রাজ্যসভা ভোটের দিনই উদ্ধার টাকা-ভর্তি গাড়ি। গাড়ির মালিক জনৈক প্রার্থীর আত্মীয়। ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হলেও গণনা দিনভর স্থগিত ছিল ঝাড়খণ্ডে। রাতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এই ভোট বাতিল করার জন্য ‘অনুরোধ’ জানানো হল রাষ্ট্রপতিকে। রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করলে আবার মনোনয়ন জমা দিয়ে নতুন করে ভোটগ্রহণ করতে হবে ঝাড়খণ্ডে।
রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চা (প্রজাতান্ত্রিক)-এর সভাপতি বাবুলাল মরান্ডি এ দিন বলেন, “বিধায়ক বেচাকেনা চলছে বলে আগেই নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছিলাম। আমার কাছে খবর ছিল, জামশেদপুর থেকে টাকা নিয়ে তিনটি গাড়ি রাঁচিতে ঢুকেছে। আজ ধরা পড়ল তারই একটি।” নির্বাচন কমিশনের কাছে এ দিন নির্বাচন বাতিল করার আবেদন জানান মরান্ডিই। তার ভিত্তিতেই আজ ভোটগণনা স্থগিত করে দেয় নির্বাচন কমিশন। বিজেপি এই পদক্ষেপকেও স্বাগত জানিয়েছে। দলের মতে, কেনাবেচা রুখতেই বিজেপি নিজেদের কৌশল একেবারে শেষ মুহূর্তে খোলসা করেছিল। ফলে নির্বাচন কমিশন যে ব্যবস্থাই নিক, দলের তাতে আপত্তি নেই। জেএমএম এবং কংগ্রেসও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। স্বাগত জানিয়েছেন বিজেপি সাংসদ যশবন্ত সিনহাও। সিনহাই প্রথম ঝাড়খণ্ডে বিজেপি মনোনীত প্রার্থী অংশুমান মিশ্রের অস্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রসঙ্গ তুলে দলের মধ্যে বিদ্রোহে নেমেছিলেন।
আজ ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে রাঁচির রামুপুর থেকে একটি গাড়ি আটক করে আয়কর দফতর। ওই গাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ২ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে, গাড়ির মালিকের নাম সুরেশ অগ্রবাল। তিনি রাজ্যসভা নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী আর কে অগ্রবালের ভাই বলে একটি সূত্রের খবর। অভিযোগ, টাকার সঙ্গে ওই গাড়িতে বিধায়কদের নামের একটি তালিকাও মিলেছে। এই ঘটনার সবিস্তার তদন্ত রিপোর্ট কমিশন চেয়ে পাঠিয়েছে। রিপোর্ট হাতে না-পাওয়া পর্যন্ত গণনা শুরু করা যাবে না বলেও নির্দেশ দেয় কমিশন।
রাজ্যসভার ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনের প্রিসাইডিং অফিসার তথা বিধানসভার সচিব কৌশলকিশোর প্রসাদ জানিয়েছেন, ৮০ জন বিধায়কের মধ্যে এ দিন ভোট দেন ৭৯ জন। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ঠিক তিন ঘণ্টা আগে ঝাড়খণ্ড সরকারের জোট শরিক জেএমএম প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় বিজেপি। এর পিছনে জোট সরকার বাঁচানোর তাগিদই প্রকাশ পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। জেএমএম প্রার্থী দেওয়া সত্ত্বেও এর আগে বিজেপির একটি গোষ্ঠী অংশুমান মিশ্র নামে এক ব্যবসায়ীকে নির্দল হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। ওই ব্যবসায়ী মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেও জেএমএম প্রার্থীকে ভোট-না দেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় ছিল বিজেপি। তখন নিজের ছেলে তথা রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে দিল্লিতে বিজেপির কাছে দরবার করতে পাঠিয়েছিলেন জেএমএম-প্রধান শিবু সোরেন। আজ শেষ মুহূর্তে মত পাল্টান বিজেপি নেতৃত্ব। ঝাড়খণ্ডে শরিক জেএমএম প্রার্থীকেই সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেন নিতিন গডকড়ী, অরুণ জেটলিরা। আজ দুপুরে যখন বিজেপি বিধায়করা জেএমএম প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিতে শুরু করেছেন, সেই সময়ও সংসদের কক্ষে বসে সুষমা জানান, “এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনও তথ্য নেই। ভোটদানে বিরত থাকার অবস্থানে কোনও বদল হয়নি।” কিন্তু পরে বিজেপির অন্য শীর্ষ নেতারা দাবি করেন, দলের এই কৌশলের ব্যাপারে সকলেই অবগত ছিলেন। |