|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি ৩... |
|
মহিলারা...স্ট্রেট আবির ডাকলেই ভাল |
আবির চট্টোপাধ্যায়। ব্যোমকেশের বাইরে। দু’ বছরে পাল্টে যাওয়া জীবন।
প্রচুর মহিলা ফ্যান। স্টারডম। আড্ডা মারলেন দেবশ্রুতি রায়চৌধুরী-র সঙ্গে |
পত্রিকা: আপনার জীবনে তো এখন ‘ব’-এর বাড়াবাড়ি?
আবির: ব্যোমকেশ বক্সি তো?
পত্রিকা: আরও আছে...
আবির: (থমকে। একটু ভেবে) ‘বাইশে শ্রাবণ’, ‘বেডরুম’...আর...আর...
পত্রিকা: বিদ্যা বালন। ব্ল্যাকবেরি। এবং বিবিএম।
আবির: (হাসতে হাসতে) ও এই? তা ওটা তো বিদ্যা না, ভিদ্যা। অবশ্য আপনাদের কাগজেই ও বলেছে যে ‘বিদ্যা’ই ভাল। সে দিক থেকে ঠিকই আছে। আর ব্ল্যাকবেরি? আমি তো বলেইছি আমার কাছে বিবি হল ব্ল্যাকবেরি, ব্যোমকেশ বক্সি নয়। অতএব বুঝতেই পারছেন!
পত্রিকা: দু’বছর আগে প্রথম ব্যোমকেশের রিলিজের আগে আপনাকে ইন্টারভিউ করেছিলাম। আপনি বলেছিলেন, ‘এখন লোকে চিনতে না পারলে অস্বস্তি হয়’...
সেই সময় আর আজ... কতটা পাল্টেছে?
আবির: আগে চিনতে না পারলে খারাপ লাগত। এখন ‘২২শে শ্রাবণ’, ‘বেডরুম’, ‘আবার ব্যোমকেশ’এর পরেও যদি না চেনে তা হলে দুঃখ হবে। সেটা যতটা না নিজের জন্য তার চেয়ে ঢের বেশি বাংলা সিনেমার জন্য। কেন না এত ভাল কাজ হচ্ছে, আমরা সবাই মিলে আপ্রাণ চেষ্টা করছি- এর পরও যদি দর্শক বাংলা ছবির সঙ্গে একাত্মবোধ না করেন তা হলে কষ্ট হয়।
|
ছবি: সোমনাথ রায় |
পত্রিকা: এই যে রেস্তোরাঁয় বসে আড্ডা মারছি আশেপাশে আপনাকে নিয়ে গুজগুজ হচ্ছে তো...
আবির: হলে ভাল। কিন্তু এ রকম অভিজ্ঞতাও হয়েছে যে বিয়েবাড়িতে গেছি। এক মহিলা আমায় একটা টেলিভিশন সিরিয়ালের নাম করে বলেছেন, ‘তোমায় চিনি। ওই সিরিয়ালটায় করো।’ যত বোঝাচ্ছি যে আমি আর টেলিভিশনে কাজ করি না তিনি বুঝতে নারাজ। তার মানে কিছু লোকের মনে আমার টেলিভিশন অ্যাক্টর সত্তাটাই রয়ে গেছে। এটা ভাবলে খারাপ লাগে। বুঝতে পারি আরও ভাল কাজ করতে হবে।
পত্রিকা: আগের ব্যোমকেশে আপনাকে মানিয়েছিল দারুণ এ বিষয়ে কারও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু অভিনয় নিয়ে এটা-ওটা শুনতে কম হয়নি। সেই সব ভুল শুধরোতে কী করলেন?
আবির: ‘ক্রস কানেকশন’এর পরেই ব্যোমকেশ। আমি যাকে বলে আনকোরা তখন। তার ওপর এ রকম একটা আইকনিক ক্যারেক্টর। এখন বুঝতে পারি হ্যাঁ, ভুলত্রুটি ছিল। বিশেষত বাচিক অভিনয়ে। অঞ্জনদা আমাকে শেখানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আমি নিতে পারিনি সে ভাবে।
|
নিজস্ব চিত্র |
পত্রিকা: তাড়াতাড়ি ডায়লগ ডেলিভারি?
আবির: না। ওটা নিয়ে অতটা চিন্তিত ছিলাম না। কেন না আমার হোমওয়ার্ক বলছে ওই সময় তাড়াতাড়ি কথা বলা লোক ছিল না এমন নয়। আমার চিন্তার জায়গা ছিল ডাবিং। ‘ক্রস কানেকশন’এর সময় ডাবিংকে রীতিমতো ভয় পেতাম। প্রথম ব্যোমকেশেও সেই স্টিফ ব্যাপারটা ধরা পড়েছিল। গলা দিয়ে অভিনয় আর শরীর দিয়ে অভিনয় সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার! (চেয়ার থেকে একটু এগিয়ে) ‘কেমন আছেন?’ (আবার পিছিয়ে চেয়ারে একটু বেশি হেলান দিয়ে বসে) ‘কেমন আছেন?’ -গলায় কতটা তফাত হয়ে যায় দেখলেন? আমি এটা জানতামই না। স্ট্রেট ডায়লগ বলে যেতাম। এ ক্ষেত্রে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ‘২২শে’র ডাবিং-এর সময় একটা একটা করে শব্দ-‘এটা এ ভাবে বল, আর এক বার জোর দিয়ে বল’ করে করে আমাকে শিখিয়েছে।
পত্রিকা: তার ফল হাতেনাতে। ‘আবার ব্যোমকেশ’-এ তো লোকে দারুণ বলছে...
আবির: ওটা অঞ্জনদার কৃতিত্ব। কী পরিমাণে বকাঝকা করে আমাকে দিয়ে কাজটা করিয়ে নিয়েছেন ভাবতে পারবেন না। আগের বার অঞ্জনদা বলেছিলেন, ‘নিজের মতো করে কর’ আর এ বার ব্রিফটা ছিল ‘একটু ব্যোমকেশোচিত মস্তানিটা আনিস’। সেটাই ফলো করেছি শুধু।
পত্রিকা: খালি পলিটিক্যালি কারেক্ট উত্তর...
আবির: আরে না না। সত্যি।
পত্রিকা: আপনি কি জানেন আপনার এই সুমিষ্ট ভাষণ আর হরবখত পলিটিক্যালি কারেক্ট উত্তরের জন্য ইন্ডাস্ট্রিতে আপনাকে কোয়েল মল্লিকের যমজ বলেন অনেকে?
আবির: নায়িকার যমজ? এ বার কেঁদে ফেলব তো! তবে আগের থেকে অনেক সোজাসাপ্টা কথা বলি কিন্তু আজকাল। মানে কাজের জন্য যেটা দরকার সেটা বলতে শিখছি বলতে পারেন...
|
নিজস্ব চিত্র |
পত্রিকা: যেমন?
আবির: আগে ছবির পোশাকআশাক নিয়ে মাথা ঘামাতাম না। আজকাল ঘামাই। কেন না জানি ভুল জামাকাপড়, ভুল গেটআপে ব্র্যান্ডিং-এর ক্ষতি হবে। তেমনি কোন চরিত্র কী, কেন, সেটা নিয়ে প্রশ্ন করি...প্রয়োজনে বারবার করি।
পত্রিকা: খুঁতখুঁতে হয়ে গেছেন? আবির চট্টোপাধ্যায়-- স্টার এই শ্লাঘাটা মনে বাসা বাঁধছে? স্বাভাবিক! ‘আবার ব্যোমকেশে’ স্ক্রিনে আপনার নাম ভেসে উঠতেই যে ভাবে ‘আবির আবির’ চিৎকার দেখলাম...
আবির: ধুর! স্টারডম? শ্লাঘা? একদম না। আমি আমার কাজ, সেটা যতটুকুই হোক নিখুঁত করতে চাই শুধু। একটা উদাহরণ দিই। আমার স্কুলের কয়েকজন ছেলে ছবি করবে বলে আমার কাছে একটা স্ক্রিপ্ট নিয়ে এসেছিল। আমি মিনিট ১৫ শোনার পর বলি, ‘ইয়ার্কি মারছ’? জানি ওদের মনে হয়েছে এই আবিরদা দু’বছর আগে এরকম ছিল না। কিন্তু আমার বক্তব্য, বাংলা ছবি যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, দারুণ সব কাজ হচ্ছে, যাঁরা বাংলা ছবি দেখতেন না তাঁরা আবার হলমুখী হচ্ছেন সেখানে ১০টা হিন্দি ছবির টুকলি একটা স্ক্রিপ্ট বানিয়ে আমার কাছে আনলে এটাই শুনতে হবে।
পত্রিকা: মহিলা ফ্যানের সংখ্যা তো প্রতিদিন চড়চড়িয়ে বাড়ছে... কেউ আপনার গালের টোল দেখে মূর্ছা যাচ্ছেন...কেউ বলছেন ধুতি পাঞ্জাবিতে এত হ্যান্ডসাম আর কাউকে লাগে না...
আবির: ও রকম তো ফ্যানেরা লেখেই ট্যুইটারে...
পত্রিকা: বিদেশ থেকে ফ্যান চলে আসছেন ওয়াইন আর চকোলেট নিয়ে...বাজার তো দারুণ!
আবির: কী শুরু করেছেন বলুন তো? (লাজুক হাসি) এ সব তো হয়ই। আর আমি বিবাহিত জেনেও যে মহিলারা আমায় পছন্দ করছেন তার জন্য তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানাই...
পত্রিকা: আবার নীরস পলিটিক্যালি কারেক্ট উত্তর...
আবির: তা হলে একটু সরস করি? এই যে মহিলারা আবির স্যার-ট্যার বলেন, এগুলো ভাল লাগে না। দাদাটাও না। স্ট্রেট আবির বললেই ভাল...(চোখ মেরে) এটা নিশ্চয়ই পলিটিক্যালি কারেক্ট দিলাম না। তবে ইয়ার্কি না মেরে একটা কথা বলি। এক বন্ধু বলেছিল, যত দিন ছেলেরা হলে দেখে ‘গুরু গুরু’ না বলবে তত দিন জানবি তোর স্টার হওয়া হয়নি। সেটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি...।
পত্রিকা: হলে যাঁকে দেখে এখন ‘গুরু গুরু’ হয় তার সঙ্গে আপনার প্রতিযোগিতা শুরু তো?
আবির: (ভুরু কুঁচকে) কে?
পত্রিকা: দেব। ইন্ডাস্ট্রিতে বলাবলি হচ্ছে দেব হচ্ছেন উত্তমকুমারজনপ্রিয়তা, ক্যারিশমা, স্ক্রিন প্রেজেন্স। আর আপনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ইন্টেলেকচুয়াল। চূড়ান্ত হ্যান্ডসাম।
আবির: উফ্। আপনি সত্যি যা তা শুরু করেছেন। কারা এ সব নিয়ে কথা বলছে, আদৌ বলছে কি না আমি জানি না...
পত্রিকা: দেবের সঙ্গে তুলনা। উত্তম-সৌমিত্রর প্রেক্ষাপটে। ভাল লাগার কথা তো...
আবির: দেব দারুণ কাজ করছে। বীরভূমে শ্যুট করতে গিয়ে দেখেছি লোকে পাগলের মতো ওর কথা জানতে চাইছে। রাজ (চক্রবর্তী) ছিল ওখানে। ‘কানামাছি’র শ্যুট করছিলাম। রাজকে দেখে ওরা ভেবেছে দেব আছে। ওর তুলনায় আমি কিছুই না। আর উত্তমবাবু-সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তুলনা? একটা কথা বলি, অপরাধ নেবেন না। এই যে সবেতেই বাঙালির নস্টালজিয়া, খালি অতীতে চলে যাওয়া, এটার যেমন ভাল দিক আছে তেমনি খারাপও। পেছন দিকে টেনে ধরবে খালি। সামনে এগোতে দেবে না। থাক না এ সব। আমরা এখন কাজটা মন দিয়ে করি বরং...
পত্রিকা: দেবের এক ফ্যান তো আপনাকে সরিয়ে দেবকে ব্যোমকেশ করার দাবি জানিয়ে ট্যুইট করেছেন..
আবির: ওটা পড়ে আমি দেব আর রাণাদা (রাণা সরকার, ‘আবার ব্যোমকেশ’-এর প্রযোজক)-কে লিখেছিলাম, আমাকে যদি ব্যোমকেশের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয় তা হলে ঘনাদা-ফনাদা করতে হবে হয়তো। (থেমে) তবে আমি বিশ্বাস করি ব্যোমকেশের চরিত্রে আমার এখনও অনেক দেওয়ার আছে...
পত্রিকা: অঞ্জন দত্ত তো বোধহয় চারটে ব্যোমকেশের রাইটস কিনেছেন? তার দু’টো হয়ে গেল। আর আছে ‘কহেন কবি কালিদাস’ আর ‘বেণিসংহার’... তারপর?
আবির: তারপর কী? আবিরের কী হবে, না ব্যোমকেশের?
পত্রিকা: দু’টোই।
আবির: আমার ধারণা অঞ্জনদা আরও কিছু গল্পের রাইটস কিনবেন। আমি আপনাকে আরও ইন্টারভিউ দেব ব্যোমকেশ হয়ে। তা ছাড়া অন্য আরও ছবি...আর একটা কথা প্লিজ লিখবেন?
পত্রিকা: কী?
আবির: আবির চট্টোপাধ্যায় একটা ফাটাফাটি কমেডি রোলে অভিনয় করতে চায়। ব্যোমকেশ, অনিকেত সোম (‘প্রলয় আসছে’) এই সব করে লোকের এমন ধারণা হয়েছে... আমাকে অনেকে জিজ্ঞেসও অবধি করেছে ‘আবিরদা আপনি খুব সিরিয়াস না? হাসেন-টাসেন না। খারাপ কথা বলেন না।’ ভাবুন...
পত্রিকা: বলেন খারাপ কথা?
আবির: শেয়ার মার্কেটে কাজ করি। বাকিটা বুঝে নিন...
পত্রিকা: বুঝলাম। আগামী কয়েক বছরে আরও ব্যোমকেশ, ভিন্ন ধরনের চরিত্র, কমেডি... কিন্তু কোনও গসিপ টসিপ নেই বলছেন?
আবির: নাহ্। আমাকে নিয়ে গসিপে লোকে বিশ্বাস করে না। আমার ইমেজটাই অন্য রকম।
পত্রিকা: লোকে বিশ্বাস করে না... না কি আপনি খুব বুদ্ধিমান...?
আবির: হা হা হা।
|
|
|
|
|
|