জেলা পরিষদের মতোই উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা পঞ্চায়েত সমিতিতে ক্ষমতায় রয়েছে বামেরা। পাশাপাশি জেলা পরিষদের মতো এখানেও স্থায়ী সমিতি এবং সাধারণ সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ তৃণমূল। কিন্তু তা সত্ত্বে পঞ্চায়েত সমিতিতে কোনও অচলাবস্থা তৈরি হয়নি। আর্থিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হয়নি প্রশাসনকে। এমন কী বাজেটও পাশ হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের সহযোগিতায়।
কেন বামেদের পঞ্চায়েত সমিতিতে সহযোগিতা করল তৃণমূল?
পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের তরুণ ঘোষ বলেন, “এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আমরা বাজেট পাশ করতে সহযোগিতা করেছি। না হলে উন্নয়নের কাজ বাধাপ্রাপ্ত হত। সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হতেন। তা ছাড়া কর্মাধ্যক্ষেরা সকলেই প্রায় আমাদের দলের।” পাশাপাশি অবশ্য তিনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের দীনবন্ধু মণ্ডলের বিরুদ্ধে উন্নয়নের কাজের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন। তরুণবাবু বলেন, “ব্লকে প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনায় হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র রাস্তা হয়েছে। অন্য ব্লকগুলির তুলনায় বিএডিপি প্রকল্পেও বাগদা খুব কম টাকা পেয়েছে। সভাপতি বিষয়গুলি নিয়ে জেলা পরিষদে বা জেলা প্রশাসনের কাছে ঠিকমতো দাবি জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন।” তৃণমূল এমন কথা বললেও রাজনৈতিক মহলের ধারণা বাজেট পাশে সহযোগিতা করে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নিজেদের সদর্থক ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চাইছে তৃণমূল।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চার বছরে বাগদা ব্লকে মাত্র চারটি রাস্তা তৈরি হয়েছে প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনায়। যেখানে চাহিদা বা প্রয়োজন ছিল অনেক বেশি রাস্তার। যে চারটি রাস্তা হয়েছে সেগুলি হল, আমডোব থেকে কুরুলিয়া (৮ কিলোমিটার), মালিপোতা থেকে সন্তোষ কলোনি (৪ কিলোমিটার), নেওলাপাড়া থেকে মধুরাচক (৩ কিলোমিটার) ও কোনিয়ারা হাইস্কুল থেকে দুর্গাপুর (এক কিলোমিটার)। বাগদা ব্লকের ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গে সরাসরি বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী (সীমান্ত থেকে ৮ কিলোমিটার ভিতরে) ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতই বিএডিপি (বর্ডার এরিয়া ডেভলেপমেন্ট প্রজেক্ট) প্রকল্পের অধীন। জেলার মধ্যে একমাত্র বাগদা ব্লকেরই সবচেয়ে বেশি সীমান্ত এলাকা রয়েছে। অথচ বিএডিপি প্রকল্পে এই ব্লক তুলনায় অনেক কম টাকা পেয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮-২০০৯ আর্থিক বছরে বিএডিপি প্রকল্পে বাগদা ব্লক পেয়েছে এক কোটি ৬১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। ২০০৯-২০১০ আর্থিক বছরে পেয়েছে ৫০ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা, ২০১০-২০১১ আর্থিক বছরে পেয়েছে ৭৭ লক্ষ ৪ হাজার টাকা এবং ২০১১-২০১২ আর্থিক বছরে ২ কোটি ৩৭ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা। পাশাপাশি বাগদার পাশের বনগাঁ ব্লকে এখনও পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনায় ১৭টি রাস্তা তৈরি হয়েছে। যার দৈর্ঘ্য মোট ৮৫ কিলোমিটার। নতুন করে আরও ১৭ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির জন্য টেন্ডার হয়ে গিয়েছে।
তা হলে বাগদা ব্লকের ক্ষেত্রে এই ব্যর্থতা কেন?
তরুণবাবুর কথায়, “জেলা সভাধিপতি এখন ‘ক্ষমতাহীন’ দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা আনতে যথেষ্ট উদ্যোগী হন না। স্থায়ী সমিতিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিই কিছু ক্ষেত্রে তাঁর মত থাকে না। সরকারি কোনও নির্দেশ এলে সঠিক সময়ে আমাদের জানান না। তবে বিডিও এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করায় সমস্যা হচ্ছে না।”
বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির মোট আসন ২৭টি। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১৫টি আসন পেয়ে ক্ষমতা দখল করে বামেরা। বিরোধীরা পায় ১২টি আসন। যার মধ্যে তৃণমূলই পায় ১০টি আসন। কিন্তু ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৭টি দখল করে তৃণমূল। বিধায়ক এবং জেলা পরিষদের সদস্য মিলিয়ে তৃণমূলের সদস্যসংখ্যা দাঁড়ায় ১৯-এ। একজন নির্দল ও একজন কংগ্রেস সদস্যও তৃণমূলকে সমর্থন করে। ফলে ৯ জন কর্মাধ্যক্ষের মধ্যে ৭টি পায় তৃণমূল। একটি পায় নির্দল। পদাধিকার বলে অর্থ বিষয়ক স্থায়ী সমিতির সভাপতি হন দীনবন্ধুবাবু। ২ জন পঞ্চায়ত সদস্য ও ১৫ জন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মিলিয়ে বামেদের হয় ১৭ জন।
কী ভাবে চলছে সমিতির কাজ?
দীনবন্ধুবাবুর কথায়, “আমি একা, ওরা (তৃণমূল) সংখ্যাগরিষ্ঠ। মিলেমিশে কাজ করতে হচ্ছে। ওঁরা আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত। ২০ বছর ধরে সমিতিতে আছি। ফলে কাজ করতে তেমন সমস্যা হচ্ছে না।” তবে একইসঙ্গে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনায় আরও বেশি রাস্তা হওয়া উচিত ছিল। এ ব্যাপারে ২৯টি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। বিএডিপি প্রকল্পের ক্ষেত্রেও বাগদা বঞ্চিত। ২৯টি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছিল। যে কোনও কারণেই হোক, তা হয়মনি। তবে তাঁদের দিক থেকে কোনও ঘাটতি ছিল না। সব মিলিয়ে উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাগদা ব্লকে যে ঘাটতি থেকে গিয়েছে তা দু’পক্ষই স্বীকার করেছেন। |