|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা: গড়িয়া, সোনারপুর
|
শুধুই জ্বালা |
হুলেশ্বরী |
দেবাশিস দাস |
কলকাতা লাগোয়া রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ওয়ার্ডগুলিতে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, প্রতি বছর গরম পড়তেই এবং বর্ষার শেষে মশার উপদ্রব বাড়ে। পুরকর্মীরা মাঝেমধ্যে মশা মারার তেল ছড়ালেও কোনও লাভ হয় না।
রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পুরসভায় মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য শুধুমাত্র মশা মারার তেল বা ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে। মশা মারার তেলও সব সময় পাওয়া যায় না। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের কোনও দিনই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযোগ। যে কীটনাশক ছড়ানো হয়
তা এক ধরনের ভেষজ কীটনাশক বলে পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে। মশা মারার তেল ছড়ানোর কাজে যুক্ত এক পুরকর্মীর কথায়: ‘‘সারা বছরই কীটনাশকের অভাব লেগে থাকে। প্রয়োজনমতো অধিকাংশ সময়েই পাওয়া যায় না।” |
|
মশা নিয়ন্ত্রণের আদৌ কোনও পরিকাঠামো আছে কি না জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান পুর-স্বাস্থ্য আধিকারিক সুভাষ দেবনাথ। তিনি শুধু বলেন, “আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই মশা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি দেখি। তবে এই সমস্যার সমাধান সহজে হওয়ার নয়।”
কিন্তু রানিয়া, বোড়াল, শ্রীপুর, লস্করপুর, গড়িয়া এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, মশার উপদ্রব প্রচণ্ড। এই সমস্ত এলাকায় ভূগর্ভস্থ নর্দমা নেই। খোলা নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। অপরিষ্কার নর্দমা, সংস্কার না হওয়া টলিনালা এবং আদিগঙ্গার অংশ এই এলাকায় মশার আঁতুড় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। রানিয়ার বাসিন্দা উৎপল সরকারের অভিজ্ঞতা: “শুধু মশার উপদ্রবই নয়, প্রতি বছর আমাদের এলাকায় ম্যালেরিয়ায় কেউ না কেউ আক্রান্ত হন। মশা আমাদের কাছে আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বিভাগে স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা খুব কম। মশার জন্ম নিয়ন্ত্রণ বা মশাবাহিত রোগ মোকাবিলার মতো কাজের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত থাকেন তাঁরা প্রকল্পের আওতায় ঠিকাকর্মী। তাঁদের পারিশ্রমিকও খুব কম। ফলে এই ধরনের কাজের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ার ক্ষেত্রে কর্মীর অভাবও একটা বড় সমস্যা। কলকাতা পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, “যে কোনও এলাকায় মশার জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য সংশ্লিষ্ট পুরসভার এক জন পতঙ্গবিদ নিযুক্ত করা প্রয়োজন। যে সব
কর্মী মশা মারার তেল ছড়ানোর কাজে যুক্ত থাকবেন তাঁদের নিয়মিত প্রশিক্ষণেরও
ব্যবস্থা করা দরকার। মশা মারার জন্য যে কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে তা কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল ভেক্টরবোর্ন ডিসিস কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (এনভিবিডিসিপি) অনুমোদিত হওয়া দরকার।”
পুরসভায় বিরোধী বামফ্রন্টের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, মশার তেল ছড়ানোর কাজ নিয়ম অনুযায়ী হচ্ছে না। তাদের বক্তব্য, মশার লার্ভা মারার জন্য দশ দিন অন্তর যে কোনও জায়গায় কীটনাশক ছড়ানোর নিয়ম। কিন্তু এখন সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান সিপিআইয়ের তড়িৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের আমলে এই সমস্ত ক্ষেত্রে একটা নিয়ম মেনে কাজ হত। কিন্তু এখন আর সে সব নিয়ম মানা হচ্ছে না। ফলে মশাও আর নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।”
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে পুরপ্রধান তৃণমূলের ইন্দুভূষণ ভট্টাচার্য বলেন, “নিয়ম করে প্রতি সপ্তাহে মশা মারার তেল ছড়ানো হয়। সেই তেলে মশা মরে না, লার্ভা মরে। পুর এলাকার অনেক ওয়ার্ডেই এখনও হোগলার বন রয়েছে। সেই সব জায়গাতেও নিয়ম করেই মশা মারার তেল ছড়ানো হয়।”
|
অলঙ্করণ: দেবাশীষ দেব।
|
|
|
|
|
|