নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
কর্মসূত্রে অন্যত্র থাকেন বাড়ির মালিক। তাই ভাড়াটের হাতে বাড়ি দেখভালের দায়িত্ব তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে ছিলেন তিনি। সেই ভাড়াটের অনুপস্থিতিতে ফাঁকা দোতলা বাড়ির ছ’টি দরজা ও আলমারি ভেঙে লক্ষাধিক টাকার সোনার গয়না ও নগদ প্রায় এক লক্ষ টাকা চুরি করে চম্পট দিল চোরেরা। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বালির রাসবাড়ি এলাকায়। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও চোরেদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
এই ঘটনার দিন দশেক আগে একই ভাবে বালির বাদামতলার বাসিন্দা অরুণ ভট্টাচার্যের একতলা বাড়ির দরজা ও আলমারির তালা ভেঙে বেশ কিছু পিতলের বাসনপত্র, গুরুত্বপূর্ণ কাগজ, দামি ক্যামেরা চুরি করে পালায় চোরেরা। সেই ঘটনারও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, রাসবাড়ি এলাকার ৩ নম্বর মহেন্দ্র বাগচী রোডে শুভঙ্কর মৈত্রের দোতলা বাড়ি। দীর্ঘ আট বছর ধরে শুভঙ্করবাবু কর্মসূত্রে সপরিবার কৃষ্ণনগরে থাকেন। প্রতি মাসে এক বার করে বালির বাড়িতে আসেন। ওই বাড়িরই একতলায় ছ’বছর ধরে পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকেন সোরাব শেখ। রাসবাড়ি এলাকাতেই তাঁর একটি জ্যাকেট তৈরির কারখানা রয়েছে। পাশাপাশি, ওই এলাকাতেই একটি ফ্ল্যাটে থাকেন সোরাবের ভাই ওসমান শেখ। পুলিশ জানায়, সোরাবের ভাড়া বাড়িতেই নিজের মোটরসাইকেলটি রাখতেন ওসমান। প্রতিদিনের মতো সোমবার সকালে তিনি বাইকটি নিতে এসে দেখেন, বাড়িতে ঢোকার দরজার তালা ভাঙা। বাড়ির ভিতরে ঢুকে একতলা ও দোতলায় সমস্ত ঘরের দরজার তালা ও আলমারি ভাঙা দেখে তিনি আশেপাশের লোকেদের ডাকেন। |
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, গত শুক্রবার বর্ধমানে দেশের বাড়িতে গিয়েছেন সোরাব। সেই দিন থেকে রাতে ওই বাড়িতে সোরাবের এক আত্মীয় লাল্টু শেখ ও এক কর্মচারী আরমান শুতে আসতেন। সকালে যাওয়ার সময়ে তাঁরা চাবি দিয়ে যেতেন ওসমানের কাছে। তবে রবিবার শুতে আসবেন বলে ওসমানের কাছ থেকে চাবি নিলেও রাতে তাঁরা কেউই আসেননি বলে দাবি করেছেন লাল্টু ও আরমান। পুলিশকে ওই দু’জন জানিয়েছেন, নিজেদের কিছু কাজ থাকায় তাঁরা রবিবার রাতে কারখানার পাশের একটি ভাড়া বাড়িতে ছিলেন। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, এই চুরি কোনও পাকা হাতের কাজ নয়। প্রায় তিন-চার ঘণ্টা ধরে বেশ কয়েক জন মিলে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। বাড়ির কোথায় কী আছে, সে সম্পর্কেও চোরেদের পরিষ্কার ধারণা ছিল বলে পুলিশের অনুমান।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, একতলা ও দোতলার প্রতিটি ঘরের তালা ভাঙা। ভিতরে সব আলমারির পাল্লার তালা ভেঙে জিনিসপত্র বার করেছে দুষ্কৃতীরা। খাট, বিছানা, বাক্স-সহ ঘরের সব জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড। শুভঙ্করবাবু পুলিশকে অভিযোগ করেছেন, আলমারি ভেঙে তাঁদের ১০ ভরি সোনার গয়না, নগদ ১৫ হাজার টাকা, বেশ কিছু পিতলের বাসন ও দামি শাড়ি চুরি গিয়েছে। সোরাবও পুলিশকে জানান, তাঁর নগদ বেশ কয়েক হাজার টাকা-সহ তিন-চার ভরি সোনার গয়না ও একটি টিভি চুরি গিয়েছে। শুভঙ্করবাবু বলেন, “সোরাবকে বলেছিলাম, কখনও বাড়ি ফাঁকা না রাখতে। কী ভাবে এমন ঘটনা ঘটল বুঝতে পারছি না।” হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, “সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।”
এ দিকে, বালিতে একের পর এক ফাঁকা বাড়িতে চুরির ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্কিত বাসিন্দারা। দিন দশেক আগে কী ঘটেছিল বাদামতলায়? ওই এলাকার বাসিন্দা অরুণ ভট্টাচার্য স্ত্রীকে নিয়ে দুবাইতে ছেলের কাছে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ফেরার কথা ছিল মে মাসে। কিন্তু বাড়িতে চুরি হয়েছে শুনে দিন দশেক আগেই তিনি ফিরে আসেন। ফিরে এসে দেখেন, তাঁদের অনুপস্থিতিতে ফাঁকা বাড়ির তালা ভেঙে আলমারি তছনছ করেছে দুষ্কৃতীরা। উধাও বেশ কিছু জিনিসপত্র। |