গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
‘প্রেমিকা’র স্বামীকে খুন করার মতলবে চার গুন্ডাকে ভাড়া করেছিল ‘প্রেমিক’। ষড়যন্ত্রে ‘সামিল’ ছিল ‘প্রেমিকা’ও। খুন করার পরে ‘শর্তের বাইরে’ গিয়ে ‘প্রেমিকের’ সামনেই গুন্ডারা গণধর্ষণ করে ‘প্রেমিকা’কে। হুগলির পোলবার পাটনা দক্ষিণপাড়া গ্রামে সম্পন্ন চাষি কৃষ্ণচন্দ্র মাল হত্যার তদন্তে এমনই তথ্য জানা গিয়েছে বলে পুলিশের দাবি। কৃষ্ণচন্দ্রকে খুনের চক্রান্তের অভিযোগে সোমবার তাঁর স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দিনই ব্যান্ডেল স্টেশন রোড এলাকা থেকে পুলিশ ওই মহিলার ‘প্রেমিক’ জিকো পাল ওরফে পটলাকেও ধরেছে। হুগলির পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “প্রাথমিক তদন্তের পরে আমরা নিশ্চিত, গোটা বিষয়টির মূল ষড়যন্ত্রী হলেন নিহতের স্ত্রী তথা ওই ধর্ষিতা মহিলাই।” |
তদন্তকারীদের দাবি, দক্ষিণপাড়ার বছর বিয়াল্লিশের কৃষ্ণচন্দ্র মালের স্ত্রী ওই মহিলার সঙ্গে দু’বছর ধরে বলাগড়ের টোনা গ্রামের বাসিন্দা জিকোর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। জিকো মহিলার থেকে বছর পাঁচেকের ছোট। ওই সম্পর্কে ‘পথের কাঁটা’ ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র। তাই তাঁকে সরিয়ে দিতে ‘ছক কষে’ ওই দু’জন বলে পুলিশের দাবি। ২৭ মার্চ রাতে জিকোর ‘ভাড়া করা’ চার দুষ্কৃতী ওই দম্পতি এবং তাঁদের স্কুল-পড়ুয়া ছেলেকে তিনটি ঘরে নিয়ে যায়। মহিলাকে খাটের সঙ্গে বাঁধা হয়। মুখ বেঁধে ছেলেকে ঠাকুরঘরে রাখা হয়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে নলি কেটে খুন করা হয় ওই চাষিকে। ঘটনার সময় জিকো নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিল।
এক পুলিশকর্তা বলেন, “পুলিশকে ধন্দে ফেলতে ঘটনাটিকে ডাকাতির মোড়ক দেওয়ার ছক কষেছিল জিকো ও ওই মহিলা। বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে কৃষ্ণবাবুকে খুন করে কিছু সোনাদানা-টাকা হাতিয়ে চলে যাওয়ার কথা ছিল দুষ্কৃতীদের।” তাঁর দাবি, “শর্তের বাইরে গিয়ে জিকোর গলায় ভোজালি ধরে তার সামনে ধর্ষণ করা হয় মহিলাকে।” পুলিশের অনুমান, যেহেতু ওই মহিলাও ‘চক্রান্তে জড়িত’ তাই ধর্ষণের বিষয়টি তিনি পুলিশকে জানাননি। পরে জেরায় ভেঙে পড়ে তিনি সব জানান। ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণ প্রমাণিত হয়। তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় জিকো জানিয়েছে, কৃষ্ণবাবুর কাছে মুনিশ খাটতেন গ্রামেরই এক যুবক। ওই যুবকের স্ত্রীর মোবাইলে কৃষ্ণবাবুর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলত সে। ওই মুনিশের স্ত্রী সোমবার চুঁচুড়া আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দেন। জিকোকে ধরতে পুলিশ ফাঁদ পাতে। নিহতের স্ত্রীকে দিয়ে জিকোকে ফোন করায়। ‘প্রেমিকা’র ফোন পেয়েই জিকো ব্যান্ডেলে আসে দুপুরে। তখনই পুলিশ তাকে ধরে। তদন্তকারীদের ধারণা, জিকোর সঙ্গে এই ‘প্রেমপর্ব’ মহিলার বাপের বাড়ির লোকেদের অজানা নয়। |