|
|
|
|
সব বিশ্ববিদ্যালয়কে সুপারিশের চিঠি |
উপাচার্যদের দায়িত্বেও সংসদের হস্তক্ষেপ |
সাবেরী প্রামাণিক • কলকাতা |
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠল রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদের বিরুদ্ধে।
আইন অনুযায়ী যে কাজ করার কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের, সংসদের চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকেই তা করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। কলেজ অধ্যক্ষদের মধ্যে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট-সিন্ডিকেট, কোর্ট-কাউন্সিলে কয়েক জনকে মনোনীত করার কথা উপাচার্যদের। কিন্তু উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের ইচ্ছা অনুযায়ী তৈরি করা অধ্যক্ষদের নামের তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে উপাচার্যদের কাছে। স্বাভাবিক ভাবেই এর জেরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
প্রবীণ শিক্ষকদের কারও কারও মতে, গ্রন্থাগারে কোন খবরের কাগজ রাখা হবে, তা বলে দেওয়া যেমন সরকারের
|
সংসদের চেয়ারম্যান
সুগত মারজিৎ। |
কাজ নয়, তেমনই উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কাদের মনোনীত করবেন, তা ঠিক করে দেওয়াও উচ্চশিক্ষা সংসদের দায়িত্ব নয়। তাঁরা বলছেন, এর ফলে এক দিকে যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা খর্ব হবে, পাশাপাশি নতুন করে শিক্ষাক্ষেত্রে দলতন্ত্র কায়েমের আশঙ্কাও দেখা দেবে। সংসদের চেয়ারম্যান সুগত মারজিত অবশ্য বলেন, “এই ভাবে দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে কি না, সেটা আমি বলতে পারব না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় নতুন আইন হওয়ায় এখন একটা সন্ধিক্ষণ। তাই এত ছোট ব্যাপারেও সংসদের সাহায্য লাগছে। পরে কোর্ট-কাউন্সিল এবং উপাচার্যরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।”
রাজ্য সরকারের গড়া নতুন আইন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট বা সেনেটে সর্বাধিক দশ জন এবং এগজিকিউটিভ কাউন্সিল বা সিন্ডিকেটে সর্বাধিক সাত জন অধ্যক্ষকে মনোনীত করার কথা উপাচার্যের। কিন্তু তার অপেক্ষা না করে উচ্চশিক্ষা সংসদের পক্ষ থেকে কোর্ট-কাউন্সিল, সেনেট-সিন্ডিকেটে মনোনীত করার জন্য অধ্যক্ষদের নামের তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাপা তালিকায় সংসদের সদস্য সচিব সুব্রত ঘোষ অবশ্য হাতে লিখে জানিয়েছেন, এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন উপাচার্য। একই সঙ্গে এ-ও জানিয়ে দিয়েছেন যে, ওই নামগুলি সুপারিশ করেছেন চেয়ারম্যান নিজেই। চেয়ারম্যান সুগতবাবু বৃহস্পতিবার বলেন, “রাজ্যের উচ্চশিক্ষার অভিভাবক হিসেবে সংসদ নানা রকম সুপারিশ করতেই পারে। তাই কোর্ট-কাউন্সিলে কোন অধ্যক্ষদের রাখা যেতে পারে, সে ব্যাপারে নাম পাঠানো হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তো উপাচার্যই নেবেন। সে কথা ওই তালিকায় লিখেও দেওয়া হয়েছে।” তবে ওই তালিকা মেনেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট-কাউন্সিলে অধ্যক্ষরা মনোনীত হয়েছেন।
কিন্তু সুগতবাবু এমন করলেন কেন? তাঁর দাবি, কোন কোন কলেজের অধ্যক্ষকে মনোনীত করা যায়, তা ঠিক করতে সমস্যায় পড়েছিলেন উপাচার্যরা। তাই তাঁরা সংসদের সাহায্য চান। সেই কারণেই সংসদের পক্ষ থেকে তালিকা পাঠানো হয়েছে। সুগতবাবুর কথায়, “কলেজে-কলেজে এখন যে সব অধ্যক্ষ রয়েছেন, তাঁদের ৯৯ শতাংশেরই ভাবমূর্তি প্রশ্নাতীত নয়। কারও বিরুদ্ধে মামলা ঝুলছে, কারও নিয়োগ রাজনৈতিক ভাবে হয়েছে বলে অভিযোগ। যাঁদের ভাবমূর্তি তুলনায় স্বচ্ছ, তাঁদের নামই সুপারিশ করা হয়েছে।”
উপাচার্যদের অনেকেই অবশ্য চেয়ারম্যানের কাছে অধ্যক্ষদের নাম চাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। এমনকী, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সূত্রের দাবি, না চাইতেই অধ্যক্ষদের নামের তালিকা পাঠিয়ে দিয়েছে উচ্চশিক্ষা সংসদ। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অলোক বন্দ্যোপাধ্যায় সংসদের পাঠানো তালিকা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তিনি বলেন, “বর্ণমালা অনুযায়ী অধ্যক্ষদের নাম মনোনীত করেছি।” বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, “চেয়ারম্যান নানা সময়ে পরামর্শ দেন। এ ক্ষেত্রেও দিয়েছেন।”
উচ্চশিক্ষা সংসদ পরিচালন আইন অনুযায়ী, সংসদ রাজ্য সরকারকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বিধি বা আইন তৈরি করতে কিংবা বর্তমান আইন পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়কে পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু কোর্ট-কাউন্সিলে উপাচার্য কাদের মনোনীত করবেন, তা সুপারিশ করার সংস্থান উচ্চশিক্ষা সংসদের আইনে নেই বলে রাজ্যের শিক্ষা প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত অনেকের মত।
সংসদের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান (তখন উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী পদাধিকারবলে চেয়ারম্যান ছিলেন) পবিত্র সরকার এই ঘটনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, “উচ্চশিক্ষা সংসদ মোটেই রাজ্যে উচ্চশিক্ষার অভিভাবক নয়। আমার ধারণা, এটা সংসদকে দিয়ে করানো হয়েছে। সে দিক থেকে দেখলে কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, সংসদেরও স্বাধিকার নষ্ট হয়েছে।” শিক্ষাব্রতী সুনন্দ সান্যালের মতে, গ্রন্থাগার নিয়ে সম্প্রতি সরকার যে নির্দেশ দিয়েছে, উচ্চশিক্ষা সংসদের প্রস্তাবটি তার সঙ্গেই তুলনীয়। তিনি বলেন, “যে কারণে গ্রন্থাগারে কোন খবরের কাগজ থাকবে, তা বলে দেওয়া সরকারের কাজ নয়, সেই কারণেই উপাচার্যের উপরে নিজেদের পছন্দ চাপিয়ে দেওয়া উচ্চশিক্ষা সংসদের কাজ হতে পারে না।” |
|
|
|
|
|