দু’দিন পেরিয়ে গেলেও বর্ধমানে আলোকচিত্রী-সাংবাদিকদের মারধরে অভিযুক্ত জুনিয়র ডাক্তারদের গ্রেফতার করলনা পুলিশ।
শুক্রবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানালেন, আইন আইনের পথে চলবে। বুধবার বিকেলে ওই মারধরের পরে রাতেই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন সাংবাদিকেরা। এর পরে গত দু’দিনে পুলিশের কেউ বর্ধমান শহরের কাছে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকা দুই আলোকচিত্রীর বয়ান নথিভুক্ত করেননি। তবে এ দিন দুপুরে বর্ধমান থানার এক সাব-ইনস্পেক্টর গিয়ে তাঁদের বয়ান নেন।
বিধানসভায় মেডিক্যাল কাউন্সিল বিল নিয়ে আলোচনার সময়ে ওই মারধরের প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বর্ধমানে সংবাদমাধ্যমের কাউকে কাউকে মারা হয়েছে। এফআইআর হয়েছে। তদন্ত চলছে। আইন আইনের পথে চলবে।” পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে নির্দিষ্ট করে দুই জুনিয়র ডাক্তারের নাম জানিয়েছিলেন সাংবাদিকেরা। তাঁরা এখনও অধরা। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের মাঝেই বিরোধীরা প্রশ্ন করতে থাকেন, কেন এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি? মমতা পাল্টা বলেন, “আপনারা ঠিক করে দেবেন না, কারা কারা গ্রেফতার হবে! বেশি কথা বলবেন না!”
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানানো হয়েছে, তারা ঘটনার তদন্ত শুরু করছে। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার তাপস ঘোষ বলেন, “অধ্যক্ষার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি গড়ে গোটা ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। |
জেলাশাসকের অফিসের সামনে সাংবাদিকদের অনশন। —নিজস্ব চিত্র |
শনিবার স্বাস্থ্য দফতরে রিপোর্ট পাঠানো হবে।” অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা ও আলোকচিত্রীদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া ক্যামেরা উদ্ধারের দাবিতে এ দিন জেলাশাসকের দফতরের সামনে প্রতীকী অনশনে বসেন শহরের বেশ কিছু সাংবাদিক। অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়ে পুলিশ তাঁদের নিরস্ত করে। বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশনের কিছু কর্তা তাঁদের সঙ্গে দেখা করে যাবতীয় আইনি সহায়তার আশ্বাসও দিয়েছেন।
এ দিনই বর্ধমান শহরের কাছে বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে আহত দুই আলোকচিত্রীর সঙ্গে দেখা করেন প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ওমপ্রকাশ মিশ্র। অনশনে বসা সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করে তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেওয়া অন্যায়। রাস্তায় ফেলে মারা তো গুরুতর অপরাধ। এখনও কেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সেটাই বিস্ময়ের।” তৃণমূলের বর্ধমান শহর কমিটির সভাপতি সমীর রায় দাবি করেন, “জুনিয়র ডাক্তার হোক বা অন্য কেউ, যেই এই হামলা চালিয়ে থাক, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
বস্তুত, সকালে হাসপাতালে গিয়ে একই রকম
বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনাও। তখনও পুলিশ বয়ান নেয়নি শুনে তিনি বলেন, “সে কী! পুলিশের তো আগেই আসা উচিত ছিল!” এর কয়েক ঘণ্টা পরে মামলার তদন্তকারী অফিসার, এসআই অঞ্জন রায় গিয়ে বয়ান নথিভুক্ত করেন। ভিডিও-য় তা তুলেও রাখা হয়। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা অবশ্য দাবি করেন, “পুলিশের কাজে কোনও শ্লথতা নেই। আমরা ওঁদের আগেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলাম। তবে যেহেতু ওঁরা গুরুতর আহত ছিলেন, তাই ভিডিওগ্রাফি করা যায়নি। তা আজ হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দুই আলোকচিত্রীই অবশ্য জানান, বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সুপার গিয়ে দেখা করলেও কোনও ‘জিজ্ঞাসাবাদ’ করা হয়নি। আনন্দবাজার পত্রিকার উদিত সিংহ বলেন, “তদন্তকারী অফিসার এসে জানতে চাইলেন, যারা মারধর করেছে তাঁদের আমরা চিনতে পেরেছি কি না। আমরা বলেছি, চিনি না। তবে সে দিন প্রচুর ছবি উঠেছিল। তাতেই হামলাকারীদের চেহারা ধরা পড়েছে। খুঁটিয়ে দেখলেই জানা যাবে, কারা আক্রমণ করেছিল।”
অপর আহত আলোকচিত্রী, বর্তমান-এর মুকুল রহমান বলেন, “সে দিন আমার ক্যামেরা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এসআই সেটা ফিরিয়ে এনেছিলেন। ক্যামেরাটা গুঁড়ো হয়ে গিয়েছে। আমি ওটা ফেরত নিতে চাইনি। ও দিয়ে তো আর ছবি তোলা যাবে না!” উদিতবাবুর ছিনতাই হওয়া ক্যামেরা বা ব্যাগের এখনও খোঁজ মেলেনি। |