‘এশিয়া কাপ হারানোর যন্ত্রণা ভুলতে
চাই নাইটদের আইপিএল জিতিয়ে’

প্রশ্ন: আপনাকে বলা হচ্ছে ডেভিডদের গোলিয়াথ। বাংলাদেশ টেস্ট কালেভদ্রে খেলে। ক্রিকেটবিশ্বে বাকিদের কাছে তেমন পাত্তাও পায় না। কিন্তু আইসিসিকে কি না সেখান থেকেই বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার বেছে নিতে হচ্ছে! ব্যাপারটা ভাবলে কী রকম অনূভূতি হয়?

সাকিব: আইসিসি যখনই কোনও স্বীকৃতি দেয় ভাল তো লাগে নিশ্চয়ই। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে আমিই প্রথম এই মাইলফলক ছুঁলাম। আলাদা ভাললাগা একটা আছে। কিন্তু পাশাপাশি এটাও বলব যে, আরও বেশি করে ম্যাচ পেলে ভাল হয়। আসলে আমরা যত বেশি ম্যাচ খেলব, তত বেশি শিখব। যত বেশি টেস্ট খেলব, তত আমাদের দেশের ক্রিকেটের উন্নতি হবে।

প্রশ্ন: এশিয়া কাপ নতুন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে বলা হচ্ছে। আপনারও কি মনে হয় যে, এশিয়া কাপের হাত ধরেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে রেনেসাঁ ঢুকে পড়ল?
সাকিব: আমি তো বলব আজ নয়, বদলটা শুরু হয়েছে বেশ কিছু দিন আগে। আমরা দেশের মাঠে নিউজিল্যান্ড উড়িয়ে দিয়েছি। কিন্তু ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মহড়া না নিলে মর্যাদাটা সে ভাবে আসে না। টিমটা পাল্টাচ্ছিল অনেক দিন ধরে। এখন আরও বেশি পাকাপোক্ত হয়েছে। বিদেশের ম্যাচের কথা বলব না। উপমহাদেশের বাইরে আমাদের বিপন্নতা এখনও কাটেনি। কিন্তু দেশের মাঠে কী ভাবে যুঝতে হয়, আমরা শিখে গিয়েছি। দু’বছর আগে পর্যন্ত এই ব্যাপারটা ছিল না। আরও একটা কারণ, টিমের ক্রিকেটাররা অনেক দিন ধরে একসঙ্গে খেলছে। কেউ কেউ আশি-নব্বইটা ম্যাচ খেলে ফেলেছে। দেশে আমরা যে যথেষ্ট শক্তিশালী টিম, আশা করি এশিয়া কাপের পর বাকি বিশ্ব বুঝেছে।

প্রশ্ন: কিন্তু এত করেও তো এশিয়া কাপটা জেতা হল না। ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হারতে হল দু’রানে।
সাকিব: তো? আমরা টুর্নামেন্টে ভারত, শ্রীলঙ্কার মতো টিমকে হারিয়েছি। পাকিস্তানকেও প্রায় হারিয়ে দিয়েছিলাম। দেখুন, এই টুর্নামেন্টটা আমরা জেতার সব দিক থেকে যোগ্য ছিলাম। একটাই কথা বলব। ইনসাল্লাহ্, বাংলাদেশের প্রত্যাবর্তনটা যেন এখান থেকেই হয়!
সোমবার নাইটদের প্র্যাক্টিসে সাকিব। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

প্রশ্ন: সেই রাতটার কথা ভেবে আফশোস হয় না? মনে হয় না, আপনি আরও কিছুক্ষণ থাকলে বাংলাদেশ ইতিহাসে ঢুকে পড়ত?

সাকিব: আফশোস তো হয়ই। সে দিন আমি ভীষণ ভাবে চাইছিলাম আরও পাঁচ-ছ’টা ওভার টিকে যেতে। মনে হচ্ছিল, আরও কিছু রান তুলে দিতে পারলে টিমের কাজটা সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু হল না। যাই হোক, সামনে তাকানো ভাল।

প্রশ্ন: আপাতত সামনে তাকানো মানে, আইপিএল। কেকেআর। যাদের এ বারের স্লোগান হচ্ছে, ‘নিউ ডন, নিউ নাইটস’। অর্থাৎ, নতুন নাইট, নতুন ভোরের স্বপ্ন। কিন্তু গত বার এই টিমটা সেমিফাইনালে যেতে পারেনি। তাদের পক্ষে কতটা নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখা সম্ভব?
সাকিব: সম্ভব। ইউসুফ ভাই দুর্দান্ত ফর্মে। গম্ভীর, কালিস কে ভাল খেলছে না? গত বার গুরুত্বপূর্ণ কিছু ম্যাচে ভুলভ্রান্তি আমাদের ডুবিয়েছিল। নইলে আমরা সেমিফাইনাল খেলতাম। এ বার সেই ভুলগুলো করলে চলবে না। শেষ চারে চলে গেলে ফাইনালেও যাব। আর ফাইনাল মানে তো যা কিছু হতে পারে।

প্রশ্ন: সাকিব-আল-হাসান সম্পর্কে বলা হয়, তাঁর দু’টো সত্তা। এক দিকে, দেশ-বিদেশের তরুণী-ব্রিগেড তাঁকে মাঠে দেখলেই গর্জন শুরু করে। এতটাই তাঁর ভক্তের সংখ্যা। অন্য দিকে, এই মানুষটার সঙ্গেই আবার দেশজ মিডিয়ার ঝামেলার অভিযোগ আসে। টিমের জুনিয়ররা নাকি ভয় পায় তাঁর সঙ্গে কথা বলতে...।
সাকিব: (একটু তেতে) জানি না এটা কী ভেবে বলা হচ্ছে। আমার কোনও মিডিয়ার সঙ্গেই ঝামেলা নেই। আর জুনিয়র ক্রিকেটারদের কথা বলছেন? তা হলে জেনে রাখুন যে ওরা আমার সঙ্গে বেশি স্বচ্ছন্দ।

প্রশ্ন: বিশ্বকাপে আপনি অধিনায়ক ছিলেন। কিন্তু তার পর অধিনায়কত্ব গেল। এবং শেষে এশিয়া কাপে আপনি ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট। অধিনায়কত্ব যাওয়ার জ্বালাটা কি কাজ করেছে কোথাও?
সাকিব: কেন? অধিনায়ক যখন ছিলাম তখন কি পারফর্ম করতাম না? যত সময় যায়, প্রত্যেক ক্রিকেটারের ধাপে ধাপে উন্নতি ঘটে। আমারও সেটাই হচ্ছে। আর বর্তমান অধিনায়ক মুশফিকুরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল। ক্রিকেট ছেড়ে দিন। আমরা পড়াশোনাও করেছি একসঙ্গে। এর মধ্যে অন্য কিছু খুঁজলে ভুল হবে।

প্রশ্ন: বিশ্বকাপ প্রসঙ্গে বলা যাক, ভারতের বিশ্বজয়ের এক বছর হল। যে জয়যাত্রার শুরুটা হয়েছিল আপনাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তার পর থেকে ধোনিদের টিমের হাল অত্যন্ত খারাপ। এটা কেন হচ্ছে বলে মনে হয়?
সাকিব: কার হয়নি এ রকম? অস্ট্রেলিয়ার হয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়েছে। সব টিমের, সব ক্রিকেটারেরই এমন খারাপ সময় যায়। এত ‘গেল গেল’ আওয়াজ তোলার কিছু হয়নি।

প্রশ্ন: আইপিএলে ফেরা যাক। এশিয়া কাপটা তুলতে পারেননি। আপনার কি মনে হয়, সেই যন্ত্রণাটা মুছবে নাইটদের আইপিএলটা জেতাতে পারলে?
সাকিব: অবশ্যই। চ্যাম্পিয়ন টিমের অংশীদার কে না হতে চায়? আইপিএল যদি জিততে পারি, এশিয়া কাপ হারানোর যন্ত্রণাটা হয়তো ভুলতে পারব। আর আমাদের টিমের যা শক্তি, তাতে সেটা সম্ভব।

প্রশ্ন: আগামী ৫ মে, ইডেনে কেকেআর বনাম পুণে ওয়ারিয়র্স। এক দিকে কেকেআরে আপনি। অন্য দিকে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং তামিম ইকবাল। বাংলাদেশ কোন দিকে থাকবে সে দিন?
সাকিব: মনে তো হয়, কেকেআরের দিকে। যদিও বাংলাদেশ চাইবে আমি, তামিম দু’জনেই সফল হই। কলকাতায় খেলা মানে, কলকাতার সমর্থন হয়তো দাদার দিকে যাবে কিছুটা। যাক গে, সে সবের অনেক দেরি আছে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.