ফ্ল্যাশব্যাকে এখনও ঘুরেফিরে আসে অভিশপ্ত সেই রাত। এখনও শুনতে পান উত্তপ্ত ইডেনের এ দিক ও দিক থেকে উড়ে আসা ক্ষিপ্ত ও চোখা সব মন্তব্য। চোখ বন্ধ করলে নির্ঘাত আজও ভেসে ওঠে স্তম্ভিত অধিনায়কের হতাশা, নির্বাক কোচের মুখের জ্যামিতি।
২২ মে ২০১১। কেকেআর সমর্থকদের স্মৃতিতে থাকবে, থাকবে লক্ষ্মীপতি বালাজির মনেও। শেষ ওভারে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে ২৩ রানের মোড়কে ম্যাচ উপহার দেওয়ার ইতিবৃত্ত তাঁকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে আজও। ২০১২-র বালাজি তাই টিম হোটেলে বসে-বসেই ফিরে যাচ্ছেন ২০১১-র ইডেনে। খুঁজছেন দুঃস্বপ্ন থেকে বেরনোর রাস্তা। “আমার কেরিয়ারে অনেক শেষ ওভার বল করেছি। কিন্তু ওই দিনটা মনে করলে এখনও কষ্ট হয়। অত কাছে গিয়েও জিততে পারলাম না...” গলায় অবধারিত ভাবে ধরা পড়ে হতাশা। যদিও প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঢুকে পড়তে চান ভবিষ্যতের আলোয়। “যাক গে, এক বছর তো প্রায় হয়ে গেল। দুঃখ করে কী হবে? ওটা এখন অতীত। তার চেয়ে বর্তমানে থাকাটাই ঠিক আছে। ওই ঘটনা থেকে ইতিবাচক কিছু নিয়ে এগিয়ে যাওয়া ভাল।” |
কেকেআরের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎদুই নিয়েই নতুন ভাবনার শরিক বালাজি। বিশেষ করে উত্তেজিত ব্রেন্ডন ম্যাকালামের প্রত্যাবর্তনে। “ম্যাকালাম দুর্দান্ত ওপেনার। কিপিংটাও করে। দুটো স্লট ও ভরে দেওয়ায় অপশন অনেক বেড়ে যাবে। বাড়তি বোলার নেওয়ার সুযোগও থাকবে।” নতুন কোচকে কেমন লাগছে? “বেলিসের নতুন কিছু চিন্তাধারা আছে। উনি বলেছেন নিজেরা চাপ না নিয়ে সেটা বিপক্ষ দলের ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে। উনি যে ক্রিকেটারদের আলাদা আলাদা ব্যক্তি হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছেন, সেটা খুব ভাল লাগছে। বেলিস বলেছেন, তোমাদেরই মাঠে নেমে খেলতে হবে তাই তোমরা নিজেরা কী ভাবছ সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া ক্রিকেটারদের সঙ্গে খুব ভাল যোগাযোগ করতে পারেন উনি।”
আইপিএল ফাইভে ভাল পারফরম্যান্স তামিল পেসারকে সেপ্টেম্বরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের টিকিট দিতেই পারে। প্রত্যাবর্তন তাঁর কাছে নতুন নয়। গুরুতর চোট সারিয়ে, বোলিং অ্যাকশনে হেরফের করে জাতীয় দলে কামব্যাক করেছেন বালাজি। এই মুহূর্তে যদিও তাঁর ভাবনায় শুধুই আইপিএল। “আমি ক্রিকেট ভালবাসি। কোন দলের হয়ে খেলছি সেটা নিয়ে বেশি ভাবি না। পনেরো বছর আগে যখন খেলা শুরু করেছিলাম তখনকার এনার্জি, খেলার প্রতি ভালবাসা এখনও এক রকম আছে। নিজের কেরিয়ারটা প্রচণ্ড উপভোগ করছি।”
জাহির খানের উত্তরসূরি হিসেবে অশোক দিন্দাকে কোথায় রাখবেন? “দিন্দার এই মরসুমটা অসাধারণ গিয়েছে। তামিলনাড়ুর অধিনায়ক হিসেবে বাংলার বিরুদ্ধে ম্যাচে দেখেছি, দিন্দা নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। দিন্দা ছাড়া উমেশ যাদব, বরুণ অ্যারনরা আছে। এদের প্রত্যেককে যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া দরকার। ভারতের ‘এ’ টিমের হয়ে বিদেশে খেলা দরকার। তাতে অভিজ্ঞতা বাড়বে।” ভারতের প্রথম এগারোর অন্যতম দাবিদার, কেকেআরে তাঁর সতীর্থ মনোজ তিওয়ারিকে নিয়েও আশাবাদী বালাজি। “ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত বড় রান করছে মনোজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরিটার পরেই ওকে ফোনে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলাম। ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য ও খুব ভাল প্রতিশ্রুতি।”
বেলিস, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, দিন্দা, মনোজ, কেকেআর লক্ষ্মীপতি বালাজির পৃথিবী বলতে এখন অতীত ভুলে বর্তমান নিয়ে বাঁচতে চাওয়া। ভবিষ্যতের দিকে তাকানো। আর সেই ‘ভুলিয়ে দেওয়া’র মঞ্চটা ব্যবহার করতে চান পুরোদমে। “কলকাতা নিয়ে আমার খুব ভাল কিছু স্মৃতি আছে। এখানকার মানুষ খুব নম্র। আমার নিজের শহরের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমি চাই আগেকার কথা ভুলে আইপিএল ফাইভ-কে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখতে।”
এক কথায় এই বালাজি নতুন করে নিজেকে আবিষ্কারের খোঁজে ব্যস্ত। |