দুবরাজপুরে ভেস্তে গেল বৈঠক
জট কটল না খোলামুখ কয়লাখনির
তিন মাসের বেশি সময় কেটে গেলেও অচলাবস্থা কাটল না দুবরাজপুরের লোবা অঞ্চলে প্রস্তাবিত খোলামুখ কয়লাখনির। ‘পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ’ বা পিপিপি ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ডিভিসি-এমটা কোল মাইনস লিমিটেড ওই কয়লাখনি গড়ার প্রস্তুতি শুরু করেছিল। কিন্তু জমি কেনার ‘পদ্ধতি’ ঘিরে প্রশ্ন তুলে গ্রামবাসীদের একাংশ এবং স্থানীয় কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সদস্যরা গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে সংস্থার মাটি কাটার যন্ত্র আটকে রেখেছেন। মাঝে সমস্যা মেটাতে প্রশাসন কয়েকবার উদ্যোগী হলেও ফল মেলেনি।
অবস্থার কোনও পরিবর্তন না হওয়ায়, সোমবার দুবরাজপুর ব্লক অফিসে ফের সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক ডেকেছিল প্রশাসন। কিন্তু জট কাটল না তাতেও। মহকুমাশাসক (সিউড়ি সদর) সুজয় আচার্যের নেতৃত্বে সকলে উপস্থিত থাকলেও বৈঠকে যোগই দিলেন না কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সদস্যরা। বৈঠকে অনুপস্থিত থাকার পেছনে তাঁদের দাবি, প্রথমত মূল যে বিষয় নিয়ে তাঁরা আলোচনা চাইছেন, সেই বিষয়ে বৈঠক ডাকা হয়নি। দ্বিতীয়ত--এই বৈঠকে মাত্র দু’তিনজনকে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কৃষিজমি রক্ষা কমিটির বক্তব্য, সমস্যাটি দু-তিন জনের নয় ১০-১২টি গ্রামের। স্বভাবতই এ দিনের বৈঠক ভেস্তে যাওয়ায় এই জট কাটা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই খোলামুখ কয়লা খনি গড়ে তুলতে লোবা পঞ্চায়েত এলাকার লোবা-সহ ১০টি মৌজার মোট ৩,৩৫৩ একর জমি কেনার কথা ছিল ডিভিসি-এমটার। এর মধ্যে ২২৩২ একর জমি শুধুমাত্র খনির জন্য, বাকিটা পুনর্বাসন-সহ অন্য কাজে ব্যবহারের জন্য রাখার কথা। গোটা প্রকল্পের উদ্দেশ্য, ডিভিসি পরিচালিত দুর্গাপুর ও মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা সরবরাহ করা। সে জন্য বছর খানেক আগে থেকে এলাকার জমির মালিকদের কাছ থেকে সরাসরি জমি কেনাও শুরু করেছেন সংস্থা কর্তৃপক্ষ।
এই জমি কেনা নিয়েই বিবাদের সূত্রপাত। কৃষিজমি রক্ষা কমিটির অভিযোগ, সংস্থার ‘প্রতিশ্রুতি’ অনুযায়ী এক সঙ্গে এলাকার সব জমি কেনার কথা থাকলেও বাস্তবে ওই সংস্থা দু-চারটি মৌজায় বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু জমি কিনে কয়লাখনির জন্য খননকাজ শুরু করতে চাইছে। ইতিমধ্যেই ওই সংস্থা বেশ কিছু যন্ত্র ‘অবৈধ’ ভাবে এলাকায় এনে হাজির করেছে। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ কৃষিজীবী, দিনমজুর, খেতমজুর, বর্গাদার বা পাট্টাদার-সহ এলাকার অধিকাংশ মানুষকে ‘অন্ধকারে’ রেখে কিছু মধ্যস্থতাকারী মারফত জমি কিনেছে। জমিহারা ক্ষুদ্র চাষি, অনথিভুক্ত জমির মালিক, বর্গাদার, পাট্টাদার বা খেতমজুরদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তার কোনও স্পষ্ট রূপরেখা স্থির না করেই জমি কেনা চলেছে বলে কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সদস্যদের দাবি। মূলত এই সব অভিযোগেই সংস্থার মাটি কাটার যন্ত্র আটকে রাখা হয়েছে।
কমিটির পক্ষে ফেলারাম মণ্ডল, জয়দীপ মজুমদারদ বলেন, “আমরা শিল্পের বিপক্ষে নই। কিন্তু একসঙ্গে এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন প্যাকেজ দিয়ে জমি কিনলে অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত শিল্পনীতি মেনে জমি নিলে আমাদের আপত্তি নেই। পাশাপাশি প্রান্তিক চাষি ও খেটে খাওয়া মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানও সুনিশ্চিত করতে হবে। শুধু মাত্র মাটি কাটার যন্ত্রটি জোর করে ছাড়িয়ে নিতে চাইলে আমরা তার প্রতিবাদ করব।”
অন্য দিকে সংস্থার দাবি, গত বছর তকালীন জেলাশাসক, সংস্থার আধিকারিক, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা, এলাকাবাসী এবং স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের উপস্থিতিতেই জমির দাম ও পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষিত হয়েছিল। সে সব মেনেই প্রায় 8০০ একর জমি ইতিমধ্যেই কেনা হয়েছে। এখানে সাধারণ মানুষকে অন্ধকারে রাখার প্রশ্নই নেই বলে সংস্থার দাবি। সংস্থার অভিযোগ, কিছু লোক এলাকাবাসীকে বিভ্রান্ত করে নিজেদের অন্যায় দাবি মানানোর চেষ্টা করছেন। জোর করে কৃষিজমি রক্ষা কমিটির নামে যাঁরা যন্ত্র আটকে রেখেছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকে আগেই সংস্থাকে জমি বিক্রি করেছেন। নির্মাণকারী সংস্থার জয়দেব-খাগড়া প্রকল্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্মল সরকার বলেন, “ওঁরা অন্যায় ভাবে যন্ত্র আটকে রেখেছেন দীর্ঘ দিনধরে। আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি। আদালতেও এ ব্যাপারে মামলা করা হয়েছিল। রায় আমাদের অনুকুলেই গিয়েছে। তা সত্ত্বেও কাজ হয়নি। উল্টে প্রশাসনের নির্দেশ মেনে আমাদের ক্রয় করা জমি চিহ্নিত করতে গেলে আন্দলোনকারীদের হাতে হেনস্থা হতে হচ্ছে। আর এদিনের বৈঠকও ফলপ্রসু হয়নি।” মহকুমাশাসক (সিউড়ি সদর) সুজয় আচার্য বলেন, “চেয়েছিলাম শান্তিপূর্ণভাবে আলোচলার মাধ্যমে কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সদস্যেরা মাটি কাটার যন্ত্রটি ছেড়ে দেবেন। কিন্তু তাঁরা বৈঠকেই এলেন না। এরপরে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.