|
|
|
|
‘অস্পষ্টতা’ রেখেই পাশ প্রবেশকর বিল, আশঙ্কায় বিরোধীরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাজ্যে কিছু পণ্যের উপরে ফের প্রবেশকর বসানোর বিল ঘিরেও রইল ‘বিভ্রান্তি’ এবং ‘ধোঁয়াশা’। মানুষের উপরে করের বোঝা না-চাপানোই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ঘোষিত নীতি। শেষ পর্যন্ত রাজ্যের বাড়ন্ত কোষাগারের হাল ফেরাতে পণ্যকর বসানোর যে বিল শুক্রবার পাশ হল, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের জবাবি বক্তব্যের পরেও তা নিয়ে থেকে গেল বেশ কিছু প্রশ্ন। ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যাক্স অন এন্ট্রি অফ গুড্স ইনটু লোকাল এরিয়াস বিল, ২০১২’ শীর্ষক যে বিল এ দিন পেশ ও পাশ হয়েছে, তার মোদ্দা বক্তব্যঅন্য রাজ্য থেকে মালবাহী গাড়ি পশ্চিমবঙ্গে ঢুকলে তাকে প্রবেশকর দিতে হবে। বিরোধী বামফ্রন্টের বক্তব্য, ওই কর চাপলে সমস্ত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়বে এবং তার ফলে বিপদে পড়বেন গরিব মানুষ। বামেদের আরও অভিযোগ, ওই বিল ‘অস্পষ্ট’ এবং ‘দানবিক’। সেখানে বিধানসভাকে এড়িয়ে অর্থমন্ত্রীর হাতে ‘ক্ষমতা’ কেন্দ্রীভূত করার সংস্থান রয়েছে। মূলত এই যুক্তিগুলিতেই ওই বিলের বিরোধিতা করে বামফ্রন্ট ভোটাভুটি চেয়েছিল। তাতে অবশ্য বিল পাশ আটকায়নি। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র ওই বিল নিয়ে মূলত চারটি প্রশ্ন তোলেনপ্রবেশকর কত হবে, তা কারা নেবে, করের হার কী ভাবে ঠিক হবে এবং কোন কোন দ্রব্যের উপরে কর বসবে। অথর্মন্ত্রী তাঁর জবাবি ভাষণে জানান, ১%-এর বেশি প্রবেশকর নেওয়া হবে না। কর নেওয়ার জন্য কোথাও টোল প্লাজা বসানো হচ্ছে না। ডিলাররা ‘স্বতঃপ্রণোদিত’ হয়ে অনলাইনে কর দেবেন। আর করের হার ঠিক হবে জিনিসের মূল্যের ভিত্তিতে। তবে কোন কোন দ্রব্যের উপরে কর বসবে, তা অর্থমন্ত্রী নির্দিষ্ট করেননি। তিনি একটি দীর্ঘ তালিকা পড়ে দেন, যেখানে কোন কোন দ্রব্যের উপরে কর বসবে না, তা বলা আছে। তার মধ্যে পড়ছে ধান, চাল, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম প্রভৃতি।
কিন্তু সূর্যবাবু তথা বামেদের বক্তব্য, বিলে লেখা আছে, ৫% পর্যন্ত কর নেওয়া যাবে। কিন্তু ১%-এর বেশি কর যে নেওয়া হবে না, তা অর্থমন্ত্রী বিধানসভায় মৌখিক ভাবে জানালেন মাত্র। অথচ সরকার বিলটিতে এই মর্মে সংশোধনী আনলে বিষয়টির মধ্যে ‘স্বচ্ছতা’ থাকত। আর প্রবেশকরের বিষয়টি ডিলারদের ‘সদিচ্ছা’র উপরে ছেড়ে রাখায় কর আদায় নিয়েও ‘ধোঁয়াশা ও জটিলতা’র জায়গা থাকল। বামেদের আরও বক্তব্য, যে দ্রব্যগুলি প্রবেশকরের আওতাভুক্ত নয় বলে অর্থমন্ত্রী এ দিন জানান, সেগুলির বেশির ভাগই আদতে ভ্যাট এবং বিক্রয়করমুক্ত। তাতে এমনিতেই কর বসে না।
বিরোধী দলনেতার মতে, “বিলে বলা হয়েছে, অর্থমন্ত্রী ১৪ দিনের নোটিস দিয়ে প্রবেশকরের আওতাভুক্ত দ্রব্যের তালিকা, করের হার ইত্যাদি বদলাতে পারবেন। অর্থাৎ বিধানসভাকে এড়িয়ে ওই পরিবর্তনগুলি করার জন্য অর্থমন্ত্রী নিজের হাতে ক্ষমতা রাখলেন। এটা দানবিক।” এই সমস্ত বিরোধিতার প্রেক্ষিতে সূর্যবাবুর আশঙ্কা, “বিলটা যা হয়েছে, তাতে যে কেউ আদালতে একে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন।” অর্থমন্ত্রী অবশ্য জবাবি ভাষণে বলেন, “প্রবেশকর বামফ্রন্ট আমলেও ছিল। ১৯৯৫-এ বাম সরকার তা তুলে নেয়। তবে ২০০৩ সালে তারা ফের প্রবেশকরের জন্য বিল তৈরি করে রাষ্ট্রপতির কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠায়।” অমিতবাবুর বক্তব্যের আগেই ফব-র পরেশ অধিকারী বক্তৃতায় জানান, দুর্নীতি এবং দালালরাজে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ১৯৯৫ সালে বামফ্রন্ট সরকার প্রবেশকর তুলে নেয়। তবে ২০০৩ সালে প্রবেশকর বিল তৈরি করে রাষ্ট্রপতির কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানোর বিষয়টি ঠিক নয় বলে বামেদের দাবি। তাদের বক্তব্য, ওই সময় একটা বিল তৈরি হয়। কিন্তু প্রবেশকরের সঙ্গে তার দূরতম সম্পর্কও নেই। সূর্যবাবু পরে বলেন, “অর্থমন্ত্রী যা বললেন, তাতে বিল নিয়ে ধোঁয়াশা, অস্পষ্টতা কিছুই কাটল না। উনি আমাদের প্রশ্নেরও জবাব দিলেন না। তার ফলে যেটা হল, রাজ্যপাল যে দিন এই বিলে সই করবেন, সে দিন রাজ্যে একটা কালো দিন হবে!” |
|
|
|
|
|