বিরোধী কাউন্সিলরদের ‘পুরসভার বোঝা’ বলে ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা কটাক্ষ করায় বাজেট-বিতর্ক থেকে ওয়াক-আউট করলেন বামেরা। শুক্রবার দুপুরে শিলিগুড়ি পুরসভায় ঘটনাটি ঘটেছে। পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএম কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম কক্ষত্যাগের সময় জানিয়ে দেন, ডেপুটি মেয়র ‘অমর্যাদাকর’ মন্তব্য প্রত্যাহার করে দুঃখপ্রকাশ না-করলে তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। কিন্তু, ডেপুটি মেয়র ‘দুঃখপ্রকাশের কোনও প্রশ্নই ওঠা না’ বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এই টানাপোড়েনের মধ্যেই শেষ পর্যন্ত ধ্বনি ভোটে বাজেট পাস হয়। ডেপুটি মেয়রের কটাক্ষ নিয়ে পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, “রঞ্জনবাবু যা বলেছেন, তা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। তা সমর্থন কিংবা বিরোধিতা করার প্রশ্ন ওঠে না।” কিন্তু, বাজেট-বিতর্কের সময়ে যা বলা হয়েছে তা ব্যক্তিগত মত হয় কী করে সেই প্রশ্নে কোনও উত্তর দেননি মেয়র। ঘটনা হল, কংগ্রেস-তৃণমূল জোট পুরবোর্ড গঠনের পরে শহরের উন্নয়নের স্বার্থে আর্থিক বরাদ্দের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কংগ্রেস-তৃণমূল পরিচালিত বোর্ডের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কলকাতা-দিল্লিতে যেতে তাঁদের আপত্তি নেই বলে জানিয়ে দেন শিলিগুড়ি পুরসভার বাম কাউন্সিলররা। বাজেট বিতর্কে সেই প্রসঙ্গ তোলেন বাম কাউন্সিলররা। |
সেই সময়ে ডেপুটি মেয়র বলেন, “আপনারা রাজ্যে বা কেন্দ্রে ক্ষমতায় নেই। তা সত্ত্বেও চাইলে এখন রাজ্য এবং কেন্দ্র থেকে নতুন প্রকল্পের অনুমোদন আদায় করতে আপনারা যেতে পারেন। তবে আপনাদের যাতায়াত, খাওয়া-দাওয়া বাবদ খরচ হবে। যা পুরসভার কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। এখনই আলোচনায় বিরতি হবে। খাওয়া-দাওয়ার পরে যখন অধিবেশন শুরু হবে। তখন আপনারা ওয়াক আউট করবেন।” পাশাপাশি, পুরসভার একটি স্বাস্থ্য প্রকল্পে বরাদ্দ টেলিভিশন সহ নানা সামগ্রী চুরি গিয়েছে বলে রঞ্জনবাবু অভিযোগ করেন। ওই স্বাস্থ্য প্রকল্পের আওতায় মূলত মহিলারা কাজ করেন। তাঁদের সিংহভাগ বামেদের ঘনিষ্ঠ বলেও কটাক্ষ করেন ডেপুটি মেয়র। এক মহিলা কাউন্সিলরের বিরুদ্ধেও টিভি চুরির অভিযোগ রয়েছে বলে ডেপুটি মেয়র দাবি করেন। রঞ্জনবাবুর বক্তব্য নিয়ে সভায় হইচই শুরু হয়। বাম কাউন্সিলররা তাঁদের অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগে সরব হন। তখন মধ্যাহ্ন বিরতি হয়। বাম কাউন্সিলরদের তরফে নুরুল ইসলাম সভাকক্ষে দাঁড়িয়ে বলেন, “যে ভাষায় ডেপুটি মেয়র খাওয়া-দাওয়া, খরচ নিয়ে আমাদের কটাক্ষ করেছেন তা চূড়ান্ত অমর্যাদাকর। ওঁকে দুঃখপ্রকাশ করতে হবে। শিলিগুড়ির মানুষ এই অপমান মেনে নেবেন না।” সিপিএম কাউন্সিলর মুকুল সেনগুপ্ত, জয় চক্রবর্তী, মৌসুমী হাজরা, কমল অগ্রবালরাও ক্ষোভে ফেটে পড়েন। কাউন্সিলর মৌসুমী হাজরা বলেন, “রঞ্জনবাবু মহিলাদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। সরকারি প্রকল্পের টিভি কোন কাউন্সিলর চুরি করেছে তাঁকে প্রমাণ দিতে হবে। আইপিপি-৮ প্রকল্পের মহিলাদের নিয়ে কটূক্তি করেছেন। প্রতিবাদে মহিলারা বৃহত্তর আন্দোলন করবেন।” আরেক সিপিএম কাউন্সিলর কমলবাবু বলেন, “শহরের মানুষেরাই আমাদের পুরসভায় পাঠিয়েছেন। আমাদের বোঝা বলার মানে শহরবাসীদেরও অপমান করা। শিলিগুড়ির মানুষ এই অমর্যাদা মেনে নেবেন না।” |