অস্ত্র কেনায় সেনাপ্রধানদের দায় বাড়াতে চান অ্যান্টনি
প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার সময় কমাতে তিন বাহিনীর প্রধানের হাতে আরও বেশি আর্থিক ক্ষমতা দিতে আগ্রহী প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি। তবে সে ক্ষেত্রে ত্রুটি বা অনিয়ম হলে তার দায়বদ্ধতাও সুনিশ্চিত করতে হবে। সেনাপ্রধান জেনারেল বিজয় কুমার সিংহ ও অন্য সেনাকর্তাদের নিয়ে আজ এক উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির বৈঠক ডেকে এ কথা জানিয়ে দিলেন তিনি। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর জন্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার বিষয়টি আরও সুসংহত করার নির্দেশ দিলেন।
বৈঠকে অ্যান্টনি বলেন, “প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনাবেচা নিয়ে প্রক্রিয়াগত সময় কমানো যায় কি না, সে ব্যাপারে সেনাকর্তাদের উপায় সন্ধান করতে হবে।” এমনকী এ-ও জানিয়ে দিয়েছেন, এ দিনের বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত কতটা রূপায়ণ হল, তা এক মাস পর বৈঠক ডেকে খতিয়ে দেখবেন তিনি।
মাত্র এক সপ্তাহ আগে সংবাদমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে প্রতিরক্ষা কেনাবেচা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করেছিলেন সেনাপ্রধান। তার দু’দিন পরেই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে সেনাপ্রধানের লেখা একটি চিঠি ফাঁস হয়ে যায়। গত ১২ মার্চ প্রধানমন্ত্রীকে ওই চিঠি লিখে ভি কে সিংহ জানিয়েছিলেন, সেনাবাহিনীর জন্য অস্ত্র কেনার প্রক্রিয়া শুধু সময়সাপেক্ষ তা নয়, তাতে প্রচুর ফাঁকফোকর রয়েছে। এবং সামরিক বাহিনীর অবস্থা খুবই সঙ্গীন। খোদ সেনাপ্রধানের ওই চিঠি নিয়ে সংসদে তোলপাড় পড়ে যায়। প্রতিবেশী রাষ্ট্র চিন ও পাকিস্তান যখন ক্রমশই তাঁদের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি বাড়াচ্ছে, তখন ভারতীয় সেনার হাঁড়ির হাল এ ভাবে ফাঁস হয়ে যাওয়ায় দেশে উদ্বিগ তৈরি হয়। সেই পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা-প্রস্তুতি নিয়ে অ্যান্টনি সংসদকে আশ্বস্ত করেছিলেন।
তার পরেই ডাকা হয় আজকের বৈঠক। সাউথ ব্লকে আজ দু’টি বৈঠক করেন অ্যান্টনি। সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি এবং সরঞ্জামের চাহিদা খতিয়ে দেখতে প্রথম বৈঠকে সেনাপ্রধান ও অন্য সেনা কর্তারা ছাড়াও ছিলেন প্রতিরক্ষা সচিব শশীকান্ত শর্মা। পরে দুপুরে ‘ডিফেন্স অ্যাকিউজিশন কাউন্সিল’-এর বৈঠকে প্রতিরক্ষা ক্রয় দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল বিবেক রায় এবং বাকি দুই বাহিনীর প্রধানকেও ডাকা হয়।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, আজকের বৈঠকে সেনাপ্রধানের সব অভিযোগের (প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে) জবাবও দিতে চেয়েছেন অ্যান্টনি। সেই কারণেই, তিনটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করা হয়েছে। এক, প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির জন্য দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে বলেছেন। দুই, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সংক্রান্ত দ্বাদশ যোজনায় মঞ্জুরি দিয়েছেন। তৃতীয়ত, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলেছেন। অর্থাৎ বিদেশি কোনও সংস্থার কাছ থেকে সরঞ্জাম কেনার তুলনায় প্রযুক্তি হস্তান্তরের ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে টেট্রা ট্রাক কেনার মতো বিতর্ক এড়ানো যায়।
রাজনৈতিক নেতৃত্বের মতে, প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির ব্যাপারে কেন্দ্রে মনমোহন সরকার যে কতটা সজাগ সেই বার্তা দেওয়াই ছিল আজকের বৈঠকের উদ্দেশ্য। তা ছাড়া, দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত করার কথা যে ভাবে বলেছেন অ্যান্টনি, তাও দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ। সেনাপ্রধান এ বিষয়ে বিতর্ক উস্কে দেওয়ার পর কেন্দ্রের তৎপরতার দু’টি দিক কৌশলে তুলে ধরতে চাইছে মনমোহন সরকার। এক, দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্তের গতি বাড়ানো। সেই কারণেই টেট্রা ট্রাকের সরবরাহকারী সংস্থা ভেকট্রার কর্ণধার রবি ঋষির পাসপোর্ট আটক করেছে। পাশাপাশি প্রতিরক্ষা প্রস্তুতিতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
২০০৪ সালে কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের সূচনার সময়ে প্রতিরক্ষা কেলেঙ্কারি নিয়ে দিল্লি সরগরম ছিল। সেই কারণেই সনিয়া-মনমোহন গোড়া থেকেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রক শুধু কংগ্রেসের কাছে রেখেছেন তা নয়, দলের নির্ভরযোগ্য নেতার হাতে মন্ত্রকের দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন। সে দিক থেকে প্রথম আড়াই বছর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসাবে প্রণব মুখোপাধ্যায় বড় কোনও কেনাবেচায় অনুমোদন না দিলেও উল্লেখযোগ্য একটি কাজ করেছিলেন। তা হল, প্রতিরক্ষা কেনাবেচা নিয়ে সুনির্দিষ্ট নীতি নির্ধারণ। কিন্তু অ্যান্টনি এতটাই রক্ষণশীল যে তাঁর আমলে কেনাবেচা বিশেষ হয়নি। সম্প্রতি রাফাল চুক্তি হয়েছে মাত্র। ফলে সেনাপ্রধান প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লেখার পর অলক্ষ্যে একটা আঙুল অ্যান্টনির দিকেও ওঠে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের মতে, কৌশলে সেই ‘অপবাদ’ মেটাতেও আজ সচেষ্ট হয়েছেন অ্যান্টনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.