জমি নিয়ে বিবাদের জেরে বাড়িতে চড়াও হয়ে এক বধূকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তাঁর তিন প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে। মালদহের রতুয়ার পলাশবোনা এলাকায় ওই বধূর স্বামী এর পরে স্থানীয় পুকুরিয়া ফাঁড়িতে গেলেও পুলিশ তাঁর অভিযোগ নিতে চায়নি বলে দাবি। মহিলার স্বামীর দাবি, “রবিবার শেষ পর্যন্ত পুলিশ অভিযোগ নেয়। কিন্তু তার পরে দুষ্কৃতীরা এসে ট্রাক্টর চালিয়ে আমার বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ট্রাক্টরে করেই বাড়ির সব জিনিসপত্র নিয়ে চলে গিয়েছে।” অত্যন্ত দরিদ্র ওই পরিবার এখন নিরাশ্রয়।
জেলার এসপি জয়ন্ত পাল বলেন, “ভাঙচুর ও লুঠপাট এবং ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। তাই দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে পুলিশ প্রথমে অভিযোগ নিতে চায়নি বলে যে দাবি উঠেছে, তা-ও খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।” ওই বধূ রতুয়ার আড়াইডাঙা হাসপাতালের চিকিৎসাধীন। পুলিশ সুপার বলেন, “ওই মহিলার জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তেরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের ধরতে তল্লাশি চলছে।” ইতিমধ্যে এই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোরও। ওই পরিবারটি সিপিএমের সমর্থক বলে দাবি করে এলাকার আরএসপি বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সীর দাবি, “কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই ধর্ষণ ও বাড়ি ভাঙচুর করেছে।”
তবে এলাকার প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক তথা বর্তমানে মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রর দাবি, “ওই পরিবারটি কংগ্রেস সমর্থক ছিল। যা ঘটেছে, তা সাজানো বলে মনে হচ্ছে।” পুলিশ সুপার অবশ্য বলেন, “জমি নিয়ে বিবাদই গোটা ঘটনার প্রধান কারণ বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ত দফতরের জমিতে পাকা রাস্তার ধারে গত ২৫ বছর ধরে বাড়ি করে বসবাস করছেন পেশায় ভ্যানচালক ওই বধূর স্বামী। বাড়ির পাশে আরও ৫ কাঠা জায়গাও তাঁর ‘দখলে’। তার পিছনেই রয়েছে প্রতিবেশী গ্রাম কুমারগঞ্জের বাসিন্দা বাক্কার আলির জমি। একে অপরের জমি ‘দখলে’র অভিযোগকে কেন্দ্র করে দু’জনের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরেই বিবাদ চলছে। শনিবার রাতে বাক্কার আলি তাঁর এক দূর সম্পর্কের ভাই মজলিস আলি ও মহব্বত আলিকে নিয়ে ওই বধূর বাড়িতে চড়াও হয় বলে
অভিযোগ। বধূটির স্বামীর কথায়, “সে সময় বাড়িতে আমার স্ত্রী ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। স্ত্রী-র কাছ থেকে শুনেছি, দুষ্কৃতীদের এক জন ওর মুখে কাপড় গুঁজে ধরে। বাকি দু’জনে মিলে আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে।” এ দিন সকালে বধূটির স্বামী যখন পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে যান, তখনই তাঁদের বাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। বধূটির স্বামী বলেন, “আমরা কেউ বাড়ি ছিলাম না। তা ছাড়া, এলাকার বাসিন্দারা ওদের ভয় করে। তাই কেউ ওদের বাধা দিতে চাননি। নয় ছেলেমেয়ে নিয়ে আমরা এখন কোথায় থাকব জানি না।”
গত সেপ্টেম্বরে উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরে এক মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, মহিলার পরিবার এই ব্যাপারে পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার পরে দুষ্কৃতীরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিতে শুরু করে। তার পরেও মহিলার পরিবার অভিযোগ প্রত্যাহার না করায় ওই পরিবারের এক শিশুকে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ। গত ২৭ মার্চ শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় পুলিশের এক সাব ইনস্পেক্টর দুষ্কৃতীদের মদত দিয়েছেন বলেও গোয়ালপোখর থানায় অভিযোগ করেছেন শিশুর বাবা। |