খোলা দরপত্রে চড়া দাম উঠল কৃষ্ণসায়রের মাছ চাষে
ত কয়েক বছর ধরে যেখানে ন’লক্ষ টাকাও দর উঠছিল না, বর্ধমানের সেই কৃষ্ণসায়রে মাছ চাষের জন্য এ বার খোলা দরপত্রে মিলল ৩১ লক্ষ টাকা। তৃণমূলের দাবি, আগে সিপিএমের কিছু নেতা কাঁচা টাকার বিনিময়ে ওই বরাত নির্দিষ্ট লোককে পাইয়ে দিতেন। সে কারণেই দর উঠত না। সিপিএম অবশ্য তা উড়িয়ে দিয়েছে।
বর্ধমানের রাজাদের আমলে তৈরি কৃষ্ণসায়রকে ঘিরে আগেই গড়ে তোলা হয়েছে পরিবেশকানন। মাছ চাষের পরিমাণও বেড়েছে। কিন্তু বাম জমানার শেষ দিকে তেমন দর উঠছিল না। কৃষ্ণসায়রের অন্যতম তত্ত্বাবধায়ক, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ষোড়শীমোহন দাঁ বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে মাছ চাষের দরপত্রে আট লক্ষ টাকার বেশি উঠছে না বলে আমায় জানিয়েছিলেন অছি পরিষদের প্রাক্তন সম্পাদক দেবাশিস তিওয়ারি। তাই ওই টাকাতেই আমাকে রাজি হতে হয়েছে।”
চেষ্টা করেও দেবাশিসবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। অপর প্রাক্তন সম্পাদক অরূপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পাঁচ বছরের মাছ চাষের জন্য জন্য দরপত্র নেওয়া হয়। শেষ বার যিনি দরপত্রের মাধ্যমে বরাত পেয়েছিলেন, তিনি পরে দু’বছর মেয়াদ বাড়াতে চান। আমরা তাঁকে বছরে অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা করে দিতে বলি।” তবে দরপত্রে আট-সাড়ে আট লক্ষের বেশি যে দর ওঠেনি তা তিনি মেনে নিয়েছেন।
কৃষ্ণসায়রের ছবিটি তুলেছেন রানা সেনগুপ্ত।
অছি পর্ষদের নবনিযুক্ত সম্পাদক কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এত বিশাল একটা জলাশয়ে মাছ চাষের জন্য এত কম টাকা কেন উঠছে, তা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন ছিল। কেন বারবার এক জনই দরপত্র মারফত বরাত পাচ্ছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। আমরা জানতাম, অনেকে বেশি টাকা দিয়ে বরাত পেতে চান। কিন্তু ‘খোলা দরপত্র’ না ডাকার কারণে তাঁরা নথিপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ পেতেন না। এ বার খোলা দরপত্র হতেই বেশি দর উঠেছে।”
রাজ্যের কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী তথা স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আমরা দরপত্র চাওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে চেয়েছিলাম। আশা ছিল, যথেষ্ট দর উঠবে। তাই হয়েছে।” তাঁ দাবি, “বাম আমলে এই জলাশয়ের দরপত্র নিয়ে যে প্রচুর দুর্নীতি হয়েছিল, তা এই ঘটনা থেকেই প্রমাণ হয়েছে। যদি তা না হত, তা হলে তো আগেই দর উঠত!” বিশ্ববিদ্যালয়ের সিপিএম নেতা সম্বরণ প্রামাণিক অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি পাল্টা বলেন, “যাঁর থেকে সর্বোচ্চ দর পাওয়া যেত, তাঁকেই জলাশয়ের দায়িত্ব দেওয়া হত। এর মধ্যে দুর্নীতির কী আছে?”
গত ১ মার্চ কৃষ্ণসায়রে মাছ চাষের জন্য দরপত্র চাওয়া হয়েছিল। ২০ জন দরপত্র পাঠান। দেখা যায়, সর্বোচ্চ ৩১ লক্ষ টাকা দর দিয়েছেন হুগলির শ্রীরামপুরের গৌতম ঘোষ। যিনি এত দিন মাছ চাষ করে এসেছেন, বর্ধমানের সেই দেবাশিস বিশ্বাস দর দিয়েছেন ২৭ লক্ষ টাকা। বরাত পেয়েছেন গৌতমবাবু। কিন্তু তিনি আবার গত কৃষ্ণসায়র অছি পরিষদের সম্পাদককে বৃহস্পতিবার চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, অত দূর থেকে তাঁর পক্ষে মাছচাষ বা জলাশয় দেখভাল করা সম্ভব নয়। তাতে অছি পরিষদ সমস্যায় পড়েছে।
কল্যাণবাবু বলেন, “দরপত্রের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা দেবাশিসবাবুকে আমরা বলব দর একটু বাড়িয়ে জলাশয়ের দায়িত্ব নিতে।” দেবাশিসবাবু এ বার এত দর হেঁকেছিলেন কী ভেবে? তিনি নিজে এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে রবিরঞ্জনবাবুর দাবি, “এ বার খোলা দরপত্রে যে আর কম টাকায় কাজ হব না, সেটা সবাই বুঝেছিলেন। তাই বেশি দর উঠেছে।”
ফলে, ঘুরপথে সম্ভবত বরাত পেতে চলেছেন সেই দেবাশিসবাবুই। যদিও এ বার তাঁর খরচ পড়ছে তিন গুণেরও বেশি। রবিরঞ্জনবাবু বলেন, “এই টাকার একাংশ আমরা বর্ধমান শহরের উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.