মুম্বই এফ সি ১ (নিকোলাস)
ইস্টবেঙ্গল ৩ (টোলগে পেনাল্টি, রবিন, এডমিলসন)
|
রবিবার কি আপনি মোহনবাগানের সমর্থক? প্রশ্ন শুনে হো-হো করে হেসে ফেললেন ট্রেভর জেমস মর্গ্যান। বললেন, “চাইব ম্যাচটা ড্র হোক।”
কোচের সঙ্গে অবশ্য একমত নন ইস্টবেঙ্গলের অস্থায়ী অধিনায়ক সঞ্জু প্রধান। “ডেম্পো হারলেই আমাদের বেশি লাভ।” কোচের নির্দেশে টোলগে-ওপারা-পেনদের মুখ বন্ধ। কিন্তু ব্যক্তিগত কথাবার্তায় প্রায় সবাই চাইছেন জিতুক সুব্রত ভট্টাচার্যের মোহনবাগান। তাঁদের আবার অন্য অঙ্ক।
গোয়ার টিমের খেতাব আটকাতে দুই প্রধান একজোট, এরকম ছবি শেষ কবে দেখা গেছে মনে করা যাচ্ছে না। তবে এটা ঘটনা, লিগ টেবিলের যা অবস্থা তাতে ওডাফা-ব্যারেটোরাই খেতাবের দৌড়ে একমাত্র বাঁচিয়ে রাখতে পারেন নিজেদের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলকেও।
বেঁচে থাকার জন্য ইস্টবেঙ্গল অবশ্য শুক্রবার তাদের যা করণীয় সেটা করে রাখল। মুম্বই এফ সি-কে হারিয়ে ডেম্পোকে চাপে রেখে দিল তারা। জয়টা যতটা মসৃণ হবে আশা করা গিয়েছিল ততটা হল না। হরমনজিৎ-নির্মলরা জিতলেন বটে, তবে তার জন্য প্ল্যান বি প্রয়োগ করতে হল মর্গ্যানকে।
মাঠে আসার আগে বরাবরই মর্গ্যান সাদা কাগজে তিনটে ফর্মুলা লিখে আনেন পুরো নম্বর পাওয়ার জন্য। পকেটে যত্ন করে রাখা থাকে সেটা। টিম চাপে পড়লেই সেটা বের করেন। তাঁর নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গেই বদলে যায় টোলগে-ওপারা-পেনদের খেলার জ্যামিতি। গত কুড়ি মাস ধরেই এটা চলে আসছে। |
অবনমনে চলে যাওয়া মুম্বই শুরুতেই জোর ধাক্কা দিয়ে বিপদে ফেলার ইঙ্গিত দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গলকে। গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ার পরই চিন্তিত মর্গ্যানকে দেখা গেল পকেট থেকে কাগজ বের করে রিজার্ভ বেঞ্চে পায়চারি করছেন। এক বার মাথা নাড়লেন। নিজে নিশ্চিত হলেন। তারপর আঙুল তুলে কয়েকটা জায়গা পরিবর্তনের নির্দেশ। আর তাতেই খালিদ জামিলের দল নতজানু।
টোলগের যে পেনাল্টি গোলে ইস্টবেঙ্গল সমতায় ফিরল সেটা নিয়ে ম্যাচের পর ঘুরিয়ে কটাক্ষ করছিলেন মুম্বই কোচ। ইঙ্গিতটা স্বাভাবিকভাবেই রেফারির দিকে। কিন্তু গোলটা নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশই নেই। মুম্বই বক্সে ঢুকে পড়া টোলগেকে পিছন থেকে কার্যত ল্যাং মেরে ফেলে দিয়েছিলেন কেভিন লোবো। আর ওই গোলের তিন মিনিটের মধ্যেই রবিন সিংহের বাঁ পায়ের বুদ্ধিদীপ্ত গোলটা কিন্তু খালিদের ভুল স্ট্র্যাটেজির জন্যই।
ইস্টবেঙ্গল শুরু করেছিল ৪-৩-৩ ফর্মুলায়। সামনে টোলগে-বলজিৎ-রবিনকে রেখে। কোচের নির্দেশ মতো তাঁরা বারবার নিজেদের মধ্যে জায়গা বদল করছিলেন এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। এই বোঝাপড়া আটকাতে দরকার ছিল পাল্টা অঙ্কের। কিন্তু আই লিগের সবথেকে জুনিয়র কোচ খালিদ মনে হল একটা ফর্মুলাই শিখে এসেছিলেন। তার সেই ৩-৫-২- এর অঙ্ক তাই বদলাল না।
ইস্টবেঙ্গল মাঝমাঠের ব্রহ্মাস্ত্র পেন ওরজিকে অকেজো করতে নাইজিরিয়ান সুকোরকে লাগানো হয়েছিল। শুরুতে তাই লাল-হলুদের ফরোয়াডের্রা তেমন বল পাচ্ছিলেন না। আটকেও যাচ্ছিলেন পায়ের জঙ্গলে। পেন আটকে গেছেন দেখে সঞ্জু আর হরমনজিৎকে উইং দিয়ে আক্রমণে পাঠালেন মর্গ্যান। প্ল্যান বি-র সেই অস্ত্রেই চিড় ধরল মুম্বই ডিফেন্সে। মরসুমে প্রথমবার দুই সিংহ-- রবিন আর বলজিতের যুগলবন্দির গোল দেখল যুবভারতী। সঙ্গে ভাংড়া। নাচলেন এডমিলসনও। ইস্টবেঙ্গল জার্সি পরে মরসুমে প্রথমবার। রবিনের ব্যাক হেডে বল পেয়ে গোল করে সে কী উচ্ছ্বাস ব্রাজিলিয়ানের! মনে হল ট্রফিটাই বুঝি পেয়ে গেলেন।
এডমিলসনের পরের বার লাল-হলুদে জায়গা হবে না নিশ্চিত। সারা বছর যাই করুন, মরসুমের শেষে এসে রবিন সিংহ কিন্তু টি আর পি বাড়িয়ে নিচ্ছেন। গোল করে এবং করিয়ে।
ইস্টবেঙ্গল: সন্দীপ, নির্মল, ওপারা, গুরবিন্দর, সৌমিক, সঞ্জু (রবার্ট), পেন, হরমনজিৎ, বলজিৎ (মেহতাব), টোলগে (এডমিলসন), রবিন। |