আধুনিক মিটার বা তার আবেদনপত্র না-থাকায় রবিবার থেকে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় কয়েক হাজার ট্যাক্সি ‘বেআইনি’ হয়ে গেল। হাইকোর্ট ৩১ মার্চের মধ্যে প্রতিটি ট্যাক্সিতে এ রকম মিটার লাগানোর নির্দেশ দিয়েছিল। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, মোট ৩৪ হাজার ট্যাক্সির অর্ধেকেও নতুন মিটার বসেনি। এর মধ্যে অন্তত সাত হাজার ট্যাক্সি নতুন মিটারের আবেদনও করেনি বলে পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর। মালিক-সংগঠনের অবশ্য দাবি, সাত হাজার ট্যাক্সির জন্য এমন মিটারের আবেদন করা আছে পরিবহণ দফতরে। ‘বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি বিমল গুহ জানান, ‘অবৈধ’ হয়ে যাওয়া অধিকাংশ ট্যাক্সিই সোমবার থেকে পথে নামবে না।
এক-একটি ট্যাক্সিতে এক-এক রকমের ভাড়া আদায় হচ্ছে, এই অভিযোগ এনে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী প্রদীপ কুমার একটি জনস্বার্থ মামলা করেন। এর প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি জয়নারায়ণ পটেল এবং সম্বুদ্ধ চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ ৩১ মার্চের মধ্যে প্রতিটি ট্যাক্সিতে ইলেকট্রনিক মিটার ও প্রিন্টার লাগানোর নির্দেশ দেয়। গত কয়েক মাসে মালিকদের একাংশ সেই নির্দেশকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেননি বলে অভিযোগ। আইনি নির্দেশ পুনর্বিবেচনার জন্য তাঁরা ফের আদালতে যান। কিন্তু শুক্রবার আদালত জানিয়ে দেয়, ৩১ মার্চের মধ্যেই এই মিটার লাগাতে হবে।
২০০৮-এর পর থেকে পর্যায়ক্রমে প্রায় ১৭ হাজার ট্যাক্সিতে আধুনিক মিটার লাগানো হয়েছে। রবিবার বিমলবাবু এই দাবি করে বলেন, “পরিবহণ বিভাগে আবেদন করেছেন হাজার দশেক ট্যাক্সিমালিক। এর মধ্যে সাত হাজার জন আবেদন করেছেন কলকাতার মোটর ভেহিক্লস বিভাগ অর্থাৎ পিভিডি-তে।” এ দিকে, শনিবার বহু ট্যাক্সিমালিক নয়া মিটারের আবেদন জমা দিতে গেলে পরিবহণ বিভাগ তা নিতে যথেষ্ট উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ বিমলবাবু।
পিভিডি-তে নথিভুক্ত কত ট্যাক্সির মধ্যে ক’টিতে এ রকম মিটার লাগানো আছে, এ সব নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি পিভিডি-র অধিকর্তা। তাঁর বক্তব্য, “আমি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলি না।” দক্ষিণ ২৪ পরগনার আঞ্চলিক পরিবহণ অফিসার চপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই জেলায় নথিভুক্ত ট্যাক্সির সংখ্যা প্রায় ৩৪০০। হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট রায় দেওয়ার আগেই বেশ কিছু ট্যাক্সিতে এ রকম মিটার লাগানো হয়। পরে আলিপুর থেকে মঞ্জুর হয়েছে, এমন ৮৮০টি মিটার। শনিবার আমরা আরও তিন শতাধিক আবেদন মঞ্জুর করেছি।”
পুলিশ কি তা হলে আজ, সোমবার থেকে নয়া মিটার-বিহীন ট্যাক্সিগুলি ধরার জন্য বিশেষ অভিযানে নামবে? ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক-১) দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এখনও পর্যন্ত বিশেষ অভিযানের কোনও কথা হয়নি। হাইকোর্টের নির্দেশ খতিয়ে পরিবহণ দফতরের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পরিবহণ-কর্তারা জানান, মিটারের আবেদন করে ট্যাক্সিমালিকের হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। চপলবাবু বলেন, “আবেদন মঞ্জুর করার পরে সরকার-স্বীকৃত চারটি সংস্থার যে কোনওটি থেকে মালিকের মিটার কেনার কথা। এর পরে সেই ট্যাক্সি নিয়ে মালিককে আসতে হয় পরিবহণ দফতরে। ট্যাক্সির মিটার পরীক্ষা করার পরে সিল করে এক বছরের অনুমতি দেওয়া হয়।” |