|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
‘সর্বনাশা শব্দের ভেতরে বসে থাকে, কবি’ |
|
‘সেন্ট্রাল পার্কের একটি মাত্র পলাশের জন্যে
বসন্ত এসে দাঁড়ালে
যারা হেঁটে যায়
তারা তা ধর্তব্যের মধ্যে আনে না’:
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা ভাষানগর-এ (সম্পা: সুবোধ সরকার)। এর সঙ্গে আবার ‘অপুর সংসার’ ছবির স্থিরচিত্র পাঠককে মনে করিয়ে দেবে তাঁর ‘দাদাসাহেব ফালকে’ প্রাপ্তির কথা। মল্লিকা সেনগুপ্তের পঁচিশটি কবিতার সঙ্গে স্মৃতির অনুষঙ্গে অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত: ‘ফ্র্যাংকফুর্টে এবারকার বইমেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার মুখে... আমি মল্লিকার কিছু কবিতা উপস্থিত মানুষজনকে পড়ে শোনাই। সেই মর্মে কথা উঠেছিল আগামী বইমেলায় মল্লিকাকে তাঁর স্বরচিত কবিতা পাঠের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে। শ্রোতৃমণ্ডলীর সেই অভীপ্সা চরিতার্থ হল না বলে নিজেকে ভীষণ নিয়তিগ্রস্ত লাগছে।’ আছে প্রয়াত অসমিয়া সাহিত্যিক ইন্দিরা গোস্বামীর সাক্ষাৎকার। ‘হয়তো মিল নেই, অমিলও নেই। শুধু চলাটাই আছে জীবনে। তা-ই চালাচ্ছে, ও মেলাচ্ছে, এক কনে-দেখা আলোয়, সব মিল ও অমিলকে।’ লোকনাথ ভট্টাচার্য বলেছেন বীতশোক ভট্টাচার্যকে এক সাক্ষাৎকারে। লোকনাথের কর্মময় জীবনপঞ্জি ও গ্রন্থপঞ্জি তৈরি করেছেন প্রভাতকুমার দাস। লোকনাথ ভট্টাচার্য-ই বিষয় ত্রিষ্টুপ-এ (সম্পা: ব্রজকুমার সরকার)। তাঁর কয়েকটি কবিতার পুনর্মুদ্রণের পাশাপাশি তাঁর গদ্যসৃষ্টি নিয়ে আলোচনা। আলোচনা অনুবাদক ও নাট্যকার লোকনাথকে নিয়েও। স্মৃতি আলেখ্য-য় সহধর্মিণী ফ্রাঁস ভট্টাচার্য জানিয়েছেন ‘সে যুগে, লেখকদের রাজনৈতিক আনুগত্য এবং বিশেষ দলের প্রতি ঝোঁক অতি অবশ্যকর্তব্য ছিল। সত্য বলতে গেলে, লোকনাথ ভারতীয় সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা পরিষদ বা স্তালিনপন্থী কারুর কাছে স্বস্তিবোধ করতেন না।’ ‘ইতিহাসে কোণঠাসা নারীর নিজের কথা বলার, তাদের হতমান মর্যাদা ফিরিয়ে আনার জন্য কলমকে তরবারি করেছেন।’ ‘কথামানবী’র কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত সম্পর্কে লিখেছেন লক্ষ্মণ কর্মকার তাঁর সম্পাদিত সৃজন পত্রিকার ‘মল্লিকা সেনগুপ্ত সংখ্যা’য়। তাঁর কাব্য-উপন্যাস-প্রবন্ধ ও জীবনভাবনা নিয়ে আলোচনা। তাঁর জীবন ও গ্রন্থপঞ্জি, চিঠিপত্র ও ই-মেল। সুবোধ সরকার জানাচ্ছেন ‘মেয়েদের নিয়ে কবিতা লিখেছে ঠিকই কিন্তু তার পাশাপাশি অস্ত্র সংবরণের কথা, যুদ্ধের বিরুদ্ধে কবিতা, বা ভারত পাকিস্তান নিয়ে কবিতা, পারমাণবিক ওয়ার ফেয়ার এইসব নিয়েও ওর প্রচুর কবিতা রয়েছে।’
ঝাড়খণ্ড ও মধ্যপ্রদেশ থেকে প্রকাশিত দুর্বাসা-য় (সম্পা: বিশ্বজিৎ বাগচী) অশোক দাস তাঁর ‘ঝাড়খণ্ড: অধিবাসী, ভাষা ও সংস্কৃতি’ প্রবন্ধে লিখেছেন ‘২০০১ সালের আগস্ট মাসে ঝাড়খণ্ড সরকারের শিল্পনীতির ঘোষণা অনুযায়ী রাঁচি থেকে জামশেদপুর পর্যন্ত ১৩০ কিমি অঞ্চলকে শিল্পাঞ্চল বানিয়ে আদিবাসীদের জমি দখল করে শিল্পপতিদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য ঘৃণ্য কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে।’
‘উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ের আগে কোনো রাষ্ট্রই জনশিক্ষার ব্যাপারে খুব-একটা আগ্রহ দেখায়নি। স্কুল ছিল বেসরকারি-গির্জা বা কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠানের দ্বারা চালিত। আমাদের দেশে পাঠশালা চলত জমিদারের অনুগ্রহে, বা কোনো উৎসাহী ব্যক্তির আগ্রহে। মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে সমাজ তখন কিছুটা উদার হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, সারা পৃথিবীতে মেয়েদের শিক্ষা বলতে বোঝাত শুধু পড়তে শেখা, লেখা নয়।’ সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চমৎকার নিবন্ধ ‘মেয়েরা লিখবে না’। সন্ধিৎসা-য় (সম্পা: রমাপ্রসাদ দে) ডিকেন্স-এলিয়ট-ওয়ার্ডসওয়ার্থ-কাজুও আজুমা নিয়ে নিবন্ধাদি। রবীন্দ্রচিন্তায় রাজনীতি বনাম স্বদেশি, এবং শিবরাম চক্রবর্তীর সাহিত্য নিয়ে প্রবন্ধ। সুভাষ ঘোষালের পুনর্মুদ্রিত প্রবন্ধ ‘স্বামী বিবেকানন্দ ও শ্রীঅরবিন্দ’ ঋদ্ধ করবে পাঠককে।
কৌরব-এর উৎসর্গ অরুণেশ ঘোষ ও মোহন দত্তকে। কমল চক্রবর্তীর গদ্য ‘হে অরুণেশ’: ‘অরুণেশের কত গদ্যে ভয়ংকর, ক্ষয়, বেদনা, হতাশা, ক্ষুধা, আনন্দ, জয়, নির্মাণ, মেশামেশি। কত কবিতায় উত্তরণ, জম্মকম্মের হিসেব। পড়তে ভালো লাগে, ভাবতেও। সর্বনাশা শব্দের ভেতরে বসে থাকে, কবি।... অরুণেশ রাগী ছিল, আহত ছিল, বেঁচেছিল, অম্লান ছিল, হেঁটেছিল, থেমেছিল, দেখেছিল, বুঝেছিল, এবং কবি ছিল!!!’
সমারূঢ় ব্যতিক্রম-এর বিষয় ‘ময়নাতদন্ত-৩৪’। সম্পাদক রঞ্জন মৈত্রের সংকলন ‘সংবাদ দর্পণে ৩৪’ অনুপুঙ্খ রাজনৈতিক সালতামামি, ১৯৭৭-২০১১। শুধু এর জন্যেই সংখ্যাটি সংগ্রহযোগ্য। অম্লান দত্ত মীরাতুন নাহার অশোকেন্দু সেনগুপ্ত উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনার সঙ্গে রাসেলের ‘কেন আমি কমিউনিস্ট হতে পারিনি’-ও গুরুত্বপূর্ণ: ‘সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কতন্ত্র হয়ে উঠল দলের ক্ষুদ্র নেতৃগোষ্ঠীর একনায়কতন্ত্র যা শেষমেষ গিয়ে থামল স্তালিনীয় একনায়কতন্ত্রে।’
আবার এসেছি ফিরে-র (সম্পা: এবাদুল হক) প্রবন্ধাদির মধ্যে অবশ্যপাঠ্য ‘একটি উপেক্ষিত জাতিসত্তার উত্থানের ইতিহাস’, ‘পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা সরকারী সিদ্ধান্ত ও গ্রামীণ বিদ্যালয়’, এবং ‘গ্রামীণ জনপদের লুপ্তপ্রায় গাছপালার খোঁজখবর’। ক্রোড়পত্রটি কবি কৃষ্ণা বসুকে নিয়ে।
|
|
|
|
|
|