|
|
|
|
প্রসঙ্গ জমি ব্যাঙ্ক |
‘নির্ভুল’ জমি-তথ্য চেয়ে দফতরগুলিকে ফের চিঠি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
আরও একটা চিঠি। এবং এই নিয়ে দশ বার। ‘ল্যান্ড ব্যাঙ্ক’ তৈরির জন্য বিভিন্ন দফতরের কাছে জমি-তথ্য চেয়ে ফের চিঠি দিলেন রাজ্যের ভূমি-রাজস্ব কমিশনার তথা ওই দফতরের সচিব রামদাস মিনা। ২৭ মার্চ পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৫ দিনের মধ্যে সমস্ত তথ্য ভূমি দফতরে জমা দিতে হবে সচিবদের ও তা অবশ্যই নির্ভুল (এরর ফ্রি) হতে হবে। এই চিঠি থেকেই পরিষ্কার, ক্ষমতায় আসার পরে ১০ মাস কাটলেও এখনও জমি ব্যাঙ্ক চূড়ান্ত করতে পারল না নয়া সরকার।
রাজ্যে জমি ব্যাঙ্ক তৈরির কাজের গতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে খুশি নন, তা আগের চিঠিতেই (২১ ফেব্রুয়ারি) স্পষ্ট করে দেন ভূমিসচিব। সরকারি দফতরগুলি যে ভাবে তাদের হাতে থাকা জমির খতিয়ান পেশ করছে, তাতে কাজের কাজ কিছু হবে না বলেই মনে করছেন তিনি। মিনার বক্তব্য ছিল, সরেজমিনে তদন্ত না করে বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকরা জমি সংক্রান্ত যে তথ্য পেশ করেছেন, তা নির্ভরযোগ্য নয়। তাই ‘নির্ভুল তথ্য’ জোগাড় করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওই রিপোর্ট ভূমি দফতরে পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি।
কথা ছিল, ২৯ ফেব্রুয়ারি জমি ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত চূড়ান্ত তথ্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পেশ করবেন ভূমিসচিব। সে কথা বিভিন্ন দফতরের আধিকারিককে জানিয়েও দিয়েছিলেন তিনি। মহাকরণ সূত্রের খবর, এর পরেও বেশ কিছু দফতর সময়মতো পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিতে পারেনি। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চূড়ান্ত তথ্য পেশ করাও সম্ভব হয়নি। তার পরেও এক মাস কেটে গিয়েছে। কিন্তু বিস্তারিত তথ্য যে মহাকরণে পৌঁছয়নি, তা স্পষ্ট মিনার ২৭ মার্চের চিঠিতে। যারা এখনও সম্পূর্ণ জমি-তথ্য দেয়নি বলে ভূমি দফতর জানাচ্ছে, সেগুলি হল আইন ও বিচার দফতর, বিদ্যুৎ, তথ্য সংস্কৃতি, পরিবহণ, কৃষিজ বিপনন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, আবাসন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, উচ্চশিক্ষা, পঞ্চায়েত, পূর্ত ও সুন্দরবন উন্নয়ন দফতর।
তবে যে ভাবে জমির খুঁটিনাটি চেয়ে চিঠি পাঠানো হচ্ছে, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্ভব নয় বলে মনে করছেন একাধিক দফতরের আধিকারিকরা। তাঁদের বক্তব্য, বহু ক্ষেত্রে প্লট ধরে জমির খতিয়ান নম্বর পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন দফতরের হাতে এমন বেশ কিছু জমি আছে, যার কোনও অস্তিত্ব সরকারি নথিতে মিলছে না। উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের এক কর্তা বলেন, “আমাদের বহু জমি জবরদখল হয়ে গিয়েছে। কোনও মতেই ওই দখলদারি হটানো সম্ভব নয়। বাধ্য হয়ে ওই তথ্যই ভূমি দফতরকে জানানো হয়েছে।”
কিন্তু এ ভাবে কুড়িয়া-বাড়িয়ে পাওয়া জমিতে কি আদৌ শিল্প গড়া সম্ভব?
একাধিক আধিকারিকের অভিমত, বিভিন্ন দফতরের হাতে পড়ে থাকা ফাঁকা জমি পাওয়া গেলেও তার বেশির ভাগই বড় শিল্প গড়ার কাজে লাগানো সম্ভব নয়। মূলত তিনটি সমস্যার কথা বলেছেন তাঁরা। সেগুলি হল জমির চরিত্রজনিত ও পরিকাঠামোগত সমস্যা এবং এক লপ্তে বেশি জমি পাওয়ার সমস্যা। ওই আধিকারিকদের বক্তব্য, জমি মিললেই যে তাতে নতুন শিল্প গড়ে তোলা যাবে, তা জোর দিয়ে বলা যায় না। কারণ, শিল্প গড়তে জল ও বিদ্যুতের জোগান আবশ্যিক। ওই সুবিধা যে সব সময় পাওয়া যাবে না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত অফিসারদের মহল।
ভূমি দফতরের প্রাথমিক হিসেবে, ১৮টি জেলা প্রশাসনের হাতে ৫ লক্ষ ৮৩ হাজার একর খাস জমি রয়েছে। এর মধ্যে ফাঁকা পড়ে রয়েছে ২ লক্ষ ৬০ হাজার একর। বাকি জমি হয় জবরদখল হয়ে গিয়েছে, নয় দখলদারি নিয়ে মামলা চলছে। আর বিভিন্ন সরকারি দফতরের হাতে থাকা ৫৫ হাজার একর জমির মধ্যে ফাঁকা পাওয়া গিয়েছে মাত্র ২১ হাজার। এতে কী ভাবে শিল্প গড়ে উঠবে, সেই প্রশ্নই তুলেছেন একাধিক অফিসার। |
|
|
|
|
|