব্বল। আইআইএম-কলকাতার সমাবর্তন অনুষ্ঠানের পরে তাঁকে সংবাদপত্রের উপরে ফতোয়া জারি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় তৈরি হওয়া ‘শিল্পী-সংস্কৃতি কর্মী ও বুদ্ধিজীবী মঞ্চ’ প্রথম থেকেই রাজ্যে পরিবর্তনের পক্ষে সওয়াল করছিল। কিন্তু সরকারি নির্দেশিকার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে সংগঠনের সভাপতি তরুণ সান্যাল এ দিন বলেন, “৩৪ বছরে বামফ্রন্ট সরকার ভাল-মন্দ দু’রকম কাজই করেছে। কিন্তু নয়া সরকার গত কয়েক মাসে একটাও ভাল কাজ করতে পারেনি। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যা চেয়েছিলেন, কিছুই হয়নি।” সুনন্দবাবুও বলেন, “সিপিএম যা করত, এই সরকার সেই কাজই আরও বেশি করছে। তা হলে আর কীসের বদল!” |
বিক্ষোভ-সমাবেশে বিশিষ্ট জনেরা। রয়েছেন সুনন্দ সান্যাল (বাঁ দিকে)। সোমবার কলেজ স্কোয়ারে। নিজস্ব চিত্র |
পরিবর্তনপন্থী বিশিষ্ট জনেদের বিক্ষোভের মধ্যেই গ্রন্থাগারে সংবাদপত্র রাখা নিয়ে সরকারি ফতোয়ার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থে দায়ের করা মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি চাইলেন বাদী পক্ষের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জয়নারায়ণ পটেলের ডিভিশন বেঞ্চে তিনি বলেন, সরকার এই নিয়ে যে-নির্দেশ দিয়েছে, তাতে রাজ্যের নাগরিক সমাজ খুবই চিন্তিত। সরকার যে-ভাবে গ্রন্থাগারের পাঠকদের অধিকারকে বঞ্চিত করে নিজেদের মত চাপিয়ে দিচ্ছে, তা রাজ্যের পক্ষে ভাল নয়। ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার জনস্বার্থের মামলার জন্য নির্ধারিত আছে। আগামী দু’টি শুক্রবার হাইকোর্টে ছুটি। তাই ২০ এপ্রিলের আগে মামলাটির শুনানি সম্ভব নয়।
সংবাদপত্র নিয়ে সরকারি নির্দেশিকার প্রতিবাদে কংগ্রেসের এক দল প্রতিনিধি স্মারকলিপি দেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা গ্রন্থাগারিকের দফতরে। পাঠকদের পছন্দের কাগজ গ্রন্থাগারে রাখা এবং গ্রন্থাগার আইন-বিরোধী নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে তালিকায় বাদ পড়া দু’টি সংবাদপত্র গ্রন্থাগারের সামনে রাখা হয়।
জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কণিষ্ক পণ্ডা বলেন, “সংবাদপত্র নিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশিরবাবু (অধিকারী) যে-সব মন্তব্য করেছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে তাঁর মুখে সেটা মানায় না। আসলে নিজেদের জেলা পরিষদ ও পুরসভার দুর্নীতি আড়াল করতেই সংবাদপত্রকে আক্রমণ করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।” বর্ধমান শহরে ডিওয়াইএফের রাজ্য সম্পাদক আভাস রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘বাম আমলে সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের কথা ভাবতেই পারতাম না। আমাদের প্রচুর সমালোচনা করেছে সংবাদমাধ্যম। কিন্তু আমরা কোনও দিন বলে দিইনি, মানুষ কোন কাগজ পড়বেন আর কোনটা পড়বেন না।”
এ দিনই মৌনী মিছিল করে সংবাদপত্র নিয়ে সরকারি ফতোয়ার প্রতিলিপি পোড়ায় বিজেপি। কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করে গিয়ে কিছু ক্ষণ পথ অবরোধও করে তারা। অবরোধ চলাকালীন ওই ফতোয়ার প্রতিলিপি পোড়ানো হয়। সরকারের ‘অগণতান্ত্রিক’ মনোভাবের নিন্দা করেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। |