বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ‘স্বার্থ-চক্র’কে তোপ সিব্বলের
বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনাই তাঁদের কাজ। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় জড়িত ওই ব্যক্তিদের অধিকাংশই ‘নিজেদের স্বার্থ দেখতে ব্যস্ত’ বলে অভিযোগ করলেন স্বয়ং কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী কপিল সিব্বল। সোমবার কলকাতার এক আলোচনাসভায় যাঁর আক্ষেপ, ‘স্বার্থান্বেষী’ ওই সব মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়-আইনেও কোনও পরিবর্তন আনতে দিতে চান না!
বাম জমানায় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দলের ‘হাতে’ রাখতে সেগুলির পরিচালন সংস্থায় নিজেদের দলের ‘অনুগত লোক’ বসানো হত বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে। রাজ্যে রাজনৈতিক পটবদলের পরে শিক্ষাক্ষেত্র থেকে দলতন্ত্র হঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তৃণমূল পরিচালিত সরকার। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কখনও রাজ্যপালকে কার্যত এড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করছে রাজ্য, কখনও কোর্ট-কাউন্সিলের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পরিচালন সংস্থায় উপাচার্য কোন সদস্যদের মনোনীত করবেন, তার সুপারিশ করছে রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদ। এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এ দিনের মন্তব্য যথেষ্ট ‘তাৎপযপূর্ণ’ বলে মনে করছেন শিক্ষাজগতের সঙ্গে যুক্ত অনেকে।
এ দিন শহরে এক বণিকসভা আয়োজিত ওই আলোচনাসভায় সিব্বল বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থে পাঠ্যক্রমকে আরও উদার করা দরকার। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে পারস্পরিক আদানপ্রদান প্রয়োজন।” কিছুটা খেদোক্তির সুরে তাঁর মন্তব্য, “বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় এগজিকিউটিভ কাউন্সিল, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ইত্যাদি দ্বারা। অথচ সেগুলোর অধিকাংশ সদস্যই নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত।
আলোচনাসভায় কপিল সিব্বল। নিজস্ব চিত্র
তাঁরা কোনও পরিবর্তন চান না। গয়ংগচ্ছ (স্ট্যাটাস কো) ভাবে চলতে চান। এমনকী, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-বিধি পরিবর্তনেও তাঁদের আপত্তি!” ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিল্পের যোগাযোগ’ সংক্রান্ত আলোচনাসভাটিতে সিব্বল এ-ও বলেন, “শিক্ষার অগ্রগতির জন্য যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন। এটা শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা শিল্পসংস্থা বা শিক্ষক বা ছাত্র বা অভিভাবকদের উদ্যোগে হবে না। সকলকে এক সঙ্গে উদ্যোগী হতে হবে। কিন্তু সেই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।” এমনকী, কিছু রাজনৈতিক নেতা ‘ভুঁইফোড়’ কলেজের অনুমোদনের জন্য তদ্বির করায় কলেজের সংখ্যা বাড়লেও গেলেও গুণগত মান বাড়ছে না বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি মূলত দু’ধরনের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য। এর কোথাও পরীক্ষা হয় সেমেস্টার পদ্ধতিতে, কোথাও বছরে এক বার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যক্রমও বিভিন্ন। এ দিনই বিকেলে আইআইএম-কলকাতার সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঢোকার আগে সিব্বল বলেন, “এই সব ক্ষেত্রে সাযুজ্য না-থাকলে আদানপ্রদান সম্ভব নয়। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির গঠনগত পরিবর্তন দরকার। আমি তো আর পরিবর্তনের স্থপতি নই! রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে পরিবর্তনটা রাজ্য সরকারকেই আনতে হবে।” কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর অভিযোগ: সেমেস্টার চালু হলে পরিশ্রম বাড়বে বলে অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা এই পরিবর্তনেও রাজি নন। তাঁর কথায়, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তো কিছুই করতে চায় না! আজকাল তাদের কাজ হয়েছে শুধু পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করে পরীক্ষা নেওয়া!”
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা কী বলছেন?
ওঁদের অনেকেই সিব্বলের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন। যেমন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তার বলেন, “জানি না, আলোচনাসভায় মন্ত্রী কী বলেছেন। এখানে প্রচুর গবেষণামূলক কাজ হচ্ছে। এমনকী, অক্সফোর্ডের সঙ্গেও আমরা মিলিত ভাবে গবেষণা চালাচ্ছি। তা ছাড়া এত বড় একটা বিশ্ববিদ্যালয়, যার অধীনে এত কলেজ, সেখানে সেমেস্টার পদ্ধতি চালু করা সহজ নয়। তবে স্নাতকোত্তরে অধিকাংশ বিভাগে তা চালু হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকারাই উদ্যোগী হয়ে করেছেন।” যাদবপুরের কর্তাদের অনেকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কাজ’ নিয়ে সিব্বলের বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন। যদিও পরিচালন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত অনেকে ‘নিজেদের স্বার্থ দেখতে ব্যস্ত’ বলে সিব্বলের যে অভিযোগ, যাদবপুরের উপাচার্য প্রদীপনারায়ণ ঘোষ তার সঙ্গে একমত।
শিক্ষার অধিকার আইন। কেন্দ্রীয় শিক্ষার অধিকার আইন (আরটিই) প্রয়োগে রাজ্য সরকার উদ্যোগী হবে বলে আশাবাদী সিব্বল। এ দিন তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে আরটিই সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশিকা জারি করেছে। এ বার তাদের ওই আইন অনুযায়ী শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত বজায় রাখতে হবে। আশা করি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিক্ষামন্ত্রী এই আইন যথাযথ ভাবে প্রয়োগে উদ্যোগী হবেন।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.