সব রাজ্য একমত হতে পারেনি। এই অবস্থায় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা আপাতত চালু করা হচ্ছে না বলে সোমবার কলকাতায় জানান কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী কপিল সিব্বল।
বণিকসভা ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের একটি আলোচনাসভার পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় সিব্বল জানান, কেন্দ্র এ ব্যাপারে রাজ্যগুলির উপরে নিজেদের মত চাপাতে চায় না। রাজ্যগুলি একমত না-হওয়া পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা চালু হবে না। এ বছরও অন্যান্য বারের মতো একাধিক প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়েই ছাত্র ভর্তি করা হবে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। মেডিক্যালেও অভিন্ন প্রবেশিকার মাধ্যমে ছাত্র ভর্তির পরিকল্পনা করেছিল কেন্দ্র। সেটাও এখনও চালু হয়নি।
অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ছাত্র ভর্তির পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের। আইআইটি-জয়েন্ট, রাজ্য জয়েন্ট এবং এআইইইই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য এত প্রবেশিকা পরীক্ষার বদলে একটি পরীক্ষা দিয়েই যাতে ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারেন, সেই লক্ষ্যে এই পরিকল্পনা করেছিল কেন্দ্র। এই নিয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে বিস্তর আলোচনাও হয়েছে তাদের। কিন্তু সব রাজ্য এই ব্যাপারে একমত নয়। পশ্চিমবঙ্গের জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের এক প্রাক্তন চেয়ারম্যান বলেন, “বিভিন্ন রাজ্যের পাঠ্যক্রম আলাদা। তাই সব বোর্ডের ছেলেমেয়ের পক্ষে অভিন্ন পরীক্ষায় বসা কঠিন। যদিও সব রাজ্য একই ধাঁচে পাঠ্যক্রম তৈরি করছে। তা সত্ত্বেও তাদের পরীক্ষা-কাঠামোয় পার্থক্য তো আছেই। তা ছাড়া অভিন্ন পরীক্ষা কোন ভাষায় হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।”
সিব্বল অবশ্য এ দিন জানান, অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে বিভিন্ন বোর্ডের ছাত্রছাত্রীদের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির পদ্ধতি ঠিক করতে তাঁরা ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট বা আইএসআই-এর সাহায্য নিচ্ছেন। তিনি বলেন, “আইএসআই একটি সূত্র তৈরি করেছে, যার সাহায্যে বিভিন্ন বোর্ডের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর তুলনা করে একটি অভিন্ন মেধা-তালিকা তৈরি করা যাবে। অর্থাৎ বিহারের কোনও ছাত্র ৮৯ শতাংশ নম্বর পেলে তার সঙ্গে অসমের কোনও ছাত্রের ৬৪ শতাংশ নম্বরের তুলনা কী ভাবে করা যাবে, সেই পদ্ধতিটাই ঠিক করেছে আইএসআই।”
অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার ভিত্তিতে ভর্তির জন্য মেধা-তালিকা কী ভাবে তৈরি হবে, তার একটা ইঙ্গিতও এ দিন দিয়েছেন সিব্বল। তিনি জানান, ওই মেধা-তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে বোর্ডের পরীক্ষার ফলকে ৪০ শতাংশ ‘ওয়েটেজ’ বা গুরুত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বাকি ৬০ শতাংশ ‘ওয়েটেজ’ দেওয়া হবে প্রবেশিকা পরীক্ষাকে। দু’টি পরীক্ষার নম্বরকে এ ভাবে আনুপাতিক গুরুত্ব দিয়েই চূড়ান্ত মেধা-তালিকা প্রস্তুত করা হবে। তিনি বলেন, “বোর্ডের পরীক্ষার নম্বর যুক্ত না-করলে ওই পরীক্ষাকে গুরুত্ব দেবে না পড়ুয়ারা। সেই কারণেই মেধা-তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে বোর্ডের পরীক্ষাকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে।”
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ২০১২-র শিক্ষাবর্ষ থেকেই অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা চালু করার ইচ্ছে থাকলেও মূলত বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে ঐকমত্য না-হওয়ায় তা করা যায়নি বলে জানান সিব্বল। কবে এই ব্যবস্থা তিনি এ দিন বলেন, “রাজ্যগুলির সঙ্গে ফের আলোচনা হবে। তাদের উপরে কিছু চাপানোর পক্ষপাতী নই আমরা। রাজ্যগুলি যখন সহমত হবে, তখনই অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা চালু হবে। তার আগে নয়।” |