মূর্তি কিনতে এসেই ফাঁদে, জানালেন ৪ তরুণ-তরুণী
সোনার মূর্তি দেওয়ার নাম করে ছিনতাই করার উদ্দেশ্য ছিল দুষ্কৃতীদের। পূর্বস্থলী পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিতে এ কথাই জানাল পূর্বস্থলী ২ ব্লকের মাজিদা নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয় থেকে উদ্ধার হওয়া চার নেপালি তরুণ-তরুণী। আদালতে রবিবার জবানবন্দি দেওয়ার পরে তাঁরা ফিরে গেলেন নিজেদের এলাকায়।
শুক্রবার মাজিদা গ্রামের ওই বিদ্যালয়ে দুপুর সাড়ে বারোটায় ক্লাস চলাকালীন আচমকা ঢুকে পড়েন দু’জন মহিলা-সহ চার নেপালি তরুণ-তরুণীর একটি দল। এক তরুণের মাথায় জখমের চিহ্ন ছিল। ভাঙা হিন্দিতে তাঁরা স্কুলের শিক্ষকদের জানান, দুষ্কৃতীদের কবলে পড়েছেন তাঁরা। তাঁদের মেরে ফেলতে চাইছে ওরা। কথাবার্তা চলাকালীন স্কুলটিতে মোটরবাইক নিয়ে হাজিরও হয় ওই চার দুষ্কৃতী। বোমা ও পিস্তল দেখিয়ে ওই তরুণ-তরুণীদের তাদের হাতে তুলে দেওয়ার হুমকি দিতে থাকে শিক্ষকদের। শিক্ষকরা তাদের পাল্টা জানান, ওই দলটিকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে স্কুল-চত্বরে স্থানীয় মানুষজনের ভিড় জমে যায়। বেগতিক দেখে পালায় দুষ্কৃতীরা। থানায় খবর দেওয়া হলে পূর্বস্থলী থানার পুলিশ এসে ওই দলটিকে স্কুল থেকে থানায় নিয়ে যায়।
দলটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, বছর ত্রিশের দুই তরুণীর নাম জুমিমায়া কুমারী ও কমলা লামা। অপেক্ষাকৃত কম বয়সী অন্য দুই তরুণের নাম নবরাজ ওরেল ও ধনবাহাদুর লিম্ব। তাঁরা চার জনই ঝাপা থানার কাঁকড়ভিটা এলাকার বাসিন্দা। দলটির তরফে কমলা লামা পূর্বস্থলী থানায় ওই চার দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও প্রাণনাশের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেছেন।
কালনা আদালত চত্বরে চার তরুণ-তরুণী। নিজস্ব চিত্র।
কিন্তু কী ভাবে ওই চক্রের শিকার হলেন তাঁরা?
নবরাজ পুলিশকে জানান, মাস কয়েক আগে কেরলে তার সাথে নদিয়ার ভোলা শেখ নামের এক রাজমিস্ত্রির পরিচয় হয়। পরে নবরাজের বাড়িতেও গিয়েছিলেন ভোলা। তার সূত্রেই নবরাজের সঙ্গে নাসির শেখ নামে এক যুবকের আলাপ হয়। নাসির ভোলাকে জানান, তাদের এলাকায় কম দামে সোনার মূর্তি বিক্রি হয়। এ কথা শুনে অন্য তিন জনও সস্তায় ওই মূর্তি কিনতে আগ্রহী হন। সেই মতো,শুক্রবার তাঁরা বাসে করে প্রথমে কৃষ্ণনগরে আসেন। সেখান থেকে যায় নবদ্বীপ। তার পরে নাসিরের নির্দেশ মতো তাঁরা বেলের হল্ট স্টেশনের ট্রেন ধরে। বেলের হল্ট স্টেশন থেকে তাঁদের নিয়ে যাওয়ার জন্য দু’টি মোটরবাইক অপেক্ষা করছিল। বাইকে চাপিয়ে মাজিদায় নাসিরের বাড়িতে নিয়ে আসা হয় তাঁদের। সেখানে ডাল, রুটি, ভুজিয়া দিয়ে তাঁদের ‘যথেষ্ট আপ্যায়ন’ করেন নাসিরের বাড়ির লোকজন। এমনকী, এক জায়গায় গোল করে বসিয়ে তাঁদের খাবার পরিবেশনও করে তারা।
কমলা দেবী বলেন, “সবে মাত্র খাবার মুখে দিয়েছি। দেখি, বেশ কয়েকজন লোক আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। নাসিরকে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, বাইরে থেকে আসায় তাঁদের উৎসুক চোখে দেখছেন স্থানীয় মানুষ। এ কথা বলতে না বলতেই আচমকা দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিন জন দুষ্কৃতী রিভলবার দেখিয়ে সঙ্গে থাকা টাকা পয়সা বের করে দিতে বলে। ওদের বারবার অনুরোধ করি, প্রাণে না মারতে। বাড়িতে আমার দু’টো ছোট ছেলেমেয়ে আছে। কিন্তু ওরা থামছিল না। মরিয়া হয়ে দরজা খুলেই বাইরে বেরিয়ে ছুট লাগাই। অন্যরাও আমার সঙ্গে দৌড়য়। পিছনে ধাওয়া করে নাসিরের লোকজন। রিভলবারের বাঁটে মাথা ফেটে যায় ধনবাহাদুরের। দৌড়তে দৌড়তে রাস্তায় স্কুলটি দেখতে পাই। প্রাণ বাঁচাতে সেখানেই ঢুকে পড়ি।”
পুলিশ জানিয়েছে, ওই ধরনের প্রতারণা চক্র বহু বছর ধরেই কালনা ও পূর্বস্থলীতে সক্রিয়। এদের হয়ে কাজ করে বহু এজেন্ট। তারা সস্তায় সোনার মূর্তি দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু সোনার বদলে দেয় পিতলের মূর্তি। অথবা মূর্তি দেওয়ার নাম করে কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় ডেকে নিয়ে গিয়ে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এই প্রতারণার শিকার অনেকেই হয়েছেন। কিন্তু লজ্জায় বা ভয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান না তাঁরা। মহকুমা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “পূর্বস্থলীর মাজিদা এলাকায় যে চারজনের নামে অভিযোগ হয়েছে, তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। কিন্তু তারা এখন বাড়ি ছাড়া। তাদের খোঁজ চলছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.