সোনার মূর্তি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে চার নেপালি তরুণ-তরুণীর কাছ থেকে টাকা ছিনতাইয়ের চেষ্টার অভিযোগে রবিবার রাতে দুই যুবককে গ্রেফতার করল পূর্বস্থলী থানার পুলিশ। ধৃতদের নাম নাসির শেখ ও সৈয়দ মল্লিক। তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একটি পিতলের মূর্তি পাওয়া গিয়েছে। পুলিশের দাবি, ওই মূর্তিটিই চড়া দামে ওই তরুণ-তরুণীদের বিক্রি করতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মূর্তিটি নকল বুঝতে পেরে তাঁরা সেটি নিতে অস্বীকার করেন। তার পরেই আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে তাঁদের কাছ থেকে টাকা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। মহকুমা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “আরও কয়েকজন এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তাদেরও দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।” ঘটনায় পুলিশি তৎপরতার প্রশংসা করে মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি বলেন,“দ্রুততার সঙ্গে প্রতারণা চক্রটিকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। তবে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে।”
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের বাড়ি থেকে পাওয়া মূর্তিটি প্রায় ৮ ইঞ্চি লম্বা। মাঝখানে কাটার চিহ্ন রয়েছে। তাদের অনুমান, সোনার কিনা যাচাই করতেই মূর্তিটিকে কাটা হয়েছিল। জেরার মুখে ধৃতরা জানিয়েছে, কিছুদিন আগেও তাদের ডেরায় এসেছিল নেপালি তরুণ-তরুণীর ওই দলটি। সেখানে মূর্তিটি ‘পছন্দ’ও করে যায় তারা। এর পরেই টেলিফোনে শুরু হয় দরাদরি। শুক্রবার মাজিদায় আসার সময়ে তাঁদের কাছে নগদ দেড় লক্ষ টাকা ছিল। যদিও শনিবার রাতে পূর্বস্থলী থানায় লিখিত অভিযোগে ওই দলের এক সদস্য কমলা লামা দাবি করেছিলেন, বেলের হল্ট স্টেশনের কাছে মাজিদায় নাসিরের বাড়িতে খেতে বসার সময়ে আচমকা দরজা বন্ধ করে দিয়ে রিভলবার দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে সমস্ত টাকা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছিল নাসিরের লোকজন।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, পূর্বস্থলীর বাইরে নবদ্বীপেরও বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতী ওই চক্রে জড়িত। তাদের হয়ে কাজ করে বিভিন্ন দালাল। বাইরে থেকে আসা মধ্য আয়ের লোকজনকেই ‘টার্গেট’ করে তারা। চায়ের দোকান বা বাজার এলাকায় তাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতায়। বিশ্বাস অর্জনের জন্য নিজেদের বাড়িতেও নিয়ে আসে। সেখানেই চক্রের পাণ্ডার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। একবার পরিচয় হলে পাণ্ডারাই নামমাত্র দামে সোনার মূর্তি কেনার প্রস্তাব দেয় তাদের। প্রলোভনের ফাঁদে আটকে পড়েন অধিকাংশই। কিছুদিন আগে বেলের হল্ট স্টেশনের কাছেই একটি ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল শিলিগুড়ি থেকে নিখোঁজ দুই যুবককে। তাঁরা অবশ্য পুলিশের কাছে দাবি করেন, তাঁদের অপহরণ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পুলিশের সন্দেহ, ওই যুবকদের নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে প্রতারণাচক্রটির কোনও যোগ আছে। ওই দুই যুবকের জবানবন্দি সঠিক ছিল না।
কিন্তু, এত সস্তায় সোনার মূর্তি! কীভাবে নিশ্চিত করা হয় ক্রেতাদের? পুলিশের দাবি, সন্দেহ নিরসনের জন্য আগে থেকেই পিতলের মূর্তির সারা গায়ে লাগানো থাকে সোনার পাতলা আস্তরণ। যদিও ক্রেতাদের কাছে তারা মূর্তিটি ‘খাঁটি সোনার’ বলেই দাবি করে। চোখের সামনে ‘প্রমাণ’ও দেয়। লোহার দণ্ড দিয়ে ঘষতে শুরু করে মূর্তিটি। আস্তরণ থেকে ঝরে পড়ে সোনার গুঁড়ো। এর পরেও সন্দেহ থাকলে পরখ করে নেওয়ার জন্য ওই গুড়োর নমুনা বাইরের লোকজনকে দেখানোর ছাড়পত্রও মেলে ক্রেতাদের। ওই দলটিও সোনার গুঁড়ো ঝরে পড়তে দেখেই নিশ্চিত হয়েছিল বলে ধৃতদের কাছ থেকে জানতে পেরেছে পুলিশ। |