কাজ শুরু হওয়ার পরে চার বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও শেষ হল না কাটোয়ার ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে’র কাজ। অথচ, ইতিমধ্যেই খাতায় কলমে কাজ ‘শেষ’ করে দিয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। এই বিষয়ে বিধানসভায় জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। অন্য দিকে, ওই প্ল্যান্টের জন্য এলাকা দূষিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কাটোয়ার পুরপ্রধান শুভ্রা রায়। জনস্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা অবশ্য রবীন্দ্রনাথবাবুর অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে জানিয়েছেন, ওই প্রকল্পের কাজ এখনও শেষ হয়নি। আগামী জুন-জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ হলে ওই প্ল্যান্ট পুরসভাকে হস্তান্তরিত করা হবে।
পুরসভা এলাকায় জল সরবরাহ করার জন্য চার বছর আগে ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্রকল্পে’ (জিএপি) শহরের নর্দমার জল পরিশোধন করে ভাগীরথীতে ফেলার পরিকল্পনা করে কাটোয়া পুরসভা। প্রকল্পটি রূপায়ণ করার জন্য জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ভাগীরথী-অজয় নদ সংলগ্ন ৮ একর জায়গা দফতরের হাতে তুলে দেয় পুরসভা। ২০০৮ সালে শুরু হয় ১ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকার ওই প্রকল্পের কাজ। প্রথম পর্যায়ে কাটোয়া শহরের ১, ২, ৩, ৪, ১৫ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডকে ওই পরিকল্পনার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। পরিকল্পনা করা হয়, ওই ওয়ার্ডগুলির নোংরা জল দু’টি বড় নর্দমা ও একটি ভূগর্ভস্থ নালার মধ্য দিয়ে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে গিয়ে পড়বে। সেখান থেকে শোধিত জল ভাগীরথীতে ফেলা হবে।
কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভার মূল ভবনের পিছনে দু’টি নদর্মা ও গোয়ালাপাড়া ঘাটের নর্দমার জল ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর আগে ওই জল সরাসরি ভাগীরথীতে পড়ত। |
এখন তিনটি পর্বে শোধন করার পরে ভাগীরথীতে ফেলা হচ্ছে ওই জল। কারিগরি দফতরের কাটোয়ার সহকারি বাস্তুকার অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শোধনের পরে নর্দমার জলের দূষণ মাত্রা অনেকটা কমে যাওয়ার পরে ওই জল ভাগীরথীতে ফেলা হচ্ছে।”
কিন্তু জল শোধন করার সময়ে চারপাশের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে বলে অভিযোগ কাটোয়া পুর কর্তৃপক্ষের। এমনকী নিম্নমানের কাজ হচ্ছে বলেও চলতি বছরে পুরসভার তরফে বেশ কয়েক বার অভিযোগ জানানো হয়েছে। পুরপ্রধান শুভ্রা রায় অভিজিৎবাবুকে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, নর্দমার জল শোধন করতে গিয়ে এলাকা দূষিত হচ্ছে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা অসুবিধায় পড়ছেন। দূষণ আটকাতে গিয়ে অন্য এলাকা দূষিত করে ফেলছে দফতর।” জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের বর্ধমানের নির্বাহী বাস্তুকার সুদীপকুমার সেন অবশ্য বলেন, “এই ধরনের প্রকল্প সাধারণত শহরের বাইরে হয়। নোংরা জল শোধনের সময়ে কিছুটা দুর্গন্ধ বেরোয়। আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে বিষয়টি দেখছি।”
অন্য দিকে, এখনও কাজ শেষ না হওয়া সত্ত্বেও ২০১০ সালেই ওই কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছিল জনস্বাস্থ্য দফতর। অথচ দফতর সুত্রেই জানা গিয়েছে, জল শোধনের জন্য এখনও বাকি রয়েছে ৪টি খাল তৈরির কাজ। গত বছর বর্ষার সময়ে প্রকল্পের কাজে ক্ষতি হয়েছে। সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি। বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবুর অভিযোগ, “ওই কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে বলে বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি।” অভিযোগ স্বীকার করেছেন সুদীপ্তবাবু। তিনি বলেন, “প্ল্যান্টের ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। তাই কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। বাকি কাজ খুব দ্রুত শেষ করে ফেলা হবে।” কিন্তু, এক বছরেও ওই ৫ শতাংশ কাজ সম্পূর্ণ করা গেল না কেন? দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, ঠিকাদার গোষ্ঠীর কাছে এখনও বহু টাকা বাকি পড়ে আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ওই টাকা চেয়ে পাঠানো হয়েছে। টাকা পেয়ে গেলেই জুন-জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করে পুরসভার হাতে তুলে দেওয়া হবে। |