|
|
|
|
প্রবন্ধ... |
‘ঘোষাল তুমি কম কথা বলার আর্ট শেখো’ |
একটি গ্রন্থে লিখেছিলেন প্রমথ চৌধুরী। সংযমের শিল্পকলাটি আমাদের
সমাজে প্রতিষ্ঠা পেলে কী ভালই না হত! লিখছেন অশোক মিত্র |
খেলার ছলে ষষ্ঠীচরণ হাতি লোফেন যখন তখন: একটু বাড়িয়ে বলা হচ্ছে না কি? অথচ আমরা মেনে নিই, কল্পনা-কৌতুক মেশানো যে কল্প-প্রান্তর আমাদের জন্য বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে তার অনুষঙ্গে সমস্ত অবিশ্বাস মিলিয়ে যায়, রুদ্ধশ্বাস বিস্ময়ের সঙ্গে আমরা বীরপুঙ্গবটির দিনচর্চার বিবরণে পরম পরিতৃপ্তি লাভ করি।
তবে সুকুমার রায়ের জাদু তো সবাই দেখাতে পারেন না! দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে পরেই এক নবীন বাঙালি উদ্যোগপতি বঙ্কিমচন্দ্রের একটি উপন্যাস অবলম্বন করে একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছিলেন প্রচুর টাকা ঢেলে। নায়িকার ভূমিকায় বাংলার অবিসংবাদিত সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীকে রাজি করিয়েছিলেন। নায়কের ভূমিকায় কাকুতিমিনতি করে হিন্দি ছবির মহাতারকা বাঙালি অভিনেতাকে মুম্বই থেকে আনিয়েছিলেন। ছবিটি কিন্তু আদৌ দাঁড়াল না। উপন্যাসের ধারাবিন্যাসের সঙ্গে চলচ্চিত্রায়িত কাহিনির আদৌ সামঞ্জস্য নেই, দ্বৈত জ্যোতিষ্কদ্যুতিও সার্বিক মালিন্যকে ঢাকতে পারল না। ছবিটি অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়ল। সেই চলচ্চিত্রের দু’টি কিম্ভূত ব্যাপার এখনও ভুলে যাইনি। এক চৈতক মার্কা ঘোড়া নায়ককে সারা রাত ধরে দিক্বিদিক জ্ঞানশূন্য বেগে নানা স্থানে নিয়ে চলল, নায়ক ওই অতি সীমিত নিশিপ্রহরের মধ্যেই হাজার অসাধ্য সাধন করলেন, যা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয়, নায়ককে ছেড়ে ঘোড়াটিকেই বরং কিঞ্চিৎ বাড়তি তারিফ দেওয়ার সাধ জাগল। অন্য অবিস্মরণীয় দৃশ্যটি এ রকম: একটি শীর্ণ নদী, যাকে এঁদো খাল বললেই যথোপযুক্ত হয়, বয়ে যাচ্ছে, তার উপর সরু জীর্ণ কাঠের একটি নড়বড়ে সাঁকো, সেই সাঁকোর উপর দাঁড়িয়ে নায়কনায়িকা, অর্থাৎ স্বনামখ্যাত তারকাযুগল, যাঁরা দুজনেই ইতিমধ্যে যথেষ্ট পৃথুলবপু, একসঙ্গে বিহ্বল কণ্ঠে গাইছেন, ‘অনাদি কালের স্রোতে ভাসিয়া/ মোরা দু’টি ফুল’, আবেগে তাঁদের গলা যত চড়ছে সাঁকোটি আরও নড়বড়ে, এই বুঝি ঘনীভূত অনুরাগের ভারে ভেঙে পড়ল।
অনাদি কালের স্রোতে চলচ্চিত্রটি হারিয়ে গেছে, হারিয়ে যাওয়ার কারণ অতিকথন, যা দর্শকদের দূরে ঠেলে দিয়েছে। অস্বীকার করার তো উপায় নেই, বাগাড়ম্বরের ঝোঁক আমাদের সমাজজীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রোথিত, গোটা ভারতবর্ষের ঐতিহ্যই হয়তো এটা। পছন্দের কাউকে বাহবা দেব, তার গুণবর্ণনায় আমরা বিশেষণের কাঁধে আরও আরও বিশেষণ চাপিয়ে দিই, পরিণামে নায়ক মহানায়ক হয়ে যান, কোনও পর্যায়ে মহানায়ক ঈশ্বর রূপে বিরাজ করতে থাকেন। তিনি তখন সাদামাটা মাপকাঠির অনেক ঊর্ধ্বে। অন্য পক্ষে যাকে অপছন্দ করি, সে শুধু বদ নয়, অতি বদ, অতি অতি বদ, নরাধম, আরও অনেক কিছু। মনে হয় একই কারণে রকের আড্ডায় টেনিদাদের মতো মানুষদের এত কদর। দিনযাপনে তেমন বৈচিত্র্য নেই, নানা উঞ্ছবৃত্তিতে সকাল থেকে অপরাহ্ণ পর্যন্ত কেটেছে, শরীর জুড়ে গ্লানি, সন্ধ্যার পর অপরিসর গলির ফাঁকফোকর দিয়ে যে হাওয়াটুকু ঢুকছে, তাতে সামান্য স্বস্তি, সেই সঙ্গে যদি পাশে বসে কেউ যা অসম্ভব অলীক অপ্রাপণীয় এমন কিছু স্বভাব-সচ্ছলতার সঙ্গে বিতরণ করতে পারেন, তা হলে তো আহ্লাদের শেষ নেই। তবে সব কিছু নির্ভর করছে যিনি বেচাল কাহিনি বিলোচ্ছেন, কোথায় থামতে হয় তা তিনি জানেন কি না, তার উপর। টেনিদারা টিকে থাকেন কারণ তাঁদের এবং তাঁদের ভক্তমণ্ডলীর মধ্যে একটি ভালবাসার নিবিড় নিগড় তৈরি হয়ে আছে। যদি বাড়াবাড়িরও বাড়াবাড়ি হয়, তা হলে তা ছিন্নভিন্ন হতে বাধ্য। |
তিষ্ঠ... |
 |
 |
সচিন তেন্ডুলকর |
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
|
আমাদের রাজনীতিতে অনুরূপ অতিকথন প্রায় অপরিহার্য আকর। নেতারা বলে চলেছেন, বলেই চলেছেন: আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে, একই কথা বার বার বলা হচ্ছে, যিনি বলছেন তাঁর খেয়াল নেই কী বলছেন; যাঁরা শুনছেন, সেই শ্রোতৃকুল ধাতস্থ হয়ে গেছেন। নির্বাচনী মরসুমে সভাসমিতির একটি বিশেষ আদল চোখে পড়ে। বড় নেতা সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এক কুড়ি সভায় ভাষণ দেবেন, কোথায় কতটা সময় বলবেন, মনে মনে একটা ঝাপসা হিসেব থাকলেও কোনও সভায় হয়তো বিবিধ কারণে সামান্য বেশি ক্ষণ আটকা পড়ে যান, পরবর্তী সভার কর্মকর্তাদের কাছে ফোন পৌঁছয়, সেই সভায় তন্মুহূর্তে যে বক্তা মঞ্চ কাঁপিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে আড়ং ধোলাই দিচ্ছিলেন, এক জন উদ্যোক্তা এসে তাঁর কানে ফিসফাস মন্ত্রোচ্চারণ করেন: ‘আপনি আরও টেনে যান’, বক্তা মহোদয় অনুজ্ঞা পালন করে একই বচনের পঞ্চম পুনরুক্তি শুরু করে দেন। শ্রোতৃমণ্ডলী বড় নেতার ভাষণ শোনার জন্য প্রতীক্ষাব্যাকুল, তাঁরা ধৈযের্র মাত্রা আর একটু প্রলম্বিত করেন। নির্বাচনী প্রচার সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে প্রথাটি এখন প্রায় সর্বজনগ্রাহ্য।
কৃষ্ণ মেনন লন্ডনে স্থিত থেকে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়া লিগ মারফত দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রচুর অধ্যবসায়ে লিপ্ত ছিলেন। বাগ্মী হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল। তিনি জওহরলাল নেহরুর বিশেষ প্রিয়পাত্র, পঞ্চাশের দশকের উপান্তে দেশে ফিরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে নিন্দা-প্রশংসা প্রচুর কুড়িয়েছেন। তাঁর শত্রুর অভাব ছিল না। কিন্তু কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের এক বিতর্কে তিনি সব মিলিয়ে একাদিক্রমে সাড়ে ষোলো না সাড়ে আঠারো ঘণ্টা বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তাঁর সেই বাগ্মিতা দেশের সব মহলের কাছেই অতীব সন্তোষজনক বিবেচিত হয়েছিল। তিনি সেই বক্তৃতায় যা বলেছিলেন, তার সারমর্ম সম্ভবত এক ঘণ্টার মধ্যেই বলে দেওয়া যেত, তবে তাতে দেশপ্রেমিকদের মন ভরত না। তাঁরা বিস্তার ভালবাসেন। অথচ বিদেশিদের অনেকের কাছে অন্তঃস্থিত যুক্তির ঔচিত্য-অনৌচিত্য নিয়ে ততটা নয়, ভাষণটি বাক্যোচ্ছ্বাস-প্রাবল্য হেতুই কম পছন্দ হয়েছিল।
অন্য একটি বৃত্তান্তে যাই। পূর্ববঙ্গের কৃষক নেতা মৌলানা ভাসানি জনমোহিনী বক্তৃতার জন্য বহুবিদিত। গত শতকের ষাট-সত্তরের দশক, শীতের মরসুমে পূর্ববঙ্গের বড় গঞ্জে সপ্তাহব্যাপী হাট বসেছে, মৌলানাসাহেব এসেছেন, পড়ন্ত বিকেলে তিনি বলা শুরু করলেন ধর্মকথা দিয়ে। নীতির কথা বললেন, নীতির ব্যাখ্যার জন্য কোনও মজার কাহিনি জুড়লেন, তার সূত্র ধরে ইতিহাসে চলে যাওয়া, ইতিহাস-বিবরণ শেষ হতে না হতেই সান্ধ্যকালীন নামাজের সময়, এক প্রহরের বিরতি, ফের সভা শুরু, মৌলানাসাহেব ইতিহাসে ক্ষান্ত দিয়ে সমকালীন রাজনীতিতে চলে এলেন। রাজনীতি থেকে দেশের আর্থিক পরিস্থিতির বিশ্লেষণ, কৃষকরা কেন ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না, কোন নেমকহারামরা তাঁদের বঞ্চিত করছে, পশ্চিম পাকিস্তানের নেতাদের দিকে স্পষ্ট ইঙ্গিত, সে সব কাহনের পর কাহন। কখনও আবেগে কাঁপছেন, কখনও রাগে ফুঁসছেন, কখনও শ্লেষাত্মক রসিকতা করে নিজে হাসছেন, কয়েক হাজার শ্রোতাকেও হাসাচ্ছেন। েফর নামাজের মুহূর্ত সমাগত, নৈশাহারের তাগিদও, পুনরায় সভার বিরতি। রাত একটু গভীর হয়ে এলে নির্মল আকাশে তারাগুলি উজ্জ্বলতর হয়ে উঠছে, শব্দরাজি স্তব্ধ, মৌলানা ভাসানির ভাষণের নৈশ কিস্তি, আরব্য উপন্যাসের একটি-দুটি উপাখ্যানের প্রসঙ্গ, সেখান থেকে অবলীলাক্রমে রামায়ণ-মহাভারতে অথবা কোনও চৈতন্যলীলায়, পরক্ষণে ইসলামি ধর্মকথায়, ফের কৃষক-জীবনের রূঢ় বাস্তবে। ধ্বনিতরঙ্গ উঠছে, নামছে, খাঁটি প্রাকৃত বাঙাল ভাষা, তদৈব উচ্চারণভঙ্গিমা। যাঁরা শুনছেন, তাঁরা সময়জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। সবচেয়ে যা তাজ্জব, সপ্তাহব্যাপী হাট বসেছে, হাটের প্রতিটি দিন মৌলানাসাহেবের ভাষণ পড়ন্ত বিকেল থেকে, হাটুরেরা রুদ্ধশ্বাস আগ্রহে শুনেছেন। বিষয়বৈচিত্রের গুণে তথা বাগ্মিতার কলাকুশলতায় অতিকথন অতি সহজিয়ায় রূপান্তরিত হয়েছে।
এটাই সমস্যা, কথাসরিৎসাগরদের সমারোহ দেশ জুড়ে, বাগাড়ম্বরে ক্ষান্তি নেই, ক্লান্তি নেই, কিন্তু একরাশ কথা বলে আপনি মানুষের কাছে পার পেয়ে যাবেন কি না তা নির্ভর করে শুধু আপনার পরিমিতিবোধের উপরেই নয়, মানুষজন আপনার পরিমিতিবোধ গ্রহণ করছেন কি না, তারও উপর। কাণ্ডজ্ঞানের মাপকাঠি অবশ্যই সকলের সমান হয় না। তা ছাড়া যেখানে সামাজিক প্রেক্ষিতের প্রসঙ্গ প্রধান বিবেচ্য, সেখানে এক জন বিশেষ ব্যক্তি কাণ্ডজ্ঞানবোধ সর্বগ্রাহ্য না-ও হতে পারে। কী পরিমণ্ডলে সবাই আছি, কী কী সমস্যায় সমাজ আপাতত জর্জরিত, কোন ধরনের অভিজ্ঞতার উপত্যকা সমাজভুক্ত মানুষ অতিক্রম করে এসেছেন, অর্থাৎ যে সমস্ত অণুকণাদি নিয়ে এই মুহূর্তের সামাজিক বাস্তব, তার সঙ্গে ভাষণদাতা ব্যক্তির ষত্ব-ণত্ব জ্ঞানের আড়াআড়ি ঘটলেই বিপদ। যিনি এত দিন সমাজ জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, জনগণ দেব বা দেবী রূপে বন্দনা করতে অভ্যস্ত, তিনি যদি হঠাৎ এমন ধরনের কথাবার্তা বলতে শুরু করেন, যা সার্বিক লোকরুচির সঙ্গে খাপ খায় না, তখন অস্বস্তি বাড়ে, গুঞ্জন শুরু হয়, গুঞ্জন এমনকী উচ্চনাদে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেকেই তখন ওই দেব বা দেবীর বচন মেনে নিতে অপারগ হবেন, বাগাড়ম্বর বলে ঠেকবে; যিনি বাগাড়ম্বর থেকে নিজেকে সংবৃত করতে অসমর্থ, তাঁর প্রতি বৈরাগ্য ক্রমশ বর্ধমান।
যথেষ্ট সংকোচের সঙ্গে একটি-দুটি সমসাময়িক ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করছি। জনৈক প্রথিতযশা ক্রিকেট খেলুড়ে কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন, অনেক অ-ভাবনীয় কীর্তি স্থাপন করেছেন। হালে, হয়তো বয়সের ঢল নেমেছে বলেই তাঁর ক্রীড়ায় সেই পুরনো ঔজ্জ্বল্য যেন ঈষৎ নিষ্প্রভ, সব কীর্তি স্থাপনের পরও একটি বিশেষ কীর্তির জন্য তাঁকে এক বছরের অধিক কাল অপেক্ষা করতে হয়েছে, বছর জুড়ে বারংবার চেষ্টা করেছেন, বার বারই অসফল। তাঁকে সুযোগ দেওয়ার জন্য অপেক্ষাকৃত নবীনদের জাতীয় দল থেকে বাইরে রাখতে হয়েছে। অবশেষে পঁয়ত্রিশ বারের চেষ্টায় তিনি তাঁর স্বপ্নটি ছুঁতে পেরেছেন। তাঁর বন্দনাগানে গোটা দেশ মুখরিত, অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন এ বার তিনি নিজের অবসর ঘোষণা করবেন। কিন্তু যশস্বী পুরুষটি এখন বলছেন তাঁর অবসর নেওয়ার প্রশ্নই নেই, তাঁর বিবেচনায় তিনি এই মুহূর্তে প্রতিভার শীর্ষে পৌঁছেছেন, কোন স্পর্ধায় তাঁকে সরে যেতে বলা হচ্ছে? হয়তো সময়জ্ঞানের অভাব, অথবা হয়তো অস্মিতা সাধারণ বিচারবুদ্ধিকে গ্রাস করেছে। ভয়ে হোক, ভক্তিতে হোক, কর্তাব্যক্তিরা অনুমান করি তাঁকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে জাতীয় ক্রিকেট দলে অন্তর্ভুক্ত করে যাবেন, কিন্তু তিনি মস্ত ঝুঁকি নিচ্ছেন। যদি তিনি ফের ক্রমান্বয়ে অসফল হতে থাকেন, তাঁর গৌরব আদৌ বাড়বে না।
সব শেষে অধিকতর সঙ্কোচের সঙ্গে এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উল্লেখ করব। তাঁর জনমোহিনী ক্ষমতা এই মুহূর্তে অনস্বীকার্য, কূটকৌশলেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার, সারা দেশ জুড়ে তিনি প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার পর্যন্ত তাঁর প্রতি অতীব শঙ্কামিশ্রিত সম্ভ্রমপূর্ণ। তবে ভয় হয় একটি বিশেষ স্খলনের জন্য তিনি নিজের পায়ে কুড়ুল মারবেন। সদাসর্বদা তিনি অতিকথনের শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছতে আকুপাকু, দুটি অতিসাম্প্রতিক উদাহরণ: রাজের মানুষের কাছে নির্বাচনী ইস্তাহারে তিনি যে-সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ইতিমধ্যেই নাকি তাদের শতকরা নিরানব্বই ভাগ পূরণ করেছেন। তাঁর দ্বিতীয় আস্ফালন: আগামী পাঁচ বছরে তিনি পঞ্চাশ বছরের কাজ করে রাজ্যবাসীকে চমক দেবেন। মুশকিল হল, রাজ্যবাসী দ্বিতীয় বিবৃতিটির মূল্যায়ন করবেন তাঁর প্রথমোক্ত দাবিটি বাস্তবের সঙ্গে কতটা সঙ্গতিপূর্ণ তার নিরিখে। অথচ ঘোষণাদ্বয়ের কোনওটিরই প্রয়োজন ছিল না, বরং যদি তাঁর দিক থেকে পরিমিত উচ্চারণ আসত, গৃহস্থকুল আশ্বস্ত বোধ করতেন।
প্রমথ চৌধুরী ‘ঘোষালের ত্রিকথা’ গ্রন্থে উপদেশ বর্ষণ করেছিলেন, ‘ঘোষাল তুমি কম কথা বলার আর্ট শেখো’, হয়তো সেই শিল্পকলার ব্যাপকতর প্রসারের সামাজিক প্রয়োজন আছে! এই বিশেষ বাক্সংযম শিল্পকলাটি সমাজে ব্যাপকতর প্রতিষ্ঠা পেলে কী ভালই না হত। |
|
|
 |
|
|