|
|
|
|
সিপিএম প্রধানকে শো-কজ বিডিও-র |
পুকুর কাটা নিয়ে দুর্নীতির নালিশ তৃণমূল বিধায়কের |
অর্ঘ্য ঘোষ • লাভপুর |
বছরে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে পঞ্চায়েত প্রধানকে শো-কজ করলেন লাভপুরের বিডিও। সম্প্রতি লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে জেলাশাসকের নির্দেশে সিপিএম পরিচালিত দাঁড়কা পঞ্চায়েতের প্রধানকে শো-কজের চিঠি দেন বিডিও। প্রধান অবশ্য বিষয়টি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেছেন।
পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রের খবর, চলতি আর্থিক বছরে দাঁড়কা পঞ্চায়েতের ৮ নম্বর সংসদের বুনিয়াডাঙা গ্রামে জল্লিপুকুর ও ফকিরগোড়ে নামে দু’টি পুকুর সংস্কারের জন্য ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে প্রায় ৯১ হাজার টাকা করে বরাদ্দ হয়। একই সময়ে আতাইনগরে কৃষিজমি থেকে বালি তোলার জন্য ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্পে প্রায় ৫ লক্ষ ৩১ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। ওই টাকার সিংহভাগই মাস্টাররোলের মাধ্যমে মজুরদের নামে বিলিও হয়। কিন্তু বিধায়ক বীরভূমের জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে দাবি করেন, ওই প্রকল্পে আদৌ কোনও কাজ হয়নি। যোগসাজশ করে বরাদ্দ টাকা ‘আত্মসাৎ’ করা হয়েছে। গ্রামবাসীদের একাংশও জানিয়েছেন, ওই দুই নামে কোনও পুকুরই কাটা হয়নি।
অভিযোগ পেয়েই জেলাশাসক লাভপুরের বিডিও-কে সংশ্লিষ্ট প্রধানকে শো-কজ করার নির্দেশ দেন। গত ২৬ মার্চ প্রধানের কাছে শো-কজের চিঠি পাঠান বিডিও। প্রধান ২৭ মার্চ শো-কজের জবাবি চিঠিতে অভিযোগের আংশিক সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন বলেও ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে। যদিও দাঁড়কা পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান সেরি বিবি-র দাবি, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তৃণমূল আমাকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে চক্রান্ত করেছে। আসলে গত বছর ১৬ নভেম্বর ১০০ দিন কাজের প্রকল্পের জেলার নোডাল অফিসার লিখিত ভাবে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিটি সংসদে ৪টি করে কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন। সেই মতো প্রতিটি সংসদের সদস্যদের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু বুনিয়াডাঙা সংসদের পঞ্চায়েত সদস্য আনারুল ইসলাম (বিধায়ক মনিরুল ইসলামের দাদা) একটি খুনের মামলায় জড়িয়ে পড়ার পর থেকেই দীর্ঘদিন গ্রামছাড়া।”
প্রধানের আরও দাবি, আনারুলের তাঁকে ফোন করে ওই সংসদের প্রকল্পগুলির দায়িত্ব দিতে অনুরোধ করেন ফরওয়ার্ড ব্লকের টিকিটে জিতে পরে তৃণমূলে যোগ দেওয়া লাভপুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সুজিত বাগদি এবং জব-ওয়ার্কার মইনুল শেখকে। এই দু’জন তাঁর অজান্তে নির্ধারিত পুকুর দু’টির পরিবর্তে ওই গ্রামেরই বাঁধাঘাট ও লম্বাগোড়ে নামে অন্য দু’টি পুকুর কাটিয়েছেন বলে অভিযোগ সেরি বিবির। তিনি বলেন, “শুধু তাই নয়, ওই দু’টি পুকুর কাটার সময় পঞ্চায়েত থেকে দেওয়া জল্লিপুকুর ও ফকিরপাড়-এর বোর্ড লাগিয়ে অন্য দু’টি পুকুর কাটানোর কাজ করানো হয়েছে। বালি তোলার কাজও ওই সুজিতবাবু এবং মইনুলই দেখভাল করছেন। ওঁদেরই সই করা মাস্টাররোল অনুযায়ী শ্রমিকেরা মজুরি পেয়েছেন। এমনকী জব-ওয়ার্কারের প্রাপ্যও চেকের মাধ্যমে নিয়েছেন মইনুল।”
আনারুল অবশ্য ফোনে বলেন, “প্রধান পুরোপুরি মিথ্যা বলছেন। প্রকল্পের কাজ কাকে দিয়ে করানো হবে, সে ব্যাপারে প্রধানের সঙ্গে আমার কোনও কথাই হয়নি।” দাঁড়কা পঞ্চায়েতর অন্তর্গত নবগ্রামের আলাউদ্দিন শেখ, মাঠপাড়ার আব্দুল সালাম খাঁ বলেন, “আমরা ওই প্রকল্পে কাজ করিনি। মজুরিও পাইনি। তা সত্ত্বেও আমাদের নামে মাস্টাররোলে সই জাল করে বা টিপ ছাপ দিয়ে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।”
মইনুল আর সুজিতবাবুরও দাবি, মাস্টাররোলে তাঁদের সই জাল করা হয়েছে। চেকের মাধ্যমে প্রাপ্য নেওয়ার কথাও মইনুল অস্বীকার করেছেন। বিধায়ক মনিরুল ইসলাম বলেন, “মজুরদের পাসবই, জবকার্ড সবই পঞ্চায়েতে মজুত রয়েছে। ভুয়ো টিপ ছাপ কিংবা সই জাল করে মজুরদের অজান্তেই টাকা তুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে।” যদিও এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিপিএমের লাভপুর জোনাল কমিটির সদস্য রমেশ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ওই পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করার জন্য তৃণমূল ‘পরিকল্পিত’ ভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। লাভপুরের বিডিও অনাবিল দত্ত বলেন, “প্রধান শো-কজের জবাব দিয়েছেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। সমস্ত রিপোর্ট জেলাস্তরে পাঠানো হচ্ছে। পরবর্তী নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা জানান, রিপোর্ট খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ১০০ দিন প্রকল্পের নোডাল অফিসারকে বলা হবে। |
|
|
|
|
|