|
|
|
|
প্রকল্পের টাকা নিয়ে ‘দুর্নীতি’‘স্বজনপোষণ’, তদন্তের দাবি |
অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় • রামপুরহাট |
প্রকৃত উপভোক্তারা সরকারি প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। অথচ ওই সব প্রকল্পের টাকা নিজেদের লোককে পাইয়ে দিচ্ছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও অন্যান্য সদস্যরা। এই অভিযোগের তদন্তের দাবি জানিয়ে সম্প্রতি বিডিও এবং মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন উপভোক্তারা।
সমস্যাটি রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির। অভিযোগ, প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ টাকা নেওয়ার জন্য পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের সুপর্ণা কোনাইয়ের স্বামী, ভাই ও বোনের নাম জেলায় হয়েছে পাঠানো। প্রভাব খাটিয়ে প্রকল্পের সুযোগ নেওয়ার অভিযোগ তুলে দুই প্রকৃত উপভোক্তা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। বিডিও সোমা সাউ বলেন, “দু’টি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” এ দিকে সভাপতি সুপর্ণা কোনাইয়ের প্রতিক্রিয়া, “আমি এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি প্রকল্পের সুযোগ নিইনি। অন্যরা নিয়েছেন।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার দুঃস্থ, প্রতিবন্ধী, আর্থিক দিক থেকে যাঁরা দুর্বল এমন উপভোক্তাদের জন্য এককালীন সরকারি অনুদান দিতে রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির কাছে তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়েছিল। সম্প্রতি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও বিডিও-র অনুমতি নিয়ে জেলায় পাঠানো হয় ওই তালিকা। ইতিমধ্যে সাহাপুর পঞ্চায়েতের কড়কড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা গৌর মণ্ডল এবং মাড়গ্রামের হায়দার মোল্লা বিডিও এবং মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ করেছেন, প্রকৃত উপভোক্তাদের বঞ্চিত করে সভাপতি ও ত্রাণ কর্মাধ্যক্ষ প্রকল্পের টাকা নিয়ে স্বজনপোষণ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রকৃত উপভোক্তাদের টাকা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুপর্ণা কোনাইয়ের দাবি, “আমি একটি প্রকল্পের সুবিধা নিয়েছি। সহ-সভাপতি, বিদ্যুৎ ও ত্রাণ কর্মাধ্যক্ষ, জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষরা তো আরও বেশি সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন। আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে অভিযোগ আনা হচ্ছে।” তাঁর আরও দাবি, “সহ-সভাপতি ফরওয়ার্ড ব্লকের ভাগ্যবতী দাস নিজের মেয়েকে আশা প্রকল্পে নিয়োগ করেছেন। আবার স্বনির্ভর দলের কাজ দেখাশোনার জন্য নিয়োগ করিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁর ছেলেকেও সম্প্রতি ছাগল কেনার জন্য দেড় হাজার টাকা পাইয়ে দিয়েছেন।” সভাপতির আরও অভিযোগ, “বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ পারভিন সুলতানা তাঁর খামারবাড়িতে সরকারি নলকূপ বসিয়েছেন। জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ মিনারা খাতুন একই ব্যক্তিকে দু’টি প্রকল্পের টাকা পাইয়ে দিয়েছেন।” পারভিন সুলতানা ও মিনারা খাতুনের পাল্টা দাবি, “সভাপতি হিসেবে উনি কী কী সুবিধা নিয়েছেন এলাকাবাসী ভালভাবেই জানেন। আমরা যদি কোনও সুযোগ নিয়ে থাকি তা হলে বিডিও তদন্ত করে দেখুক। তিনি কী সুবিধা নিয়েছেন সেটাও তদন্ত করে দেখলে ধরা পড়ে যাবে কে কতটা সুবিধা নিয়েছেন।” অন্য দিকে সহ-সভাপতি ভাগ্যবতী দাস বলেন, “আমার মেয়ে সাহাপুর পঞ্চায়েতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজ দেখাশোনা করে। সেখানে মাসিক ভাতা পাই। আর আশা প্রকল্পে নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পেয়েছে।” এলাকাবাসীর দাবি, সভাপতির বিরুদ্ধে দলীয় কর্মাধ্যক্ষদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ক্ষমতা বলে তিনি স্থায়ী সমিতির সভা ডাকেন। সেখানে নিজের পছন্দের কর্মাধ্যক্ষরা উপস্থিত থেকে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের অনুমোদন করিয়ে নেন। সিপিএমের রামপুরহাট ২ জোনাল কমিটির সম্পাদক কালাম মোল্লা বলেন, “সভাপতি ও দলীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরা নিজেদের রাজনৈতির বোধের অভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করেছেন। লিখিত অভিযোগ পাইনি। মোখিক ভাবে শুনেছি। পুরো ঘটনা জেনে দলীয় স্তরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অমিতাভ সেনগুপ্ত বলেন, “বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।” |
|
|
|
|
|