নভেম্বর মাস থেকে উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি নেই। অন্য দিকে, গরম পড়ায় সমানে নিচে নামছে জলস্তর। এই পরিস্থিতিতে ডুয়ার্সের জলদাপাড়া ও বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলের সমস্ত প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম জলাশয় শুকিয়ে যাচ্ছে। বুনো জন্তুর জঙ্গল থেকে বার হওয়ার পিছনে এটি অন্যতম কারণ হতে পারে বলে সন্দেহ করছেন বনকর্তারা। শুক্রবারও জঙ্গল থেকে বার হয়ে একটি বাইসন তাণ্ডব চালায় আলিপুরদুয়ার শহর সংলগ্ন ঘাঘরা ও চাঁপাতলি এলাকায়। বাইসনের গুঁতোয় জখম হন কানাই দাস নামে এক যুবক। তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের পশ্চিম বিভাগের এডিএফও শেখর মজুমদার জানান, ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করে বাইসনটিকে জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত ১৬ মার্চ বাইসনের হানায় প্রাণ হারিয়েছেন বনচুকামারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বৃদ্ধা পুনাই ওরাঁও। কিছুদিন আগে জলের খোঁজে একটি সম্বর চিলাপাতার জঙ্গল থেকে বার হয়ে দক্ষিণ পাটকাপাড়া এলাকার ভগতপাড়া গ্রামে ঢুকে পড়ে। গ্রামবাসীরা সম্বরটি ধরে বন দফতরের হাতে তুলে দেন। পরে জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার পথে সেটির মৃত্যু হয়। ঘুমপাড়ানি গুলি করে জঙ্গল ফেরাতে গিয়ে দুটি বাইসনের মৃতুর ঘটনাও ঘটেছে বক্সায়। |
আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের চেয়ারম্যান অমল দত্তের অভিযোগ, “জঙ্গলের রক্ষণাবেক্ষন নিয়ে বন দফতরের কোনও মাথাব্যাথা নেই। গত ডিসেম্বর মাস থেকে বৃষ্টি হয়নি। ফলে জঙ্গলে খাদ্য শৃঙ্খলার অভাবের পাশাপাশি জলকষ্ট দেখা দিয়েছে। বন মন্ত্রী বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এভাবে চলতে থাকলে বন্যপাণির মৃত্যুর ঘটনা বাড়বে।” জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরও মার্চে বৃষ্টির সমস্যা ছিল। গত বছর ডুয়ার্সে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে বৃষ্টিপাত হয় ১৯.৬ মিলিমিটার। এ বার বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১৭.২ মিলিমিটার। অন্যদিকে, গত বছর এই সময়ে যেখানে ডুয়ার্সের জঙ্গল থেকে বুনো জন্তু বার হওয়ার দুটি ঘটনা ঘটেছিল। সেখানে এ বার এমন ঘটনার ঘটেছে ছয়টি। গত বছরের মতো এ বারও জলের সঙ্কট বাড়ছে জঙ্গলে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বক্সার ২৮ মাইল ও ২৯ মাইল বন বস্তি এলাকায় জলের সন্ধানে সন্ধ্যে নামলেই লোকালয়ে চলে আসছে চিতল হরিণের পাল। ওই এলাকার কৃত্রিম জলাশয়গুলিতে বাইরে থেকে ট্যাঙ্ক করে জল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের পশ্চিম বিভাগের এডিএফও বলেন, “ফেব্রয়ারি ও মার্চ মাস নাগাদ বাইসনদের প্রজননের সময়। এই সময় বাইসনরা জঙ্গলের বাইরে মাঝে মাধ্যে বার হয়ে পড়ে। এবছর এখনও বৃষ্টি শুরু না হওয়ায় জলের খোঁজে বন্যপ্রাণিরা জঙ্গল থেকে বার হয়ে পড়ছে বলে মনে হচ্ছে। বাইসনরা জঙ্গলের উপরের দিকে থাকে। সেখানে ভূগর্ভে জলস্তর নেমে যাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে।” তিনি জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজাভাতখাওয়া, জয়ন্তী ও পূর্ব রাজাভাতখাওয়া এলাকায় ৬-৭টি কৃত্রিম জলাশয় বানানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গভীর নলকূপ বসিয়ে পাম্পের সাহায্যে জল দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। |