মূল রাস্তা তিনটি। তার মধ্যে দু’টিই বেহাল। চলাচলের অযোগ্য। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও রাস্তা সংস্কার করানো হয়নি। সেই কারণে আজ, মঙ্গলবার সমস্ত রুটের বাস চলাচল বন্ধের ডাক দিয়েছে কাটোয়া বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। এই নিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি দিয়েছে তারা। মঙ্গলবার বাস চলাচল না করলে কয়েক হাজার যাত্রী এবং স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা বিপাকে পড়বেন বলে আশঙ্কা। তবে সংগঠনের সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র সেন জানিয়েছেন, স্নাতকস্তরে পরীক্ষার জন্য কাটোয়া থেকে দু’টি বিশেষ বাস বর্ধমানে যাবে।
কাটোয়ার মহকুমাশাসক দেবীপ্রসাদ করণম বলেন, “বাস মালিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাঁরা যাতে বাস বন্ধ না রাখেন, তার জন্য তাঁদের অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা কিছুই শুনতে রাজি নন। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে বাস চালাতে বলা হয়েছে।”
বাস মালিকদের ওই সংগঠনের দাবি, সাম্প্রতিক কালে শুধু খারাপ রাস্তার জন্যই ১২টি বাস দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। শতাধিক যাত্রী আহত। সংগঠনের সভাপতি নারায়ণচন্দ্র সেন বলেন, “আমরা বাধ্য হয়ে বাস বন্ধ রাখছি। প্রায় ২০০টি বাস চলাচল করবে না। তবে পরীক্ষার্থীদের জন্য ২টি বিশেষ বাস থাকছে।” |
কাটোয়া শহরে আসার জন্য বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়ক, সপ্তগ্রাম-ত্রিবেণী-কালনা-কাটোয়া রাজ্য সড়ক (এসটিকেকে) এবং কাটোয়া-ফুটিসাঁকো রাস্তার উপরেই নির্ভর করতে হয় যাত্রীদের। কিন্তু এসটিকেকে এবং কাটোয়া-ফুটিসাঁকো রাস্তার হাল নিতান্তই খারাপ।
ভাঙা রাস্তা দু’টি দিয়ে বহরমপুর-সিউড়ি-বোলপুর-কৃষ্ণনগর-নবদ্বীপ-মেমারি-সহ ১০টি রুটের বাস চলে। কাটোয়াকে কেন্দ্র করেই বর্ধমান জেলার সঙ্গে নদিয়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং হুগলি জেলার যোগাযোগ রক্ষিত হয়। পূর্ত দফতর (রাস্তা)-র হিসাবে ওই দুই সড়ক দিয়েই বীরভূমের পাথর, অজয়ের বালি চলে যায় কলকাতা। বাস ছাড়াও দু’টি রাস্তায় রোজ ৭৫০ বড় গাড়ি-সহ দেড় হাজার যান চলে।
এসটিকেকে রোডের কাটোয়া থেকে পূর্বস্থলীর ছাতনি, এই ১৯ কিলোমিটার রাস্তার বেশিরভাগ অংশই ভেঙেচুড়ে একাকার। রাস্তার বড় গর্তগুলির উপরে এক সময় ঝামা-ইট ফেলে রাস্তা চলাচলের যোগ্য করা হয়েছিল। কিন্তু সে সব উঠে গিয়ে রাস্তার হাল এখন আরও ভয়াবহ। বাস চালক প্রবীর হাজরা, তারাপ্রসন্ন চট্টরাজরা বলেন, “ইষ্টনাম জপতে জপতে রোজ বাস চালাই। রাস্তা দিয়ে চালানো যায় না, বাস চালাই রাস্তার পাশের অংশ দিয়ে।”
কাটোয়া-ফুটিসাঁকো রাস্তার মধ্যে চড়খি সেতুর পর থেকে ফুটিসাঁকো পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার রাস্তার পিচ তো কবেই উঠে গিয়েছে। পুরো রাস্তাটাই এখন এবড়ো-খেবড়ো। ওই রাস্তায় নিত্য চলাচল করেন সুমন্ত সাহা, শান্তনু দত্ত। তাঁরা বলেন, “রাস্তা দিয়ে গাড়ি গেলেই ধুলোর ঝড় ওঠে। আসলে রাস্তা বলে কার্যত এখন আর কিছুই নেই।” কাটোয়ার বাসিন্দা তথা মন্তেশ্বরের চিকিৎসক কৌশিক দত্ত প্রামাণিক, বিশ্বনাথ দাসেরাও বলেন, “মোটরবাইক নিয়ে যাতায়াত করা দুষ্কর। কাটোয়া থেকে দাঁইহাট মাত্র সাত কিলোমিটার। কিন্তু যেতে আধ ঘণ্টার উপরে সময় লেগে যায়।”
বাস মালিক রণদেব মুখোপাধ্যায় ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “প্রতি দিনই বাসের যন্ত্রাংশ খারাপ হচ্ছে। প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে বার বার আবেদন-নিবেদন করা হয়েছে। কিন্তু রাস্তা সারানো হয়নি।”
গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা দু’টির সংস্কার হচ্ছে না কেন?
মহকুমাশাসকের জবাব, “এসটিকেকে রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। কাটোয়া-ফুটিসাঁকো রাস্তার মধ্যে নিরোল থেকে ফুটিসাঁকো নতুন করে তৈরি হবে। তার জন্য টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। খুব শীঘ্রই ওই রাস্তার কাজ শুরু হবে।”
তত দিন অবশ্য ভোগান্তিই সঙ্গী যাত্রীদের। |