|
|
|
|
জেলা পরিষদ বিতর্ক |
আন্দোলনের পথ দেখাতে দমদমে বুদ্ধের সভা রবিবার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
জেলা পরিষদের সভাধিপতির আর্থিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলনের দিশা দেখাতে রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার দমদম যাচ্ছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দমদমের রবীন্দ্রভবনে দলের লোকাল, জোনাল ও জেলা স্তরের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বুদ্ধবাবু ভাষণ দেবেন। থাকবেন জেলা সম্পাদক গৌতম দেবও। শুক্রবার গৌতমবাবু জানান, পার্টি কংগ্রেসের আগে আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের কাছে বার্তা দিতেই বুদ্ধবাবু জেলায় কর্মিসভা করছেন।
এ দিন আলিমুদ্দিনে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকেও সিদ্ধান্ত হয়, বাম-পরিচালিত উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার সভাধিপতিদের আর্থিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদে ওই তিন জেলায় দল পথে নামবে। মানুষকে বোঝানো হবে, ওই কাজ ‘অগণতান্ত্রিক’। কোঝিকোড়ের পার্টি কংগ্রেস শেষে ওই আন্দোলনে নামবে সিপিএম। নির্বাচিত পঞ্চায়েতকে কাজ করতে দেওয়া ছাড়াও ১০০ দিনের কাজের ব্যবস্থা-সহ গরিব মানুষের জন্য বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্প রূপায়ণের দাবিতে ২৩ থেকে ২৭ এপ্রিল রাজ্য জুড়ে আন্দোলন করবে তারা।
মুর্শিদাবাদ জেলার সভাধিপতির আর্থিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে কংগ্রেস সাংসদ তথা ওই জেলার কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী আগেই আপত্তি তুলেছিলেন। এ দিন কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের পর পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহারাব বলেন, “এই সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। কারণ, মুর্শিদাবাদের স্থানীয় মানুষের উন্নতির জন্যই জেলা পরিষদের বাজেট পাশ করানো হয়েছিল। অন্য দুই জেলায় বাজেট পাশ হয়নি। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, মুর্শিদাবাদের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হোক।” |
|
আলিমুদ্দিনে রাজ্য কমিটির বৈঠকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র |
তবে কংগ্রেস-সিপিএম যা-ই বলুক, রাজ্য সরকার যে তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরতে নারাজ, পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপধ্যায়ের কথায় তা স্পষ্ট। তিনি এ দিন বলেন, “মুর্শিদাবাদে শাসকদল সংখ্যালঘু হয়ে গিয়েছে। শুধু
বাজেট পাশ হয়েছে বলেই আর্থিক দায়দায়িত্ব সভাধিপতির হাতে ছেড়ে রাখা যায় না। শাসকদল সংখ্যালঘু হয়ে পড়ায় অনেক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। আমি কোনও বেআইনি কাজ করিনি। যা করেছি, তা আইন মেনেই।”
সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে বিভিন্ন জেলার পরিস্থিতি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয়। রাজ্য নেতারা মনে করছেন, পঞ্চায়েত ভোট নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় ছ’মাস আগে হবে। এই পরিস্থিতিতে আগামী মে মাস থেকেই পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতিতে নেমে পড়তে চায় প্রধান বিরোধীদল। ক্ষমতাচ্যুত সিপিএমের সামনে পঞ্চায়েত ভোটই প্রথম পরীক্ষা। রাজ্যের সিংহভাগ জেলা পরিষদ এখনও বামেদের হাতে। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের বহু জায়গায় পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী দেওয়া সিপিএমের পক্ষে কঠিন হবে বলে দলের নেতারাই স্বীকার করছেন। তা বুঝতে পেরেই সাধারণ মানুষের দাবি নিয়ে পথে নামতে চলেছে সিপিএম।
দলের কর্মীদের চাঙ্গা করতে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জেলায় কর্মসূচি নেওয়া হবে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সম্পাদক গৌতমবাবু জানিয়েছেন, জনসংযোগ বাড়াতে জেলার প্রত্যেক বাড়িতে দলীয় কর্মীরা যাবেন। বামপন্থী বা বাম-বিরোধী সব মানুষের কাছেই যাওয়া হবে এবং নিজেদের বক্তব্য বলা হবে। প্রায় ৩০ হাজার কর্মীকে একযোগে এ কাজে নামানো হচ্ছে। ৬ থেকে ৮ জুন জেলা জুড়ে জনসংযোগ অভিযান হবে।
সাধারণ মানুষ কী বলছেন, তা লোকাল কমিটি স্তরে রিপোর্ট-কাডের্র্ লিখতে হবে। তৃণমূলের ‘অত্যাচার ও অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপে’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সাধারণ মানুষের কাছে চাঁদা তুলে ‘ফাইটিং-ফান্ড’ গড়ে তোলা হবে বলেও গৌতমবাবু জানান।
রাজ্য কমিটির সিদ্ধান্ত ফসলের লাভজনক দাম, সার ও কৃষি উপকরণের মূল্যহ্রাস, বেকারদের কর্মসংস্থান, শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য বন্ধের দাবিতে আন্দোলন হবে। প্রসঙ্গত, এ দিন জলপাইগুড়ি জেলার নব নির্বাচিত সম্পাদক কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পার্টি কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন রবীন দেব। |
|
|
|
|
|