|
|
|
|
বর্ষায় এ বারও বন্যার আশঙ্কা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • এগরা |
‘কেলেঘাই-কপালেশ্বরী-বাগুই বেসিন ড্রেনেজ স্কিমে’ সংস্কারের কাজ শুরু হলেও এ বারও বর্ষায় বন্যার কবলে পড়তে হতে পারে পূর্ব মেদিনীপুরের নদী সংলগ্ন এলাকাগুলির মানুষকে।
ঠিক হয়েছিল ‘কেলেঘাই-কপালেশ্বরী-বাগুই বেসিন ড্রেনেজ স্কিমে’ সংস্কারের কাজ শুরু হবে কেলেঘাই নদীর মোহনা থেকে। সেখানে পশ্চিম মেদিনীপুরে কপালেশ্বরী নদী সংস্কারের পরেই শুরু হয়েছে জেলার বিভিন্ন খাল-সংস্কার। কাজও চলছে দ্রুতগতিতে। অথচ, পূর্ব মেদিনীপুরের নদী-খাল সংস্কারের কাজ এখনও শুরুই হয়নি। এ দিকে, পশ্চিমের কপালেশ্বরী নদী ও শাখা খালগুলি সংস্কার হলে ভৌগোলিক ভাবে উঁচু জায়গায় থাকা সবং, নারায়ণগড়, বেলদা, ডেবরা এলাকার জল দ্রুত এসে পড়বে কেলেঘাইয়ে। ফলে, এ বারও বর্ষায় ফের বন্যার আশঙ্কা রয়েছে পটাশপুর-১, ২ ও ভগবানপুর-১, ২ ব্লক এবং সংলগ্ন এলাকাগুলিতে। পূর্ব মেদিনীপুরের সেচ দফতরের বিরুদ্ধে কাজে গড়িমসির অভিযোগ তুলে এবং বন্যার আশঙ্কা করে বুধবার জেলা পরিষদে স্মারকলিপি দিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা।
গড়িমসির অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও বন্যার আশঙ্কার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন সেচ দফতরের কাঁথি বিভাগের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র স্বপন পণ্ডিত। তিনি বলেন, “বিভিন্ন স্তরের কয়েকটি বৈঠকে স্থির হয়েছিল কেলেঘাই নদীর মোহনা অংশে আগে কাজ হবে। কারণ, নাঙলকাটা থেকে ঢেউডাঙা পর্যন্ত এলাকায় অত্যধিক পলি জমার ফলে জল-নিকাশি খুব ধীরে হয়। ফলে নদীর দু’পাড় সংলগ্ন এলাকায় যেমন বন্যা হয়, তেমনই জলের চাপে নদীবাঁধ ভেঙে যায়। এই অংশের কাজ আগে হলে নিকাশি ও বন্যা সমস্যা প্রায় থাকেই না। কিন্তু মূল নদীর কাজ হওয়ার আগে উঁচু এলাকা পশ্চিমের নদীখাল সংস্কার হয়ে গেলে পূর্বে বন্যার আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে।”
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালেই পশ্চিমের কপালেশ্বরী নদী সংস্কারের কাজ অনেকটা হয়ে গিয়েছে। ২০১১-১২ সালে কাজ হচ্ছে অন্য খালগুলির। স্বপনবাবু জানান, ওই অংশে কাজের জন্য ‘ওপেন টেন্ডার’ হওয়ায় টেন্ডার ও ওয়ার্ক-অর্ডারের কাজ দ্রুত ও সহজে হয়েছে। ফলে সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু নাঙলকাটা থেকে ঢেউভাঙা পর্যন্ত যে ২১.৫ কিলোমিটার অংশের কাজের জন্য টেন্ডার দেওয়া হয়েছে, তা ‘ইন্টারনেট টেন্ডার’। যার প্রস্তুতি সময়সাপেক্ষ। ইতিমধ্যে টেন্ডার দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। এ বার তা দফতরের সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়রের অনুমোদন-সাপেক্ষ। অনুমোদন পেলেই ‘ওয়ার্ক-অর্ডার’ দেওয়া হবে। তিনি জানান, ওই ২১.৫ কিলোমিটার অংশে মোট তিনটি পর্যায়ে টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। নাঙলকাটা থেকে চাবুকিয়া পর্যন্ত ৮ কিমি অংশে ৪ কিমি করে দু’টো পর্যায়ে ৪৮ কোটি টাকা এবং চাবুকিয়া থেকে ঢেউভাঙা পর্যন্ত ১৩.৫ কিমি-র জন্য ৮৫ কোটি টাকা খরচ হবে। স্বপনবাবুর আরও ব্যাখ্যা, মূল নদীর কাজে আংশিক জমি অধিগ্রহণের ব্যাপারটা রয়েছে। তাই সমস্যা ও জটিলতা এড়াতে ‘ধীরে চলো’ ভাব নিয়ে পদ্ধতিগত কাজ হচ্ছিল। নদীপ্রবাহের মধ্যে ও নদী-পাড়ের মনুষ্যসৃষ্ট বাধাগুলি সরানোটাও প্রক্রিয়াগত ব্যাপার। তাই কাজের অগ্রগতিও কম। পটাশপুরের তৃণমূল নেতা মৃণালকান্তি দাস, ভগবানপুরের স্বপন রায় বলেন, “নদীর (পূর্ব মেদিনীপুর) অংশের পাড়ের গোকুলপুর, সেলমাবাদ, তালাডিহা অংশের বাঁধ এমনিতেই দুর্বল। ২০০৮-এর বন্যায় এই অংশই ভেঙেছিল। যেখানে পূর্ব মেদিনীপুর অংশের কাজ করা আগে জরুরি সেখানে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে পশ্চিমকে।” মূলত, সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার অতিরিক্ত তদারকিতেই যে পশ্চিম মেদিনীপুরের কাজ অনেক এগিয়ে, তা তৃণমূল নেতারা একান্তে বললেও জোট সরকারের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আপাতত প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তাঁরা। জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন বলেন, “বন্যার আশঙ্কা ও সমস্যার কথা জানিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে জেলা পরিষদ থেকে চিঠি দিচ্ছি। পূর্বে কাজ দ্রুত শুরু করার দাবি জানানো হবে।” তিনি জানান, দ্রুত কাজ করার ব্যাপারে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রশাসন, সেচ দফতর ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হচ্ছে। সেখানে থাকবেন সাংসদ ও বিধায়কেরাও।
|
|
|
|
|
|