বেশ কিছু দিন ধরে বেনাপোল বন্দরে আটকে ছিলেন ভারতীয় একটি ট্রাক। যার প্রতিবাদে সোমবার ধর্মঘট করলেন ভারতীয় ট্রাক চালকেরা। ওই ট্রাকটি দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। ট্রাক চালকদের আন্দোলনে সোমবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল সীমান্তে বাণিজ্য বন্ধ ছিল। বিকেল ৫টার পরে ট্রাকটি ছেড়ে দেওয়া হলে ফের পণ্য আমদানি-রফতানি শুরু হয়।
|
পেট্রাপোল শুল্ক দফতর ও ট্রাক চালকদের থেকে জানা গিয়েছে, গত ১৪ মার্চ গৌরাঙ্গ ভক্ত নামে এক ট্রাকচালক চিনি-ভর্তি গাড়ি নিয়ে বাংলাদেশের বেনাপোলে যান। ফিরে এসে তিনি গম-বোঝাই আরও একটি ট্রাক নিয়ে বেনাপোলে ঢোকেন। বাংলাদেশ শুল্ক দফতরের অফিসারেরা পরের ট্রাকটির সঙ্গে থাকা ‘কার-পাস’ জমা না নিয়েই ট্রাকটি আটকে দেন। যদিও ট্রাকের কাগজপত্রে কোনও ভুল ছিল না। পরবর্তী সময়ে বেনাপোলে পণ্য খালাস করার পরে ট্রাকটিকে আর পেট্রাপোলে ফিরতে দেওয়া হচ্ছিল না। শনিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ট্রাকটিকে ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে এ দেশের ট্রাক চালকেরা বেনাপোলে পণ্য নিয়ে ঢুকতে অস্বীকার করেন। যার জেরে ওই দিনই ব্যাহত হয়েছিল সীমান্ত বাণিজ্য। দু’দেশের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ বৈঠকে বসে। বাংলাদেশের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, রবিবার বেলা ১২টার মধ্যে ট্রাকটি ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু সোমবার সকাল পর্যন্ত ওই ট্রাকটি ফিরে না আসায় এদিন ধর্মঘট শুরু করেন ভারতীয় চালকেরা। ‘টেকনিক্যাল’ ত্রুটির জন্যই এই সমস্যা হয়েছিল বলে পেট্রাপোল শুল্ক দফতরের তরফে জানানো হয়েছে।
পেট্রাপোল শুল্ক দফতরের (কার্গো) সহকারী কমিশনার পদ্মাশীল জুমলে বলেন, “একই দিনে এক ভারতীয় ট্রাক চালক দু’টি কার-পাস নিয়ে বেনাপোলে গিয়েছিলেন। একটি কার-পাস ও দিকে জমা নেওয়া হলেও অন্যটি তাঁরা নেননি। চালক দু’বার দু’টি পণ্য-বোঝাই ট্রাক নিয়ে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ একটি ট্রাক আটকে রেখেছিলেন। সোমবার বিকেলে সেটি ফিরে আসে।” |
বাণিজ্য বন্ধ। সীমান্তে দাঁড়িয়ে পণ্যবোঝাই ট্রাক। |
চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাণিজ্যের কাজ ‘সহজ’ করতে চালু হয়েছিল ‘অভিন্ন কার-পাস’। ওই ব্যবস্থায় শুল্ক দফতরের অফিসারদের সই করা একটি ফর্মে চালক-খালাসিদের ছবি ও ট্রাক-মালের বিবরণ থাকে। নিয়ম হয়, একই দিনে বেনাপোল বন্দর থেকে চালককে ফিরে আসতে হবে। কিন্তু বাস্তবে ওই নিয়ম এখনও চালুই হয়নি। ভারতীয় ট্রাক চালকেরা পণ্য নিয়ে বেনাপোলে গেলে পণ্য খালাস করতে দু’তিন দিন সময় লাগে। কিছু ক্ষেত্রে আরও বেশি। ভারতীয় চালকেরা সে সময়ে অনেকেই পেট্রাপোলে ফিরে আসেন। রাতে এ দিকে ঘুমিয়ে সকালে আবার ফিরে যান।
ট্রাক চালকদের পক্ষে বনগাঁ মহকুমা আইএনটিইউসি-র সম্পাদক প্রদীপকুমার সাহা বলেন, “কার-পাস ব্যবস্থা নতুন। সমস্ত নিয়ম ট্রাক চালকেরা জানেন না। তাঁদের জানানোর জন্য কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।” পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, “ওই চালক আইনগত ভাবে ভুল করেছিলেন, এ কথা ঠিক। কিন্তু সরকারও কার-পাস ব্যবস্থা নিয়ে যে সব নিয়ম চালু করেছে, তা ঠিকমতো মানা হচ্ছে না। বিভ্রান্তি দেখা দিচ্ছে।”
|