সাড়ে তিন মাস আগে বিষাক্ত মদ খেয়ে ব্যাপক প্রাণহানির পরেই ক্ষতিপূরণ বরাদ্দ হয়ে গিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে মামলা হওয়ায় আদালতের আদেশে সেই টাকা বিলি আটকে আছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সংগ্রামপুরের সেই ঘটনায় মৃতদের পরিজনদের ক্ষতিপূরণের টাকা বিলির উপরে শুক্রবার স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও ছ’সপ্তাহ বাড়িয়ে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। ফলে চলতি বছরে টাকা বিলি সম্ভব হচ্ছে না। এ খাতে বরাদ্দ টাকার কী হবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনার সংগ্রামপুরে বিষাক্ত চোলাই মদ খেয়ে ১৭২ জনের মৃত্যু হয়। তার পরেই মৃতদের পরিবার-পিছু দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ঘোষণা অনুযায়ী গত ১৮ জানুয়ারি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কাছে তিন কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দেয় রাজ্য সরকার। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী মৃতদের পরিজনদের হাতে ওই টাকা তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই অনুসারে শুরু হয় মৃতদের পরিজনদের নামে দু’লক্ষ টাকার চেক তৈরির কাজও।
প্রশ্ন ওঠে, বিষমদে মৃত্যুর জন্য
নগণের টাকা থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া সঙ্গত কি না। এর মধ্যেই ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ওই ক্ষতিপূরণ বিলি নিয়ে হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থের মামলা হয়। মামলাটির শুনানির পরে হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণের টাকা বণ্টনের উপরে স্থগিতাদেশ জারি করে। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার, সিআইডি এবং আবগারি দফতরকে দু’সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা পেশ করতে বলেছিল ডিভিশন বেঞ্চ। শুক্রবার সেই হলফনামা জমা দেওয়ায় কথা ছিল। কিন্তু রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হলফনামা তৈরি করতে আরও কিছুটা সময় প্রয়োজন। সরকারের আবেদন অনুযায়ী হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল ও বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন ওই মামলার শুনানি আরও ছ’সপ্তাহ স্থগিত রাখেন। সরকারি সূত্রের খবর, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ওই স্থগিতাদেশ থাকবে। এর ফলে ওই সময়ের মধ্যে বিষাক্ত মদ খেয়ে মৃতদের পরিজনকে কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবে না। মহাকরণ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী কোনও আর্থিক বছরে কোনও একটি খাতে টাকা বরাদ্দ করা হলে তা সেই আর্থিক বছরেই খরচ করতে হয়। যদি কোনও কারণে তা খরচ করা না-যায়, সে-ক্ষেত্রে বরাদ্দ টাকা ফেরত চলে যায় সংশ্লিষ্ট দফতরে। বিষমদের ক্ষেত্রে ২০১১-’১২ আর্থিক বছরে ‘এক্সগ্রাসিয়া’ বা এককালীন অনুদান খাতে ওই ক্ষতিপূরণের টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। তাই ওই টাকা ২০১২ সালের ৩১ মার্চের মধ্যেই খরচ করার কথা। কিন্তু হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের জেরে ওই টাকা চলতি আর্থিক বছরের খরচ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই এ ক্ষেত্রে তারা কী করবে, তা জানতে চেয়ে জেলা প্রশাসন মহাকরণকে চিঠি দিয়েছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। |