অবৈধ কয়লা কারবারের রমরমা কমায় টান পড়েছে পকেটে। তাই এক সময়ে ওই কারবারে যুক্ত অনেকে বেছে নিয়েছে নানা অপরাধের পথ। দুর্গাপুরে একটি বাড়ি থেকে অস্ত্রশস্ত্র-সহ সাত জন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতারের পরে এমনটাই দাবি পুলিশের।
শনিবার ইস্পাতনগরীর বি-জোনের রাজেন্দ্রপ্রসাদ অ্যাভিনিউয়ে একটি বাড়ি থেকে সাত জনকে ধরে পুলিশ। তাদের কাছে থেকে একটি ইমপ্রোভাইজড পাইপগান, একটি নাইন এমএম পিস্তল, ৫ রাউন্ড কার্তুজ ও ১০টি তাজা বোমা মেলে। এ ছাড়া পাওয়া যায় ‘প্রেস’ স্টিকার সাঁটানো একটি গাড়ি। ধৃতদের এক জনের বাড়ি দুর্গাপুরে। বাকিরা বিহার, ঝাড়খণ্ড ও উত্তরপ্রদেশের নানা এলাকার বাসিন্দা। দুর্গাপুর থানার ওসি অরিজিৎ দাসগুপ্তের নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়। পুলিশের দাবি, ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, সিটি সেন্টারের একটি গয়নার দোকানে ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল তারা। তাদের দলের পাণ্ডার নাম রাকেশ সিংহ। সে-ই তাদের ডাকাতির জন্য জড়ো করেছিল। বিহারের মুঙ্গের থেকে আরও কিছু অস্ত্রশস্ত্র এনে দেওয়ারও কথা ছিল রাকেশের। সে জন্যই তারা অপেক্ষা করছিল। |
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিহারের সিওয়ানের বাসিন্দা রাকেশ এক সময়ে কয়লা মাফিয়া রাজু ঝায়ের সহকারী ছিল। গত বছর জুলাইয়ে রানিগঞ্জ থেকে রাজু ঝাকে গ্রেফতার করা হয়। খনি অঞ্চলে প্রায় দেড় দশক ধরে অবৈধ কয়লার কারবারে যুক্ত ছিল রাজু ঝা। দুর্গাপুরের বিধাননগরে থাকতে শুরু করে রাজু। শহরে বকলমে নানা ব্যবসাও শুরু করে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। রাজুর কারবারে প্রধান সহযোগী ছিল রাকেশ। কয়লা পাচারের অভিযোগে সে পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছে। রাজুকে গ্রেফতার করে কোর্টে তোলার সময়ে দুর্গাপুর আদালত চত্বরে তাকে উপস্থিত থাকতেও দেখা গিয়েছে। তবে কয়লা মাফিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযান জারি থাকায় রাকেশ গা ঢাকা দেয় বলে পুলিশ জানায়।
পুলিশ জানিয়েছে, রাজু ঝা ধরা পড়ার পরে রাকেশের রোজগারে টান পড়তে শুরু করে। তা নিয়ে দু’জনের মধ্যে মনোমালিন্যও হয়। তার পরেই রাকেশ অন্য অপরাধের পথ বেছে নেয়। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা স্বীকার করেছে, ২৫ জানুয়ারি সিটি সেন্টারের একটি বিমা সংস্থার অফিসে কয়েক লক্ষ টাকা ডাকাতির ঘটনায় জড়িত তারা। প্রায় একই সময়ে বিধাননগরেও লক্ষাধিক টাকা লুঠ করেছিল তারা।
পুলিশ আরও জানায়, রাকেশ গাড়িতে ‘প্রেস’ স্টিকার সাঁটিয়ে ঘুরে বেড়াত। তবে গাড়িতে নম্বর প্লেট ও কোনও কাগজপত্র না থাকায় সেটির মালিকের খোঁজ মেলেনি। সিটি সেন্টার এলাকায় রাকেশের খোঁজে তল্লাশি চালানো হয়েছিল। পুলিশের একটি দল তার খোঁজে সিওয়ান গিয়েছিল। তার মোবাইল ফোনের টাওয়ার চিহ্নিত করে খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সে সব ক’টি মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে বলে জানায় পুলিশ।
দুর্গাপুরের এডিসিপি শুভঙ্কর সিংহ সরকার জানান, অবৈধ কয়লা কারবারে টান পড়ার জন্যই এই সব লোকজন নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বলে তাঁদের প্রাথমিক অনুমান। রাকেশকে শীঘ্রই ধরে ফেলা হবে বলে তাঁর আশ্বাস। |