|
|
|
|
কারখানার দরজা খুলতে রাজ্য সরকারের সহায়তা চাইল ডানলপ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও সাহাগঞ্জ |
ডানলপ কারখানার দরজা খোলার জন্য সহযোগিতা চেয়ে রাজ্য সরকারকে চিঠি দিলেন কর্তৃপক্ষ। এ জন্য ওই সংস্থাকে ফের ‘রিলিফ আন্ডারটেকিং’-এর সুবিধা দিতে আর্জি জানিয়ে সোমবার সংস্থার তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়ের কাছে চিঠি দেওয়া হয়। শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুকে ফোনও করেন সংস্থার কর্ণধার পবন রুইয়া।
প্রসঙ্গত, বকেয়া ঋণ না-মেটানোর দায়ে ডানলপকে লিকুইডেশনে পাঠানোর রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এক পাওনাদারের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কারখানায় অস্থায়ী লিকুইডেটর নিয়োগের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। তা নিয়ে আজ মঙ্গলবার ফের শুনানি হবে।
রুইয়া বলেন, “আপাতত কারখানার সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক আংশিক ভাবে তুলে নিয়ে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু করতে চাইছি। রাজ্যকে সমস্ত পরিকল্পনার খসড়া পাঠাচ্ছি। আলোচনার দরজাও খোলা থাকছে।”
ইতিমধ্যেই অবশ্য কর্তৃপক্ষের তরফে শ্রমিক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠক করা হয়। ওই বৈঠকে সিটু এবং আইএনটিইউসি হাজির ছিল, তৃণমূলের নেতারা ছিলেন না। এ দিন তাদের তরফে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী এবং শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন শ্রমিক নেতারা। কর্তৃপক্ষ অবশ্য সব শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে সহমতের ভিত্তিতে পদক্ষেপ করতে চাইছেন। যদিও পূর্ণেন্দুবাবু এ দিন বলেন, “কারখানা খুলতে ডানলপ কর্তৃপক্ষ ঠিক কী করতে চাইছেন তা খুব স্পষ্ট নয়। রাজ্য সরকার সব সময়েই চায় কারখানার দরজা ফের খুলুক।” |
|
জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির বৈঠক।-নিজস্ব চিত্র |
গত অক্টোবরে কারখানা বন্ধের পরে সাহাগঞ্জ ইউনিটে সিটু, আইএনটিইউসি এবং তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন নিয়ে একটি জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি গড়া হয়। সোমবার সাহাগঞ্জে ফের কমিটি বৈঠকে বসে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের ‘আংশিক সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ তুলে নেওয়ার শর্তে সব শ্রমিক সংগঠন যে সহমত নয়, তার ইঙ্গিতও মিলেছে। আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি ডানলপ ইউনিটের নেতা বিদ্যুৎ রাউত বলেন, “কারখানা খুলতে চাইলে আংশিক নয়, সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক পুরোপুরি তুলতে হবে। বকেয়া মিটিয়ে দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে আলোচনার পথ খোলা রয়েছে।” অবশ্য সিটুর ডানলপ ইউনিটের নেতা বিতান চৌধুরী বলেন, “কর্তৃপক্ষ কারখানা খোলার যাই শর্ত দিন, তাতে রাজ্যকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিতে হবে। শুধু রক্ষণাবেক্ষণের কর্মীরা নন, সবাইকে নিয়ে শ্রমিকদের সমস্ত পাওনা মিটিয়েই কারখানা খুলতে হবে।” অবশ্য আইএনটিইউসি নেতা তানাজি দাসগুপ্ত বলেন, “কারখানা এতদিন বন্ধ। রক্ষণাবেক্ষণের কাজের জন্য আপাতত কর্তৃপক্ষকে কিছুটা সময় দেওয়া উচিত।”
শ্রমমন্ত্রী এ দিন মহাকরণে বলেন, রুইয়া তাঁকে ফোনে বলেন, কারখানা খোলার জন্য শ্রমিকদের বকেয়া পাওনাগণ্ডা নিয়ে কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ইউনিয়নগুলির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। তাঁরা কারখানা খুলতে চান। সে-জন্য ‘রিলিফ আন্ডারটেকিং’-এর মর্যাদা পেলে তাঁদের সুবিধা হয়। ২০০৯ সালে বামফ্রন্ট সরকার ডানলপকে ‘রিলিফ আন্ডারটেকিং’-এর মর্যাদা দিয়েছিল। যার ফলে আপাতত ঋণ না মেটালেও মামলা করতে পারেনি পাওনাদারেরা। অগস্টে সেই সুবিধার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ২০১১-র ৮ অক্টোবর ডানলপের সাহাগঞ্জ কারখানায় শেষ বারের মতো সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক-এর নোটিস জারি হয়েছিল। শ্রমিকদের বেতন তারপর থেকেই বাকি।
মন্ত্রী রুইয়াকে বলেছেন, “আগে শ্রম দফতরের উপস্থিতিতে ত্রিপক্ষ বৈঠকে কারখানা খোলার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিন কর্তৃপক্ষ। বকেয়া মেটানোর ব্যাপারে জানান। সর্বোপরি, আজ হাইকোর্টে ফের মামলার শুনানিতে কী হয়, দেখা যাক।” পূর্ণেন্দুবাবু জানান, ডানলপের ডিজিএম (কর্পোরেট কমিউনিকেশন্স) মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যে চিঠি পাঠিয়েছেন, তার কপি পাঠানো হয় তাঁকে এবং শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও। চিঠিতে কর্তৃপক্ষ বলেছেন, রবিবার ইউনিয়নগুলির সঙ্গে তাঁদের ‘সদর্থক’ আলোচনা হয়েছে। বকেয়া মেটানো নিয়ে ‘ঐকমত্য’ হয়েছে বলেও দাবি কর্তৃপক্ষের। তবে শ্রমমন্ত্রীও জানান, আলোচনায় তৃণমূলের সংগঠন যোগ দেয়নি। তাঁর মতে বকেয়া নিয়ে কর্তৃপক্ষ যে ‘ঐকমত্যের’ কথা বলেছেন, তাও ঠিক নয়। কর্তৃপক্ষ কী প্রস্তাব দেন, তা দেখে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনও বৈঠকে যোগ দেবে। মন্ত্রী বলেন,“ডানলপ খুলুক, রাজ্য সরকার সেটাই চায়।” |
|
|
|
|
|