উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
দিল্লিপাড়া
শিবঠাকুরের আপন দেশে
তিনি এলাকার বিধায়ক। তিনি রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রীও বটে। অথচ, তিনি, মদন মিত্র জানেনই না তাঁর নির্বাচনী এলাকার পরিবহণের বেহাল দশার কথা!
ঘটনাস্থল আড়িয়াদহ। আরও নির্দিষ্ট করে বললে দিল্লিপাড়া। পূর্বে বিটি রোড, পশ্চিমে গঙ্গা, উত্তরে কামারহাটি ও দক্ষিণে দক্ষিণেশ্বর নিয়ে অবস্থান এই দিল্লিপাড়ার। বহু পুরনো এই জনপদে আজও পরিবহণ ব্যবস্থা নিয়ে সমস্যা মিটল না। আজও পরিবহণ ব্যবস্থার বেহাল দশায় দুর্ভোগে পড়ছেন বাসিন্দারা। বাস এলাকায় ঢোকে না, অনেকটা হেঁটে গিয়ে অটোয় ওঠা যায় বটে, যদি আদৌ তা ফাঁকা থাকে। পরিবহণ বলতে নিজস্ব সাইকেল, মোটরবাইক, না হলে রিকশা অথবা স্রেফ হাঁটা ছাড়া গতি নেই। বিটি রোড থেকে দিল্লিপাড়ায় যাতায়াত করতে লাগে দু’পিঠ মিলিয়ে ৩৬-৪০ টাকা। প্রশাসনের মতে, পর্যাপ্ত পরিমাণ রাস্তা না রেখেই বসতি তৈরি হয়ে রয়েছে। বাস চলাচলের মতো উপযুক্ত রাস্তা নেই। তবে বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।
অথচ, তাঁর এলাকার পরিবহণের এই বেহাল অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “এই সমস্যার কথা শুনলাম। বাসিন্দারা লিখিত ভাবে তাঁদের দাবিদাওয়া জানালে পরিবহণ দফতরের তরফ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” স্থানীয় বিধায়কের এই মন্তব্য শুনে স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ মন্তব্য করেন, ভোটের প্রচারের সময়েও তো মদনবাবু এলাকায় ঘুরেছেন। তিনি তো এই পরিস্থিতির কথা সম্যক জানেন। বিধায়ক হিসেবেই তো তিনি এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হতে পারেন। তা হলে আবার লিখিত ভাবে এই দাবি জানানোর কী থাকতে পারে?
পরিবহণের বেহাল অবস্থা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে নানা মহলে দরবার করেও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। অভিযোগের জবাবে অবশ্য রাজ্য সরকার থেকে স্থানীয় পুর প্রশাসন, প্রতিশ্রুতিই একমাত্র সম্বল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার রাস্তা খুব চওড়া নয়, সে কারণেই ছোট বাস চলাচলের দাবিও করা হয়েছিল প্রশাসনের কাছে। কিন্তু কোনও কাজই হয়নি। প্রশাসন অবশ্য বলছে, ছোট বাস চালুর চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতায় তা শেষমেশ হয়নি। বাসিন্দাদের অবশ্য বক্তব্য, এই ধরনের চেষ্টা খুব বেশি হয়নি।
এলাকাটি কামারহাটি পুরসভার আওতাধীন। এখানকার পুরপ্রধান অবশ্য এই সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তবে মদনবাবুর মতো তিনিও ‘লিখিত অভিযোগ’ চাইছেন। পুর-চেয়ারম্যান সিপিএমের তমাল দে বলেন, “এই সমস্যা সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। তবে বাসিন্দারা লিখিত অভিযোগ জানালে আমরা কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হব।”

বাসিন্দাদের নিত্যকার অভিজ্ঞতা কী বলছে?
রথতলার মোড় থেকে দিল্লিপাড়ায় আত্মীয়ের বাড়ি যাবেন বলে রিকশা ধরতে যাচ্ছিলেন গড়িয়ার বাসিন্দা মনোজ বসু। কিন্তু রিকশার ভাড়া শুনে চক্ষু চড়কগাছ তাঁর। বললেন, “পুর এলাকা, অথচ কোনও পরিবহণ ব্যবস্থা নেই। এইটুকু রাস্তা, অথচ রিকশা ভাড়া বলছে কুড়ি টাকা। এর থেকেও কম খরচে আমি গড়িয়া থেকে রথতলা এলাম।”
বহিরাগতদের মতো স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য এতটা অবাক হন না। বাধ্য হয়ে চলতি ব্যবস্থাতেই যেন মানিয়ে নিচ্ছেন সকলে। বেলঘরিয়ার সুমিতা সেনরায়ের কথায়: “রথতলার মোড় থেকে দিল্লিপাড়ার একটি স্কুলে ছেলেকে নিয়ে যেতে রিকশায় ১৫ টাকা লাগে। যাতায়াতে ৩০। প্রশাসন থেকে নেতারা কি এই সমস্যা দেখেও দেখেন না?” ডানকুনির এক স্কুলের শিক্ষিকা তমালি চাকী বললেন, “আমি আড়িয়াদহের বিন্ধ্যবাসিনীতলা রোডে থাকি। স্কুলে যেতে এখান থেকে দক্ষিণেশ্বর রিকশায় যাতায়াতে প্রায় ৩০ টাকা ভাড়া লাগে। সেই হিসেবে আমাকে বছরে বেশ কয়েক হাজার টাকা রিকশা ভাড়া দিতে হয়।” শুধু তাই নয়, সারা বছর রিকশার ভাড়া এক থাকে না। গরমে, বর্ষায় বা পুজোয় রিকশাচালকেরা ইচ্ছামতো বেশি ভাড়া চান বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। রিকশাচালকদের অবশ্য বক্তব্য, বহু সময় ফেরার পথে সওয়ারি পাওয়া যায় না। পাশাপাশি, দূরত্বের কারণেও ভাড়া বেশি চাইতে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের ক্ষোভ: “নামেই শহরতলি। আসলে গ্রাম। অটো ধরতে গেলেও অনেকটা হেঁটে মৌসুমি মোড়ে যেতে হয়। অথচ সেখানে অটো যাত্রিবোঝাই হয়েই আসে। বিটি রোড যেতে-আসতে ৪০ টাকা ভাড়া লাগে। অনেক বার আমরা চেষ্টা করেছি, কিন্তু কাজ হয়নি। ছোট বাস চালুর জন্য স্ট্যান্ড তৈরি হলেও তা পড়েই আছে। প্রতিশ্রুতি ছাড়া প্রশাসনের তরফে কিছুই মেলেনি।” যদিও ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক অজয় পাল বলেন, “এমন কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে বাসিন্দাদের সমস্যা শুনলাম। নিশ্চিত ভাবেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”

ছবি: সুদীপ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.