বিহার আছে বিহারেই।
লালু-পরবর্তী জমানায়, নীতীশের আমলে বিহারে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সাংঘাতিক উন্নতি হয়েছে, অপরাধ কমে গিয়েছে---এমন একটি প্রচার রাজ্যে এবং রাজ্যের বাইরে খুব চালু ছিল এই সে দিন পর্যন্তও। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে এই প্রচার নেহাতই ‘মিথ’। বিহারে অপরাধের সংখ্যা দেশের আর পাঁচটা রাজ্যের মতোই ক্রমবর্ধমান।
নীতীশ ক্ষমতায় আসার পর থেকে অপরাধ কমা তো দূরের কথা, বছর বছর বেড়েই চলেছে। এই নিয়ে সরকারি সব পক্ষই নীরব। কারণ এই পরিসংখ্যানের সূত্র রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরেরই একটি রিপোর্ট। সম্প্রতি রিপোর্টটি বিধানসভায় পেশ করা হয়েছে। বিরোধীরা এখন সেই সরকারি রিপোর্টটিকেই ‘বেদ’-এর মতো আঁকড়ে ধরেছেন। গত কয়েক বছরের সরকারি ‘ঢক্কানিনাদ’-কে অন্তঃসারশূন্য আখ্যা দিয়ে সরব হয়েছে বিরোধী আরজেডি।
রাজ্যের সাম্প্রতিক অপরাধের চিত্রটা কি? স্বরাষ্ট্র দফতরের বার্ষিক রিপোর্ট বলছে: ২০১১ সালে ৯৩৪টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে রাজ্যে। ২০১০ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ৭৯৫। একই ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে চুরির ঘটনাও। ২০১০ সালে যেখানে রাজ্যে ১৫, ৫৪৪টি চুরির ঘটনা ঘটেছিল, তা বেড়ে ২০১১ সালে হয়েছে ১৬, ২৯২টি। হিসেব দেওয়া না হলেও সরকার পক্ষ থেকে মেনে নেওয়া হয়েছে, ব্যাঙ্ক ডাকাতি এবং লুঠের ঘটনাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়াও সামগ্রিক ভাবে ২০১১ সালে ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৬৩৩টি জামিন-অযোগ্য অপরাধের ঘটনা ঘটেছিল। ২০১০ সালে এই সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫৭২টি।
অথচ নীতীশ কুমার যখন ২০০৫ সালে ক্ষমতায় আসেন, সেই সময় রাজ্যে জামিন অযোগ্য অপরাধের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৪ হাজার ৭৭৬টি। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারি স্তরে নতুন করে ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়েছে। অপরাধের সংখ্যা কমাতে বিহার সরকার এ বার পুলিশ কমিশনের সুপারিশ মেনে পুলিশকে দু’টি ভাগে ভাগ করতে চাইছে। একটি ভাগ আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টি দেখবে, অন্যটির কাজ হবে অপরাধের তদন্ত করা।
সম্প্রতি এক মহিলার ধর্ষণকে কেন্দ্র করে বিধানসভায় বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে আক্রমণ করে। সে ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকার সমালোচনার পাশাপাশি সামনে এসেছে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতির বিষয়টিও। পুলিশ যখন সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারছে না, তখন মুখ্যমন্ত্রী ৩৮২ জন পুলিশ অফিসারকে ‘ভাল কাজের’ জন্য পুরস্কৃত করেছেন। তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যের সাধারণ প্রশাসনিক কর্তাদেরই একাংশ। তাঁদের মতে, আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি যখন এমন, তখন পুলিশকে পুরস্কার দিয়ে কী লাভ? |