বিপর্যয় সত্ত্বেও ভোটের ফলপ্রকাশের দিনই দশ জনপথের বাইরে দাঁড়িয়ে রাহুল গাঁধী জানিয়েছিলেন, “উত্তরপ্রদেশ ছেড়ে যাব না।” বিধানসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশে ভরাডুবির কারণে আপাত অস্বস্তি হলেও সেই কথা রাখতে চলেছেন রাহুল। কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের ভোট-ফলাফল পর্যালোচনার জন্য আগামী ৫ ও ৬ এপ্রিল দিল্লিতে রাজ্যের নেতাদের বৈঠকে ডেকেছেন তিনি।
উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফল প্রকাশিত হয়েছে ৬ মার্চ। তার পর প্রায় এক মাস অতিবাহিত। এর মাঝে রাহুল গাঁধীকে সংসদের অধিবেশনেও বিশেষ দেখা যায়নি। এমনকী এ-ও শোনা গিয়েছে যে রাহুল কিছু দিনের জন্য বিদেশে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন। এই অবস্থায় কংগ্রেসের একাংশ নেতা বলতে শুরু করেছিলেন যে রাহুলের এভাবে মুখ লুকিয়ে থাকা ঠিক হচ্ছে না। বরং ফের উত্তরপ্রদেশ ও গোটা দেশে সফরে যাওয়া উচিত তাঁর। তা ছাড়া, উত্তরপ্রদেশে দলের খারাপ ফল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ইতিবাচক দিক হল যে সেখানে কংগ্রেসের ৬ শতাংশ ভোট বেড়েছে।
দলের মধ্যে রাহুলকে নিয়ে এই গুঞ্জনের মাঝেই কংগ্রেস সূত্রে আজ বলা হয়েছে, দিল্লিতে কংগ্রেসের ‘ওয়ার রুমে’ উত্তরপ্রদেশের ফল নিয়ে পর্যালোচনার জন্য বৈঠক ডেকেছেন রাহুল। দলের যে ২৮ জন বিধায়ক উত্তরপ্রদেশের ভোটে জিতেছেন প্রথমে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। পরাস্ত হলেও যাঁরা ভোটে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন, বৈঠক করবেন তাঁদের সঙ্গেও। হিসেব মতো কংগ্রেসের ১৬৭ জন প্রার্থী এবার কুড়ি হাজারের বেশি ভোট পেয়েছেন। জমানত বাজেয়াপ্ত হয়ে যাওয়া কংগ্রেস প্রার্থীদের সঙ্গে সবশেষে বৈঠক করবেন তিনি।
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, সম্ভবত ওই বৈঠকে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংহ নাও থাকতে পারেন। কারণ, তিনি এখন মার্কিন সফরে রয়েছেন। কংগ্রেসের অন্য একটি সূত্র অবশ্য বলছে, এও হতে পারে দিগ্বিজয়কে বৈঠকে না রাখতে চাওয়ার কারণেই এমন সময় বেছে নিয়েছেন রাহুল। কেননা বিপর্যয়ের জন্য অনেকেই এখন দিগ্বিজয়কে দায়ী করছেন।
গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ তরুণ প্রজন্মের এক নেতা আজ বলেন, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের ফল এবার খারাপ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এ-ও ঠিক যে রাহুল ভোট প্রচারে বিপুল সাড়া পেয়েছিলেন। তাঁর সেই প্রচারের সুবিধাও মুলায়ম সিংহ-অখিলেশ যাদবরা পেয়েছেন। মানুষ প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোট ভাগ হতে দেয়নি বলেই কংগ্রেসের ফল ভালো হয়নি। কিন্তু লোকসভা ভোটের বিষয় হবে অন্য। গত লোকসভা ভোটের ফলই তার প্রমাণ। বিধানসভা ভোটের ফলের থেকে লোকসভার ফলের ফারাক কতটা হতে পারে তা ২০০৯ সালেই দেখা গিয়েছে। আর তাই কংগ্রেস দমছে না। তাঁর কথায়, রাহুলও নিজেকে গুটিয়ে নেননি। উত্তরপ্রদেশে ভোট প্রচারে তিনি প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। তা ছাড়া সবে সেখানে সরকার গঠন হয়েছে। ফলে এখনই সেখানে তড়িঘড়ি রাজনৈতিক কর্মসূচি নেওয়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি। ফলে পরিকল্পিত ভাবেই পদক্ষেপের কথা ভাবছেন তিনি। যা শুরু হতে চলেছে ভোটের ফলাফল পর্যালোচনার মধ্যে দিয়ে। |