অসুস্থ এক রোগিণীকে পরীক্ষা করার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে ইঞ্জেকশন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই চিকিৎসক চিরকুটে সেকথা লিখেও দিয়েছিলেন। অভিযোগ, নার্সরা অসুস্থ ওই রোগিণীকে সেই ইঞ্জেকশন না দিয়ে তাঁর ১০ দিন বয়সী পুত্র সন্তানকে দিয়েছেন। ওই অভিযোগকে কেন্দ্র করে শুক্রবার দুপুরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কালিয়াগঞ্জ স্টেট জেনারেল হাসপাতাল চত্বর। অভিযুক্ত নার্সদের শাস্তির দাবিতে এদিন প্রায় এক ঘন্টা ওই রোগিণীর পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ দেখান। রোগিণীর পরিবারের তরফে কালিয়াগঞ্জের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। পরে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তদন্তের আশ্বাস দিয়ে অভিযুক্ত নার্সদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বর্তমানে ওই রোগিণী ও তাঁর ১০ দিন বয়সী পুত্র সন্তানকে কালিয়াগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। কালিয়াগঞ্জের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলাইচন্দ্র রায় বলেন, “ওই রোগিণীর অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এই ঘটনায় কোনও নার্স দোষী প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের জানানো হয়েছে। চিকিৎসকরা শিশুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখেছেন। বর্তমানে সে ভালই রয়েছে।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কালিয়াগঞ্জের মোস্তাফানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের সাহাপুর এলাকার বাসিন্দা ছটুবালা রায় নামে ওই রোগিণী গত ২০ মার্চ কালিয়াগঞ্জ হাসপাতালে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। ছটুবালা দেবী এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছেন। গত ২১ মার্চ তিনি হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষা দেন। সন্ধ্যায় তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে বাড়িতে আচমকা শ্বাসকষ্ট শুরু হয় ছটুবালা দেবীর। পরিবারের লোকজন তাঁকে কালিয়াগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করান। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই রোগিণীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পর ইঞ্জেকশন দেওয়ার জন্য নার্সদের নির্দেশ দেন। ছটুবালার শাশুড়ি ভালো দেবী বলেন, “রাত দেড়টা নাগাদ কর্তব্যরত কয়েকজন নার্স শিশুটিকে দেখার পর তাঁদের মধ্যে একজন আচমকা শিশুটির গায়ে ইঞ্জেকশন দিয়ে দেন। আমি তাঁদের জিগ্যাসা করি আমার পুত্রবধূ অসুস্থ। আপানারা সুস্থ শিশুটিকে ইঞ্জেকশন দিলেন কেন? নার্সরা আমাকে কোনও জবাব না দিয়ে উল্টে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।” ঘটনার কথা এদিন সকালে জানাজানি হতেই ওই পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা হাসপাতাল চত্বরে অভিযুক্ত নার্সদের শাস্তির দাবিতে চেঁচামেচি জুড়ে দেন। খবর পেয়ে এরপর স্থানীয় কংগ্রেস নেতা ও চিকিৎসকরা সেখানে হাজির হন। এরপরই ছটুবালা দেবী ও তাঁর পরিবারের লোকজন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করে লিখিত অভিযোগ জানান। ছটুবালা দেবী বলেন, “নার্সরা আমার ইঞ্জেকশন ১০ দিন বয়সী পুত্র সন্তানের শরীরে দিয়েছেন। ইঞ্জেকশন দেওয়ার পর থেকেই আমার ছেলে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। দুধ খাওয়াও বন্ধ করে দেয়। ছেলের কিছু হয়ে গেলে তার দায় কে নেবে? নার্সদের কর্তব্যে গাফিলতির জন্যই এমন ঘটনা ঘটল।” এদিন দুপুরে ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের তৎপরতায় ওই শিশুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু হয়। কালিয়াগঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান তথা কংগ্রেস নেতা অরুণ দে সরকার বলেন, “রোগীদের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বরদাস্ত করব না। ব্লক স্বাস্থ্য দফতর ঘটনার তদন্ত করে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে সেই অপেক্ষায় রয়েছি। অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয় সেক্ষেত্রে অভিযুক্ত নার্সদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। না-হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।” |