শিল্প-সভায় মমতার প্রশংসা
রাজ্যকে অর্থসাহায্য নিয়ে রা কাড়লেন না প্রণব
কই মঞ্চে বসে আছেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, যিনি এই সভাতেই আরও এক বার রাজ্যের ঋণ নিয়ে আর্জি জানিয়েছেন কেন্দ্রের কাছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনা তৈরির জন্য রাজ্য সরকারের প্রশংসা করলেও, আর্থিক সাহায্য দেওয়া বা বিপুল ঋণের সুদ সাময়িক ভাবে মকুব করা নিয়ে রা কাড়লেন না এ দিন। যদিও সম্প্রতি বাজেট বিতর্কের সময়েই সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি কবুল করেন, রাজ্যের আর্থিক সঙ্কট আছে এবং তা কাটাতে কী করা যায়, তা খতিয়ে দেখছে কেন্দ্র। তাঁর এই কথায় প্রত্যাশা তৈরি হয় রাজ্যে। কিন্তু এ দিন তিনি এই নিয়ে কোনও প্রতিশ্রুতি দেননি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নতুন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরে যে রাজ্যে বিনিয়োগ সম্ভাবনা বেড়েছে, সে কথা রবিবার কলকাতায় অ্যাসোচেমের সভায় উল্লেখ করেন প্রণববাবু। যদিও তিনি রাজ্যের শিল্পায়নের ব্যাপারে যে সব তথ্য দেন, তার কিছু বিগত সরকারের আমলের। প্রণববাবু জানান, ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে ৯০০টি প্রকল্পে মোট বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে ৬ লক্ষ ১১ হাজার কোটি টাকার। যা সারা দেশের মোট বেসরকারি লগ্নির ৪.৪ শতাংশ। আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আসার পর এই রাজ্যে ৫৮ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। একই সঙ্গে প্রণববাবু জানান, কৃষি ক্ষেত্রেও সাম্প্রতিক কালে রাজ্য যথেষ্ট উন্নতি করেছে। রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিস্থিতিও বিনিয়োগ টানার উপযোগী।
শহরে অ্যাসোচ্যামের সভায়। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
এই সভাতেই আরও এক বার ঋণের বোঝা লাঘবে রাজ্যকে সাহায্য করার আর্জি জানান পার্থবাবু। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ যে ঋণের সমস্যায় পড়েছে, তার জন্য নতুন সরকার দায়ী নয়। আমি আশা করব, এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে সাহায্য করবে।” বস্তুত, ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আর্থিক সাহায্য ও ঋণ স্থগিত রাখা নিয়ে দিল্লির কাছে দরবার করছেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, দু’লক্ষ কোটি টাকার উপরে যে ঋণ রয়েছে রাজ্যের মাথার উপর, তার দায় নতুন সরকারের নয়। অথচ এই ঋণের সুদ গুনতে গুনতে টান পড়ছে ভাঁড়ারে, ব্যাহত হচ্ছে উন্নয়নের কাজ। তাই বছরে সুদ-আসল মিলিয়ে যে ২২ হাজার কোটি টাকা গুনতে হয়, তা আগামী তিন বছরের জন্য স্থগিত রাখুক কেন্দ্র। তাতে হাতে কিছুটা সময় পাওয়া যাবে। তার মধ্যেই নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারবে নতুন সরকার। এই আর্জি নিয়ে তিনি নিজে যেমন দরবার করেছেন, তেমনই তাঁর সরকারের শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রীরাও বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। সম্প্রতি মমতা যে দিল্লি গিয়েছিলেন, তার আগে তাঁর অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র রাজধানীতে গিয়ে মনমোহন সিংহের কাছে একই অনুরোধ জানিয়ে এসেছিলেন। প্রণববাবু এর আগে বলেছেন, কোনও রাজ্যকে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ দেওয়ার এক্তিয়ার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর নেই। এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীই শুধু সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে অতি সম্প্রতি বাজেট বিতর্কের জবাবি বক্তৃতায় অবশ্য তিনি রাজ্যের আর্থিক সঙ্কটের কথা কবুল করেন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই মুহূর্তে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও পরিবর্তিত। কারণ, উত্তরপ্রদেশে ভোটে আশানুরূপ ফল করতে পারেনি কংগ্রেস। মুলায়ম সিংহকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করে তাঁদের সঙ্গে জোট পোক্ত করার বিষয়টিও আপাতত ভবিষ্যতের গর্ভে। বরং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মমতাকে কংগ্রেসের খুবই প্রয়োজন। সে দিক থেকে এ দিন পার্থবাবুর সামনে আর্থিক সাহায্য বা সুদ স্থগিত করা নিয়ে প্রণববাবু কিছু বলবেন, এটাই ছিল অনেকের আশা। কিন্তু কোনও বিষয়েই এ দিন তিনি রা কাড়েননি।
অবশ্য বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি নিয়ে মমতা সরকারের প্রশংসার পাশাপাশি শিল্পায়নের ক্ষেত্রে বিগত বাম সরকারের ব্যর্থতার প্রতি কটাক্ষ করেও জোট শরিককে খুশি করতে চেয়েছেন প্রণববাবু। তিনি বলেন, শিল্পের প্রভূত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আর্থিক বৃদ্ধির ব্যাপারে অতীতে দীর্ঘ সময় ধরে জাতীয় গড়ের থেকে পিছিয়ে ছিল পশ্চিমবঙ্গ।
এ সবের পাশাপাশি রাজ্যের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের আর্জি মেনে এ দিনই বিকেলে বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্সের আর একটি সভায় গয়নার উপর প্রস্তাবিত উৎপাদন শুল্ক কমানোর ইঙ্গিত দেন প্রণববাবু। সম্প্রতি স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা মমতার সঙ্গে দেখা করে এই ব্যাপারে আর্জি জানান। মমতাও সেই বার্তা পৌঁছে দেন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। বাজেটে সোনার উপর বিভিন্ন কর বসানোর ফলে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা যে সমস্যায় পড়েছেন, সে কথা তিনি প্রণবাবুকে চিঠি দিয়েছেন জানান। এ দিন সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করেন পাথর্র্বাবু। সমস্যার সুরাহা করার জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে তিনি আর্জি জানান। বেঙ্গল চেম্বারের সভায় প্রণববাবু বলেন, “সোনার গয়নার উপর বাজেটে উৎপাদন শুল্ক বসানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে গয়না ব্যবসায়ীদের সমস্যা হবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। আমি এটি নিয়ে যথাসময়ে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।”
তবে অর্থমন্ত্রী মনে করেন, সোনা একটি ‘ডেড অ্যাসেট’। তাই সোনায় বিনিয়োগের ব্যাপারে তিনি লগ্নিকারীদের নিরুৎসাহিত করতে চান বলে এ দিন মন্তব্য করেন প্রণববাবু। উপরন্তু তিনি বলেন, “তেলের পর সোনা আমদানি করার জন্যই দেশের বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয় বেশি। সোনার বদলে শেয়ারে লগ্নি করার ব্যাপারে উৎসাহ দিতে এ বার বাজেটে আমি খুচরো লগ্নিকারীদের কর ছাড়ের ব্যবস্থা করেছি।” সোনার গয়নার উপর উৎপাদন শুল্ক বাসানোর প্রস্তাবটি ভেবে দেখার প্রতিশ্রুতি দিলেও সোনা আমদানির উপর প্রস্তাবিত শুল্ক কমানোর সম্ভাবনা তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.