সঙ্গীতশিল্পীদের কপিরাইট সংস্থার সদস্য করতে এসে তাঁদেরই তোপের মুখে পড়লেন সংস্থার কর্তারা।
বুধবার দক্ষিণ কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে গানের কপিরাইট সংস্থা আইপিআরএস (ইন্ডিয়ান পারফর্মিং রাইট সোসাইটি লিমিটেড)-এর উদ্যোগে সঙ্গীতশিল্পী এবং বিভিন্ন সিডি সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সচেতনতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল শিল্পীদের সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণ করানো। আইপিআরএস-এর চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার রাকেশ নিগম জানান, শিল্পীরা সদস্যপদ গ্রহণ করলে তাঁদের গান আইপিআরএস-এর কাছে নথিভুক্ত থাকবে। ফলে ওই সব গান থেকে শিল্পীরা কপিরাইটের মূল্য পাবেন।
কিন্তু নিগমের বক্তব্যকে প্রকাশ্যেই ‘চ্যালেঞ্জ’ করে বাংলা ব্যান্ড ‘ফসিল্স’। ব্যান্ডের তরফে রূপসা দাশগুপ্ত বলেন, “চার বছর ধরে রূপম ইসলাম আইপিআরএস এর সদস্য। সব গান আইপিআরএস-এ নথিভুক্তও করা আছে। অথচ একটি মাত্র প্রকাশনী সংস্থা ছাড়া আর কোনও সংস্থা থেকে গানের কপিরাইট মূল্য আমরা পাই না। কোথাও লাইভ শো করলেও নিয়ম অনুযায়ী কপিরাইট মূল্য শিল্পীর পাওয়ার কথা। কিন্তু তা-ও দূর অস্ৎ। এ নিয়ে আইপিআরএস কে একাধিক বার জানিয়েও কোনও সুফল মেলেনি।”
অনেকটা একই সুরে বাংলা ব্যান্ড ‘শহর’-এর অনিন্দ্য বসু বলেন, “শিল্পীকেই কপিরাইটের মূল্য আদায়ের দায়িত্বও নিতে হলে তো মুশকিল! আইপিআরএস-এর সদস্য হয়ে তবে আমার লাভ কী? বিভিন্ন এফএম চ্যানেলে আমাদের গান বাজলেও তার একটা টাকাও আমরা পাই না। অনুষ্ঠান করেই অর্থ উপার্জন করতে হয়।” দু’জনের বক্তব্যকেই সমর্থন করেন মনোময় ভট্টাচার্য, সৈকত মিত্র, পিলু ভট্টাচার্যের মতো শিল্পীরাও।
কেন্দ্রীয় সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের স্বীকৃত সংস্থা আইপিআরএস-এর কাজ গান এবং গানের কথার স্বত্ব-মূল্য (কপিরাইট) আদায় করে মন্ত্রককে দেওয়া। সেই টাকা থেকেই শিল্পীদের রয়্যালটি পাওয়ার কথা।
বুধবারের অনুষ্ঠানের শুরুতেই আইপিআরএস-এর তরফে জানানো হয়, বর্তমানে গান বাজানোর মাধ্যম যত বেড়েছে, প্রায় ততটাই কমেছে গান থেকে কপিরাইট আদায়ের পরিমাণ। নিগম জানান, এক দিকে সহজেই গান ডাউনলোড করে বাজানো হচ্ছে, সিডি কেনা হচ্ছে না। তার উপরে জাল সিডিতে বাজার ছেয়ে যাচ্ছে। ফলে বিক্রিও মার খাচ্ছে। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গান বাজানো হচ্ছে। কপিরাইট মূল্য দিচ্ছে না বিভিন্ন এফএম চ্যানেল কিংবা টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও। এর ফলে অনুষ্ঠানেই প্রশ্ন ওঠে আইপিআরএস-এর কাজ করার ক্ষমতা নিয়ে। কেন ওই সংস্থা প্রশাসন কিংবা সরকারের সাহায্য চাইছে না, প্রশ্ন ওঠে তা নিয়েও। জবাবে সংস্থার তরফে জানানো হয়, রাজ্য সরকারের কাছে বিষয়টিতে নজর দেওয়ার জন্য বহু বার অনুরোধ করেও লাভ হয়নি। তবে শিল্পীরা একজোটে এগিয়ে এলে এ সবের বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন করা যাবে।
আইপিআরএস-এর মঞ্চেই বসেছিলেন সবিতা চৌধুরী, জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, শ্রীকান্ত আচার্য এবং সুরকার মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা অবশ্য মনে করেন শিল্পীদের স্বার্থেই এ বিষয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন। |