ওয়াক আউট বিরোধীদের
পঞ্চায়েত বিল নিয়েও সংঘাত
ঞ্চায়েতে মহিলা এবং তফসিলি জাতি, উপজাতি-সহ বিভিন্ন ‘দুর্বলতর শ্রেণি’র জন্য আসন সংরক্ষণের বিল ঘিরে ফের সংঘাতে জড়াল শাসক ও বিরোধী পক্ষ। আগে নোটিস না-দিয়ে বাজেট অধিবেশনের শেষ দিনেই পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত (সংশোধনী) বিলের প্রতিলিপি বিধায়কদের মধ্যে বিলি করে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা পাশ করানোর উদ্যোগের বিরোধিতা করে ওয়াক আউট করল বিরোধীরা। তার পরে যথারীতি বিরোধীশূন্য বিধানসভায় পাশ হয়ে গেল সংশোধনী বিলটি।
দু’বছর আগে বাম জমানায় একই ধরনের একটি বিল এনে বলা হয়েছিল, মহিলা এবং তফসিলি জাতি-উপজাতির জন্য সংরক্ষণ ৫০%-এর ‘কম’ হবে না। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সোমবার নতুন সংশোধনী বিল এনে বলতে চেয়েছে, ওই সংরক্ষণ ৫০%-এর ‘বেশি’ হবে না! কারণ হিসাবে তারা দেখিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশ, যেখানে বলা হয়েছে, সংরক্ষণ কোনও অবস্থাতেই ৫০% ছাড়ানো চলবে না। বিরোধী বামফ্রন্টের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশ পরিস্থিতি-নিরপেক্ষ ভাবে প্রযোজ্য নয়। তা ছাড়া, বিধানসভার রীতি-নীতি না-মেনে কেন বিল নিয়ে এত ‘তাড়াহুড়ো’ হল, সেই প্রশ্ন তুলেই ওয়াক আউট করেন বাম বিধায়কেরা। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় তাঁর জবাবি বক্তৃতায় পাল্টা বলেন, পঞ্চায়েতকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র করছে বিরোধীরাই!
পঞ্চায়েতের ওই বিলের অব্যবহিত আগেই আইনজীবীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত একটি বিল ছিল। সেই বিতর্কে অংশগ্রহণ করেই প্রাক্তন পঞ্চায়েতমন্ত্রী তথা সিপিএম বিধায়ক আনিসুর রহমান পঞ্চায়েতে সংরক্ষণের প্রসঙ্গ তোলেন। তাঁর কথায়, “বিল আনতে ১৪ দিনের নোটিস লাগে। এখন কমাতে কমাতে তিন ঘণ্টাতেও বিল আনা হচ্ছে! এই রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিলে এত তাড়াহুড়ো কেন? রাজ্যপালের সই হয়নি, অর্থ দফতরের অনুমোদন নেই! নোংরা রাজনীতি!” স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বিলটি পেশ করার ঘোষণা করেন, তখনই আপত্তি তোলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। স্পিকার আপত্তি খারিজ করে দেওয়ায় বিরোধী বিধায়কেরা কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান।
পরে বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সূর্যবাবু বলেন, “অধিবেশনের শেষ দিনে দেখলাম, সরকার নজিরবিহীন ভাবে সংসদীয় সমস্ত রীতিনীতি আবার লঙ্ঘন করল! গত শুক্রবার কার্য উপদেষ্টা কমিটিতে ঠিক হয়েছিল, ৬টি বিল আলোচনা হবে শেষ দিনে। হঠাৎ শেষ ঘণ্টায় কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক ডেকে পঞ্চায়েত আইন সংশোধনী বিল আনা হবে বলে জানানো হল। অনেক বিধায়কই বেলা ১২টার পরে বিল পেয়েছেন। একটা ১২ পাতার বিল সভায় দেওয়া হল এবং সেটা পড়ার জন্য কোনও সময় দেওয়া হল না! বিরোধীশূন্য সভায় পাশ করানো হল।”
বিরোধী দলনেতার যুক্তি, ধারা সংশোধন করা হয় মূল আইনকে রেখে। কিন্তু এ দিন রাজ্য সরকার যে সংশোধনী বিল আনল, তা কীসের উপরে করা হল, সেই ধারাগুলিই বিধানসভায় জানানো হয়নি! সরকারের যুক্তি, ৫০%-এর বেশি সংরক্ষণ করা যায় না বলে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেওয়ায় অন্ধ্রপ্রদেশে বিষয়টি আটকে গিয়েছে। কিন্তু অন্ধ্রে যা প্রযোজ্য, এখানে তা একই ভাবে না-ও প্রযোজ্য হতে পারে। উদাহরণ দিয়ে সূর্যবাবু বলেন, “পুরুলিয়ার বান্দোয়ান ব্লকে ৫০%-এর বেশি আদিবাসী রয়েছেন। সংবিধান অনুসারে, জনসংখ্যার অনুপাতে সংরক্ষণ হবে। ৫১% হলে ৫১%-ই আসন সংরক্ষণ হবে। রাজ্য সরকার কি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলেছে? প্রশ্ন আছে বলেই আমরা সিলেক্ট কমিটিতে বিলটি পাঠাতে বলেছিলাম।”
বিল নিয়ে আলোচনার শেষে বিরোধীশূন্য বিধানসভায় পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রতবাবু বলেন, “বিরোধীরা বিলটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠাতে বা পরের অধিবেশনে আনতে বলছিলেন। তবে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনুরোধ করেছিলেন, তাৎপর্য বুঝে যাতে বিলটিকে দ্রুত আনতে দেওয়া হয়। আমরা ভেবেছিলাম, হয়তো এখানে এসে বিরোধীরা অন্তত আলোচনা করবেন। বেশি সময়ও ওঁদের দিয়েছিলাম। কিন্তু এখান থেকে বাইরে বেরিয়ে গিয়ে আমগাছের তলায় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে ওঁরা বেশি স্বস্তি বোধ করেন!” সুব্রতবাবুর বক্তব্য, আনিসুর পঞ্চায়েতমন্ত্রী থাকাকালীন ২০১০ সালে এই সংক্রান্ত বিল আনার সময় বলা হয়েছিল, বিষয়টি কার্যকর হবে পরবর্তী পঞ্চায়েত নির্বাচনে। মাঝে ওই বিল কার্যকর করতে গেলেও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বাতিল হয়ে যেত। এই গোটা বিষয়টিকে ‘ন্যক্কারজনক ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করেন সুব্রতবাবু। সূর্যবাবুর পাল্টা কটাক্ষ, “আমরা বলেছিলাম, সংরক্ষণ যেন ৫০%-র কম না হয়। ওঁরা বলছেন, ৫০%-র বেশি যেন না হয়। এটা লিখলে এক পাতার মধ্যেই বিল হত! বদলে ওঁরা উদ্ভট যুক্তি এনেছেন!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.