এই ক’দিন আগেও একে অন্যের সঙ্গে জোট বেঁধে আন্দোলনে নামার কথা অন্তত প্রকাশ্যে বলতেন না। এক জনের আন্দোলন নিয়ে অন্য জন তেমন ভাবে মুখও খুলতেন না। সেই দু’জন, অণ্ণা হজারে এবং রামদেব এখন এক যোগে আন্দোলনের কথা বলছেন। আর এতেই অন্য রকম কারণ দেখছেন আরএসএস ও বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, নিতান্ত বিপাকে পড়েই এখন জোট বাঁধছেন অণ্ণা ও রামদেব।
গত সপ্তাহে দিল্লির যন্তর-মন্তরে এক দিনের অনশন শেষে অণ্ণা ঘোষণা করেছিলেন, আগামী দিনে রামদেবের সঙ্গে জোট বেঁধে আন্দোলন করবেন তিনি। জুনের গোড়ায় তাঁর এক দিনের বিক্ষোভ-অবস্থানের যে কর্মসূচি রামদেব গত কাল ঘোষণা করেছেন, তাকে সমর্থন করার কথাও জানিয়েছেন অণ্ণা। সঙ্ঘ নেতৃত্বের বক্তব্য, ঠেকায় পড়েই দু’জনে এক মঞ্চে এসেছেন। গত বছর এক দিকে অণ্ণা ও অন্য দিকে রামদেব কংগ্রেস ও মনমোহন সিংহ সরকারের বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছিলেন। তখন সঙ্ঘের একটি বড় অংশ দু’জনকে এক জোট করার চেষ্টা করেছিল। রামদেব এগোলেও অণ্ণা ও তাঁর টিমের সদস্যরা প্রথমে রাজি হয়েও পরে পিছিয়ে যান। সঙ্ঘের বিরুদ্ধে তাঁরা প্রকাশ্যে কটূক্তিও করেন। ক্ষুব্ধ আরএসএস অণ্ণাকে সমর্থন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। তার পরেই গত তিন মাসে অণ্ণার একের পর এক কর্মসূচি কার্যত ব্যর্থ হয়েছে।
এখন সঙ্ঘের একটি বড় অংশের অসন্তোষের মুখে পড়েছেন রামদেবও। সঙ্ঘের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে রামদেব প্রচার করলেও ব্যর্থই। তা ছাড়া রামদেব এখন নিজের প্রচার ও প্রসারেই বেশি মনোযোগী। তাই রামদেব ও অণ্ণার যৌথ আন্দোলনের কর্মসূচি সঙ্ঘ সমর্থন করবে কি না, তা ভবিষ্যতে আলোচনা করে স্থির হবে।” সঙ্ঘ নেতৃত্ব মনে করছেন, টিম-অণ্ণা বা রামদেব, দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই কোনও না কোনও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। উত্তরাখণ্ডে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসায় রামদেবও আশঙ্কায়। কারণ, তাঁর পতঞ্জলি যোগপীঠের সাম্রাজ্য উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারেই।
এই পরিস্থিতিতে রামদেব বুঝতে পারছেন, তাঁর নিজস্ব ‘ক্যাডার’ থাকলেও অণ্ণার মতো পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি নেই। অণ্ণাও বুঝতে পারছেন, ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর ভাবমূর্তি স্বচ্ছ হলেও নিজস্ব ‘ক্যাডার’ বাহিনী নেই। সঙ্ঘের এক নেতার কথায়, “দু’জনেই এখন দু’জনকে আঁকড়ে একে অপরের ইতিবাচক দিকগুলির ফায়দা পেতে চাইছেন।”
বিজেপি অবশ্য এখনই উৎসাহিত নয়। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, অণ্ণা বা রামদেব দু’জনেই এখন ‘দুর্বল’ হয়ে পড়েছেন। তবু কংগ্রেস বা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনও আন্দোলন করে কেউ যদি বিজেপিকে সাহায্য করে, তা হলে ক্ষতি কোথায়? অরুণ জেটলির কথায়, “দুর্নীতি নিয়ে যাঁরাই আন্দোলন করুন, দল তাঁদের পাশে থাকবে।” |