মুখোমুখি ২...
একটা লোক আছে... কমফর্ট জোনে থাকতে দেয় না

পত্রিকা: এসি চালিয়ে বাড়িতে লেদার সোফাতে বসে থাকতে পারতেন, ল্যান্ড রোভার নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারতেন, শেষ ছবি এত বড় হিট যে আরামসে এক মাস বিদেশে ছুটিও কাটাতে পারতেন। সে সব না করে ৪০ ডিগ্রি গরমে হায়দরাবাদে পায়ে দড়ি বেঁধে ঝুললেন কেন?
প্রসেনজিৎ: হা, হা, হা, হা, হা! তার বিশেষ একটা কারণ আছে। অনেক দিন ধরে শুনতাম আমি শুধু এক ধরনের ছবিই করতে পারি। হার্ডকোর কমার্শিয়াল সিনেমা। মারামারির ছবি। তার পর ‘অটোগ্রাফ’, ‘মনের মানুষ’, ‘২২শে শ্রাবণ’ করলাম গত তিন বছর। সেগুলো যখন দারুণ ব্যবসা করল তখন শুনলাম লোকে বলছে প্রসেনজিৎ এখন এ রকম ছবি করতে পারলেই খুশি। আগের সেই হার্ডকোর বাণিজ্যিক ছবি করতে ও ভুলে গেছে। তাই ভাবলাম, সেই সব লোকদের বলার সময় এসেছে অন্য রকমের ছবি করতে গিয়ে, আমি ভুলে যাইনি কমার্শিয়াল ছবির কথা। আমি দু’টোই পারি। এই ‘বিক্রম সিংহ’ ছবিটাই সেটা প্রমাণ করবে।

পত্রিকা: কত দিন এ ভাবে কেব্ল থেকে ঝুলেছিলেন?
প্রসেনজিৎ: প্রায় তিন দিন চলেছিল শ্যুটিং। ওঠাচ্ছে, নামাচ্ছে, এক পায়ে ঝুলছি। সবাই বলছিল বুম্বাদা করছে কী করে? আমি কিন্তু এনজয় করছিলাম...

পত্রিকা: এই এত ঝুঁকি, এক বার রাইট উইং, এক বার লেফ্ট উইং... এই ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছেটা কী করে আসে বার বার আপনার মধ্যে...
প্রসেনজিৎ: এটা আমায় একজন বলে...
‘বিক্রম সিংহ’-র সেই দৃশ্যে
পত্রিকা: কে?
প্রসেনজিৎ: আমার ভিতরে একটা লোক আছে। সে অদ্ভুত ভাবে কী জানি কেন দু’বছর অন্তর জেগে ওঠে। খুব আস্তে আস্তে সে আমায় বোঝানোর চেষ্টা করে, এ বার স্ট্র্যাটেজি বদলানোর সময় এসেছে, এ বার অন্য রকম কিছু একটা করতে হবে। সে আমায় বলে লেফ্ট উইংয়ে খেলা হয়ে গেল, এ বার রাইট উইংয়ে যাওয়ার সময় এসেছে। কিন্তু সাবধানে যেও। কেউ যেন দেখতে না পায়। এই লোকটাকে বাঁচিয়ে রেখেছি। এ যত দিন আছে, তত দিন ঝুঁকি নেওয়াটা আমার জীবনের অঙ্গ হিসেবেই থাকবে...


পত্রিকা: সেই লোকটা আর কী কী বলে?
প্রসেনজিৎ: যখন সবাই বলত আমি গরিব ছেলের রোলে অভিনয় করতে পারব না, সেই লোকটা বলেছিল পারবে। সবাই যখন বলেছিল পাঁচ ফুটিয়া হিরো অ্যাকশন করতে পারবে না, তখন এই লোকটাই বলেছিল সব বাজে কথা, তুমি ঠিক পারবে। এই লোকটাই ‘অটোগ্রাফ’, ‘মনের মানুষ’, ‘২২শে শ্রাবণ’ করতে বলেছিল। আজকে এর জন্যই অশোকের (ধনুকা) এই ‘বিক্রম সিংহ’ ছবিটা করছি। মুম্বইতেও এই ছবিটা হচ্ছে। অক্ষয় কুমার করছে। ‘রাউডি রাঠৌর’ নামে। এবং আমার এই ছবিটাতেও কিন্তু শেষ পর্যন্ত দর্শক যেটা পাবেন সেটা আমার অভিনয়। ওটা নিয়ে কোনও কম্প্রোমাইজ নেই।

পত্রিকা: ‘মনের মানুষ’, ‘২২শে শ্রাবণ’-এর থেকে এই ছবিটা করা কি বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল?
প্রসেনজিৎ: না। দু’টোই চ্যালেঞ্জিং। আলাদা রকমের। ‘মনের মানুষ’, ‘২২শে শ্রাবণ’-এ মুখের এক-একটা মাস্ল দিয়ে অভিনয় করতে হয়েছে। এটায় পায়ের মাস্ল-য়ে টান পড়লেও লাফালাফি করতে হয়েছে। মারদাঙ্গা করতে হয়েছে। নাচতে হয়েছে। দু’টো আলাদা, আলাদা চ্যালেঞ্জ। দু’টোর মজাই অন্য রকম।

পত্রিকা: মানে যেটা দাঁড়াচ্ছে, ‘বিক্রম সিংহ’তে আবার আপনি ‘পোসেনজিৎ’-এ ফিরে যাচ্ছেন?
প্রসেনজিৎ: যারা আমায় পোসেনজিৎ বানিয়েছিল তাদের তো আমি ভুলতে পারি না। কত চিঠি আসে, স্টেজ শো করতে গিয়ে ‘রিফিউজি’র গান বাজলে আজও তারা নাচে। তাদের আমি ডিপ্রাইভ করব কী ভাবে? ওরা আমায় বাঁচিয়ে রেখেছিল ভাই, ওদের আমি ভুলতে পারব না। ওদের আবার করে খুশি করাটা আমার কর্তব্য।

পত্রিকা: সেটা করতে ‘কমফর্ট জোন’ থেকে বেরিয়ে আসতে আপনার আপত্তি নেই...
প্রসেনজিৎ: একটা সময়ের পর ‘কমফর্ট জোন’টা বোরিং জায়গা। আমি সব সময় তাই নিজের সামনে একটা অদৃশ্য চ্যালেঞ্জ খাড়া করি। যেটা সম্পূর্ণ ভাবে আমার বিরুদ্ধে। তার পর সেটাকে কী করে আমার ‘পক্ষে’ নিয়ে আসা যায় সেই খেলাটা খেলতে আমার ভাল লাগে। সেই কষ্ট, ব্যথা আর চ্যালেঞ্জটা আমার দারুণ লাগে। এটা কী রকম বলুন তো? সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো। ও আমার থেকে অনেক ওয়েল-টু-ডু। কোনও দরকার-ই নেই ওর মাঠে গিয়ে নিজেকে প্রমাণ করার। কিন্তু ওই যে বললাম, ‘কমফর্ট জোন’ থেকে বেরিয়ে আসা চাই। ওই বেরিয়ে এসে নিজেকে আবার প্রমাণ করার নেশাটাই সব। কী আমার, কী সৌরভের।

পত্রিকা: এই যে ‘কমফর্ট জোন’ থেকে বেরিয়ে আসার নেশা, এটা কি দেব বা জিৎকে চ্যালেঞ্জ জানানো?
প্রসেনজিৎ: ধুর, না, না। জিৎ তো আর নতুন নয়। সেই কবে ‘সাথী’ করেছিল। দেব, সোহমকে কী চ্যালেঞ্জ জানাব? চ্যালেঞ্জ করব নিজেকে। খুব খুশি হই যখন দেব, সোহম এসে বলে বুম্বাদা, এখনও কী নাচো তুমি? এখনও কী ফাইট করছ তুমি? চ্যালেঞ্জটা নিজের সঙ্গে। ওরা আমার ভাইয়ের মতো, ওদের সঙ্গে নয়। তবে হ্যাঁ, ওদের যদি অ্যাডভাইস দিতে বলেন, তা হলে বলব ইন্ডাস্ট্রি যে দিকে এগোচ্ছে, শুধু হিরো হয়ে থাকলে চলবে না। নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাটাও ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। এতে ওদেরও লাভ হবে শেষ পর্যন্ত।

পত্রিকা: শেষ প্রশ্ন। আপনার ভেতরের সেই লোকটা বলছে না, আবার পরিচালনায় ফিরুন?
প্রসেনজিৎ: বলছে তো। রোজ বলছে। কিন্তু সময় কোথায় পাচ্ছি। বিক্রম শেষ হলেই সৃজিতবাবুর (মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে কাকাবাবু। ‘বিক্রম সিংহ’তে মারামারি করতে করতেই কাকাবাবুর জন্য তৈরি হওয়া শুরু করে দিয়েছি। তার পর শমীক চট্টোপাধ্যায়ের একটা ছবি করছি। ওটা হলিউডের ‘দ্য বিউটিফুল মাইন্ড’-এর প্রতি আমার শ্রদ্ধার্ঘ্য। তারপর হিন্দি ছবিরও নানা অফার আসছে। সুজয় (ঘোষ), দিবাকর (বন্দ্যোপাধ্যায়)-রা যে ভাবে টলিউডকে জাতীয় মঞ্চে নিয়ে যাচ্ছে, এখন অফার আসাটা স্বাভাবিক। এই করতে করতেই তো এ বছরটা চলে যাবে। ভিতরের লোকটা বললেও তাই এখনই পরিচালক হতে পারছি কই?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.