|
|
|
|
রুইয়াদের হয়ে আদালতে কল্যাণ, ‘হতাশ’ শ্রমিকেরা |
গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় • ডানলপ |
এক সময়ে শ্রমিকদের দাবি আদায়ে ডানলপ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ‘বিনা পয়সায়’ সুপ্রিম কোর্টে মামলা লড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। বছর তিনেক বাদে সেই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘অন্য ভূমিকায়।’ ডানলপের মালিক রুইয়া গোষ্ঠীর আইনজীবী হিসাবে হাইকোর্টে সওয়াল করেছেন শ্রীরামপুরের এই তৃণমূল সাংসদ। যা দেখে দৃশ্যতই ‘ক্ষুব্ধ’ ও ‘হতাশ’ ডানলপের সাহাগঞ্জ ইউনিটের তৃণমূল পরিচালিত শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যেরা।
কল্যাণবাবুর অবশ্য বক্তব্য, “একটি সংস্থা অন্য একটি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আমি আইনজীবী হিসাবে এক পক্ষের হয়ে সওয়াল করেছি। এ নিয়ে আবেগের কোনও জায়গা নেই।” কিন্তু শ্রমিকদের দাবি, তাঁরা কল্যাণবাবুকে আগে ‘অন্য রূপে’ দেখেছেন। ২০০৯ সালে ডানলপে এসে এই কল্যাণবাবুই শ্রমিকদের প্রকাশ্যে বলে গিয়েছিলেন, “রুইয়ারা শ্রমিকদের প্রাপ্য টাকা না দিলে প্রয়োজনে আমি আপনাদের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে বিনা খরচে মামলা লড়ব। ওদের কোমরে দড়ি পরিয়ে জেলে পাঠাব।” যদিও এ দিন শ্রমিকদের ‘ক্ষোভের’ কথা জেনে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “ওঁরা কেউ আমার কাছে আসেননি। আর আমার অবস্থা এত খারাপ হয়নি যে, আমি শ্রমিক নেতাদের পিছন পিছন ঘুরে বেড়াব।”
ছাবরিয়াদের কাছ থেকে ডানলপের মালিকানা রুইয়াদের হাতে যাওয়ার পরেও ডানলপের সাহাগঞ্জ ইউনিটের অচলাবস্থা কাটেনি। শ্রমিকেরা বকেয়া টাকার দাবিতে হন্যে হয়ে ঘুরছেন। বেশ কিছু ব্যবসায়িক সংস্থা এবং বাঁশবেড়িয়া পুরসভাও রুইয়াদের থেকে বহু কোটি টাকা পায় বলে অভিযোগ। সম্প্রতি ‘মাদুরা কোটস’ নামে একটি সংস্থা এ ব্যাপারে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। বকেয়া ঋণ না মেটানোর দায়ে ডানলপকে লিকুইডেশনে পাঠায় হাইকোর্ট। ডানলপের সম্পত্তি বিক্রি করে বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন হাইকোর্ট নিযুক্ত লিকুইডেটর।
এই রায়ের বিরুদ্ধেই হাইকোর্টে পাল্টা মামলা করেন ডানলপ কর্তৃপক্ষ। ওই মামলায় রুইয়া-গোষ্ঠীর হয়ে সওয়াল করেন কল্যাণবাবু। লিকুইডেশনের সিদ্ধান্তের উপরে স্থগিতাদেশ চেয়েছিলেন তাঁরা। যদিও বৃহস্পতিবার এক রায়ে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ওই আর্জি খারিজ করে দেয়। তবে মামলাটি চলবে।
শুক্রবার দিনভর লিকুইডেটরের পথ চেয়ে ছিলেন ডানলপের প্রায় আটশো শ্রমিক। যাঁদের অধিকাংশই তৃণমূল প্রভাবিত ‘ডানলপ বাঁচাও কমিটি’র সদস্য। হোসপাইপ বিভাগের কর্মী রামেশ্বর সিংহ এখানে কাজ করছেন প্রায় বত্রিশ বছর ধরে। বেতন ও অন্যান্য বকেয়া বাবদ রামেশ্বরবাবুর প্রাপ্য প্রায় ৪ লক্ষ টাকা। হতাশ গলায় বললেন, “এটা কী করলেন কল্যাণবাবু! ওঁকে তো আমাদের নিজেদের লোক বলেই জানতাম।” সুখদেব হালদার পাবেন প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। তাঁর কথায়, “কারখানা কবে খুলবে তার ঠিক নেই। সংসারে চূড়ান্ত অভাব। ভেবেছিলাম হাইকোর্টের নির্দেশে আমাদের প্রাপ্যটুকু অন্তত এ বার পাব। আমাদের নিজেদের দলের সাংসদ যে কাজ করলেন, তাতে আমরা বিভ্রান্ত!”
আইএনটিটিইউসি-র হুগলি জেলা সভাপতি বিদ্যুৎ রাউত এই কারখানার তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিকদের ‘অবিসংবাদী’ নেতা। তাঁর কথায়, “কল্যাণবাবু পেশাদার আইনজীবী। পেশাগত কারণে যা ভাল বুঝেছেন, করেছেন। এ ছাড়া আমার আর কিছু বলার নেই।” |
|
|
|
|
|