বেহালায় ঘিঞ্জি কারখানা ছাই, প্রশ্ন নজরদারি নিয়ে
রও একটি অগ্নিকাণ্ড আরও এক বার দেখিয়ে দিল, কলকাতা পুরসভা কতটা ‘অকর্মণ্য’। ঘিঞ্জি এলাকায় যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা দাহ্যে ঠাসা কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দূরে থাক, তাদের বিপজ্জনক উপস্থিতির কথা তারা টেরই পায় আগুন লাগার পরে। রবিবার সকালে কার্যত খোদ মেয়রের খাসতালুকে, বেহালার চণ্ডীতলার ঘিঞ্জি এলাকায় একটি কাগজের কার্টন তৈরির কারখানায় আগুন তাই ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, নজরদারির ছবিটা ঠিক কী রকম। এবং এ ক্ষেত্রে আগুন লাগার পরেই পুরসভা জানতে পারল, দাহ্যে ঠাসা কারখানাটি বহাল তবিয়তে চলছেই শুধু নয়, কারখানার আশপাশের রাস্তাও দমকলের গাড়ি ঢোকার পক্ষেও যথেষ্ট অপরিসর।
কেন অগ্নিকাণ্ড না হওয়া পর্যন্ত কারখানাগুলি কতটা বিপজ্জনক ছিল, তা টের পাচ্ছে না পুরসভা? গত কয়েক বছরে এই ঘিঞ্জি এলাকার কারখানাগুলিকে সতর্ক করতেই বা কী ভূমিকা নিয়েছে তারা?
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “যেখানে আগুন লেগেছে, সেটা একটা শিল্পাঞ্চল। অনেক বছর ধরে কারখানাগুলো রয়েছে। আমরা বারবার তাদের সতর্ক করেছি। বলেছি অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রাখার জন্য। কারখানাগুলোর লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের ক্ষেত্রেও পুরসভা সতর্ক। যে কারখানায় আগুন লাগে, তার ফায়ার লাইসেন্স ছিল কি না, সেটা সোমবারই খতিয়ে দেখা হবে।”
ওই কারখানার ভিতরে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা তেমন ‘সন্তোষজনক’ বলে মনে করছে না দমকল। দমকলের ডিভিশনাল ফায়ার অফিসার অভিজিৎ পাণ্ডে বলেন, “কারখানার আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নিয়ে বিশদে খোঁজ নিচ্ছি। তবে আমাদের বেশ সমস্যায় পড়তে হয়েছে। সরু রাস্তায় গাড়ি ঢুকতেই অসুবিধা হয়। জলের সমস্যাও ছিল। এলাকার একটি পুকুর থেকে জলের ব্যবস্থা করা হয়।”
সে ক্ষেত্রে কি আদৌ এমন কারখানার ফায়ার লাইসেন্স থাকার কথা? দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, “ওই কারখানার দমকলের ছাড়পত্র আছে কি না, খতিয়ে দেখা হবে। যদি লাইসেন্স থাকে, তবে তা কে দিয়েছে বা কে পুনর্নবীকরণ করেছে, তা তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ধোঁয়ার গ্রাসে কারখানা। চলছে দমকলের অগ্নি-যুদ্ধ। রবিবার, বেহালায়। নিজস্ব চিত্র
রবিবার দুপুরের অগ্নিকাণ্ডে কেউ হতাহত না হলেও গোটা কারখানাটি প্রায় ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। ঘিঞ্জি এলাকার অপরিসর রাস্তায় ঢুকতে দমকলকে বেগ পেতে হয়। ১৩টি ইঞ্জিন তিন ঘণ্টার চেষ্টায় পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। ছুটির দুপুরে বন্ধ কারখানায় কী ভাবে আগুন লাগল, তা নিয়ে ধন্দে দমকল। এই আগুনের পিছনে কারও ‘অপকীর্তি’ আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ কারখানা থেকে কালো ধোঁয়া বেরোতে দেখেন এলাকার মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা রাজেশ মান্না বলেন, “ধোঁয়া দেখেই আমরা কারখানার দিকে ছুটে আসি। দেখি দাউদাউ করে জ্বলতে জ্বলতে টিনের চালগুলো ভেঙে পড়ছে।”
কাগজের কারখানাটির গা-ঘেঁষা বেশ কয়েকটি ছোট-বড় কারখানা। চারপাশে গজিয়ে উঠেছে বস্তি। কর্মীদের থাকার জায়গাও ওই তল্লাটেই। স্থানীয় বাসিন্দারাই প্রথমে আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগিয়েছিলেন। দমকল ছাড়া ঘটনাস্থলে আসে বেহালা থানার পুলিশ ও কলকাতার বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। ঘিঞ্জি এলাকায় আগুন লাগায় আতঙ্ক ছড়ায়। কারখানার এক কর্মী রাকেশ মিশ্র বলেন, “আমি পাশের কোয়ার্টার্সে একাই থাকি। দুপুরে একটু বেরিয়েছিলাম। খবর পেয়ে ছুটে আসি। তবে আগুন শেষ পর্যন্ত কোয়ার্টার্স পর্যন্ত ছড়ায়নি।”
কারখানার সেল্স এগ্জিকিউটিভ বৈকুণ্ঠনাথ মিশ্র বলেন, “আমাদেরই এক সহকর্মী কারখানায় বিকট শব্দ পেয়ে ভিতরে গিয়েছিলেন। তিনি দেখেন টিউবলাইট ফেটে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। সেই সঙ্গে কারখানার কয়েকটা কাগজের রিলে আগুন ধরে গিয়েছে। ওই কর্মীই আমাদের খবর দেন।” বৈকুণ্ঠবাবুর অবশ্য দাবি, “কারখানায় ১৫টা আগুন নেভানোর যন্ত্র ছিল। কিন্তু কর্মী না-থাকায় তা ব্যবহার করা যায়নি। কেউ কিছু করার আগেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে।”
এ দিন দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান ঘটনাস্থলে এসে বলেন, “৩৪ বছরের বাম শাসনে অপরিকল্পিত ভাবে শহরটা বেড়ে ওঠার ফলেই এই অবস্থা। আগুন লাগার পিছনে অন্য কোনও রহস্য আছে কি না, সেটাও দেখছি।” তবে বাম আমলকে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করা হলেও এই পরিস্থিতি আরও কত বছর চলবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.