মেদিনীপুরের বেসরকারি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পরে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছিল, বেসমেন্টে ওষুধের দোকান রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ আদালতে রিপোর্ট দিয়েছিল, শুধু ওষুধের দোকান নয়, বেসমেন্টে দু’টি স্টোররুমও রয়েছে। এরই মধ্যে দমকলের সংযোজন, বেসমেন্টে গ্যাস সিলিন্ডারও রাখা ছিল। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্যে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
কী বলছে দমকলের রিপোর্ট? জানা গিয়েছে, ঘটনার পরে মেদিনীপুর কোতয়ালি থানায় সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন দমকল দফতরের খড়্গপুরের ওসি রবীন্দ্রনাথ সর্দার। সংশ্লিষ্ট দফতরের মেদিনীপুরের ওসি দিলীপ ভৌমিক তখন অসুস্থ হয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসাধীন। ওই অভিযোগেই বলা রয়েছে, বেসমেন্টে গ্যাস সিলিন্ডার রাখা ছিল। তবে ক’টি, সেই সংখ্যার উল্লেখ করা হয়নি। পরে সংশ্লিষ্ট দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টরের কাছে যে রিপোর্ট পাঠানো হয়, সেখানেও সিলিন্ডার থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাহলে কেন পুলিশ এবং স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্টে বেসমেন্টে সিলিন্ডার থাকার কথা বলা হল না? দুই দফতরই এ ক্ষেত্রে নিরুত্তর। তাদের বক্তব্য, হাসপাতালের বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। তাই এ ক্ষেত্রে কিছু বলা সম্ভব নয়। এক সূত্রে খবর, দমকল দফতরের মেদিনীপুরের ওসি একটি সিলিন্ডার সরাতে গিয়েছিলেন। সেই সময়ই কালো ধোঁয়ার দাপটে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়।
গত ২১ মার্চ আগুন লাগে মেদিনীপুর শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে। সকালবেলাতেই রবীন্দ্রনগর এলাকার এই হাসপাতালের বেসমেন্টে আগুন লেগে যায়। ক্রমে কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় গোটা হাসপাতাল। সমস্যায় পড়েন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। প্রথমে স্থানীয়রাই উদ্ধারকাজ শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। ওই রাতে হাসপাতালের ৪ কর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। গত ২৬ তারিখ এঁদের সকলেরই জামিন হয়েছে।
এ দিকে, অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ ‘লঘু’ করতে ‘অতি সক্রিয়’ হয়ে উঠেছে পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলার আগেই হাসপাতালটি তড়িঘড়ি চালুর করার চেষ্টা হচ্ছে। যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস বলেন,“ এই অভিযোগ ঠিক নয়।” পুলিশও এই অভিযোগ মানতে নারাজ। এ দিকে, তিন দফতরের বক্তব্য কেন তিন রকম, তা-ও সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট নয়। আমরি-র ঘটনার পর পশ্চিম মেদিনীপুরের অন্য বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের পাশাপাশি এই হাসপাতালেও স্বাস্থ্য দফতরের পরিদর্শন হয়েছিল। পরে বিভাগীয় রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, বিধি মেনেই হাসপাতাল চলছে। লাইসেন্সের মেয়াদ রয়েছে চলতি বছরের ৪ জুলাই পর্যন্ত। সঙ্গে উল্লেখ করা হয়, বেসমেন্টে ওষুধের দোকান রয়েছে। কিন্তু, সেখানে স্টোররুম থাকার কথা বলা নেই। যদিও অগ্নিকাণ্ডের পর প্রাথমিক তদন্তের যে রিপোর্ট পুলিশ আদালতে দিয়েছে, তাতে বেসমেন্টে স্টোররুমের উল্লেখ রয়েছে। আর দমকলের রিপোর্টে তো বলা হয়েছে, সেখানে গ্যাস সিলিন্ডারও ছিল।
জেলা প্রশাসন বিষয়টিকে ‘গুরুত্ব’ দিয়েই দেখছে। ঘটনার পরই জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছিলেন জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত। পরে হাসপাতাল সম্পর্কিত আরও কিছু কাগজপত্র চেয়ে পাঠান জেলাশাসক। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার কালেক্টরেটে এসে কাগজপত্র জমা দেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র। দু’টি ফাইলে এই কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে। ফাইল দু’টি এখন জেলাশাসকের কাছে রয়েছে। জেলাশাসক বলেন, “মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছ থেকে কাগজপত্র পেয়েছি। সবদিকই খতিয়ে দেখছি।” ইতিমধ্যেই হাসপাতালে এসে একদফা তদন্ত করে গিয়েছে ফরেন্সিক দল। পুলিশ জানিয়েছে, প্রয়োজনে ফের তদন্তে আসতে পারেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। |