|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা
|
রানিয়া |
পরিস্রুত অপ্রাপ্তি |
দীক্ষা ভুঁইয়া |
কল আছে, জলের পাইপলাইনও রয়েছে। কিন্তু তাতে পানীয় জল আসে না। আবার কোথাও লাইন নিচু করলে জল পাওয়া যেতে পারে এই আশায় বাড়ির সামনে দু’-তিন ফুট গভীর গর্ত খোঁড়া হয়েছিল। তাতেও লাভ হয়নি। ফলে কোথাও পাইপলাইনের মুখ থেকে কলটি খুলে রাখা হয়েছে, কোনও বাড়িতে কলের জল পাওয়ার জন্য যে গর্ত খোঁড়া হয়েছিল, তা আগাছার জঙ্গলে ভরে উঠেছে।
অভিযোগ, পানীয় জলের জন্য কলের লাইন বসানো হলেও আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল পান না অধিকাংশ গ্রামবাসীই। শুধু তাই নয়, পুরো গ্রামটিতে নলকূপের সংখ্যাও মাত্র আট, যার মধ্যে কাজ করে মাত্র চারটি। ফলে সাতগাছিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের রানিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সেহাই গ্রামে পরিস্রুত পানীয় জলের হাহাকারের দৃশ্য খুবই প্রকট।
আর্সেনিকমুক্ত ডোঙারিয়া জলপ্রকল্প বড়জোর চার কিলোমিটার দূরে। প্রকল্পের পাইপলাইনও গিয়েছে এলাকার উপর দিয়ে। আর্সেনিকমুক্ত এই জল পাওয়ার জন্য টাকা খরচ করে বাড়িতে পাইপলাইনের সংযোগ নিয়েছিলেন গ্রামের সকলেই। কিন্তু তার পরেও তাঁরা আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল পান না বলে গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ।
|
|
কোনও কোনও বাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে সামান্য জল পাওয়া গেলেও তা অনেক কষ্টে সংগ্রহ করতে হয়। অনেক বাড়িতে পুকুরের মধ্য দিয়ে জলের পাইপলাইন গিয়েছে, নিচু এলাকা দিয়ে পাইপলাইন নিয়ে গেলে জল পাওয়া যাবে এই আশায়। সেখানে পুকুরের যে ঘাট, তার সিঁড়িতে কলের মুখে বাটি করে জল সংগ্রহ করছেন গ্রামের বধূরা। কোনও বাড়িতে এ ভাবে একটু-আধটু পরিস্রুত পানীয় জল পাওয়া গেলেও বাকিরা একেবারেই জল পান না বলে অভিযোগ।
জলের অভাবে দূরের নলকূপ থেকে জল আনতে হয় বাসিন্দাদের। পানীয় জলটুকু এ ভাবে সংগ্রহ করেও সমস্যা মেটে না। সারা দিনের নানা কাজের ব্যবহারের জন্য জল বলতে পুকুরের নোংরা কালো জল। সেই জলেই চলছে বাসন ধোয়া, কাপড় কাচা। জলের কথা জিজ্ঞাসা করলেই সেহাই গ্রামের বাসিন্দাদের কাছ থেকে মন্তব্য ভেসে আসে, “আমরা এত জল পাই যে কোথায় রাখব বুঝতে পারি না।
তাই পুকুরের জল ব্যবহার করি।”
গ্রামেরই একটি পাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, নলকূপের হাতল নেই। উল্টে কলের মুখ থেকে দড়ি দিয়ে ছাগল বাঁধা রয়েছে। পাড়ার বেশ কয়েক জন মহিলা জানালেন, নলকূপটি দু’মাস আগে পঞ্চায়েত থেকে বসিয়ে দিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রথম থেকেই কলের হাতল নেই।
|
|
রানিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রুমা মণ্ডল জল সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, “আমাদের পঞ্চায়েতে জল সমস্যা
বরাবর। কারণ, যত সংখ্যক গ্রাহক থাকা দরকার, তার থেকে বেশি গ্রাহককে জলের লাইন দেওয়া হয়েছে। আগের পঞ্চায়েত সমিতিতে যাঁরা ছিলেন তাঁরা এই লাইন দিয়েছেন। ফলে সমস্যা বেড়েছে।” পরে জলের সমস্যা আরও বাড়বে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
পাশাপাশি, বজবজ-২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির স্বপন রায়ও জলকষ্টের কথা স্বীকার করে বলেন, “আমাদের এই জল উৎপাদন, সরবরাহ এবং দেখভালের দায়িত্ব জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের (পিএইচই)। কিন্তু জল সরবরাহ ঠিকঠাক হচ্ছে কি না তা কোনও দিনই ওরা দেখে না।” রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “এখন ওই এলাকার মানুষ জল পাচ্ছেন না ঠিকই। তবে, তাঁরা যাতে জল পান তার জন্য আমি ওই এলাকা পরিদর্শন করে একটি জলপ্রকল্পের উদ্বোধন করেছি। কাজও শুরু হয়েছে।” |
|
|
|
|
|